ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভিড় নেই বাস লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে

বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকে আগেভাগে ফিরে আসছেন কর্মস্থলে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩০ জুন ২০১৭

বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকে আগেভাগে ফিরে আসছেন কর্মস্থলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদের ছুটি শেষ। গ্রাম ছেড়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। কিন্তু বৃহস্পতিবার রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালে গিয়ে কিছুটা ভিন্ন চিত্রও লক্ষ করা গেছে। এখন ঘরে ফেরা মানুষের চাপ চলছেই। যানজট কিংবা চাকরির প্রয়োজনে যারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি যেতে পারেননি তারা এখন যাচ্ছেন। ছুটিও পেয়েছেন অনেক বেশি। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ থাকলেও এখনও বাড়ি যাচ্ছেন অনেকেই। কোন বাস খালি যাচ্ছে না। তেমনি কোন ট্রেনে আসন খুব একটা খালি নেই। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও যাত্রী সন্তোষজনক। আগামী সপ্তাহ থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ আরও বাড়তে বলেও জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষের সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে কমলাপুরে। যারা বাসে এসেছে তাদের অনেকেই বাড়তি ভাড়া নেয়া ও টিকেট বিড়ম্বনার অভিযোগ করেছেন। ছুটি শেষে বুধবার ভোর থেকেই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করে মানুষ। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদ ফেরত মানুষের মিছিল আরও বড় হয়েছে। মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ আর ভিড়-ভাট্টা না থাকায় যানজটহীন নগরীতে স্বস্তিতেই পা রাখছে সবাই। অল্প সময়ে আসতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অনেকে। মহাখালী বাস টার্মিনালে কিশোরগঞ্জ থেকে আসা যাত্রী হাসিফ জানালেন, সড়কে কোন ভোগান্তি নেই। একেবারে নির্ভেজাল আসতে পেরেছি। তবে প্রিয়জনদের ছেড়ে আসার কষ্ট আছে। তিনি জানান, টিকেটপ্রতি ৫০ টাকা বেশি নেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ থেকে শৌখিন পরিবহনে আসা যাত্রী আবদুল্লাহ জানালেন, জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে নেয়া হয়। একই বাসে বাড়ি যান তিনি। ২৪ তারিখ বাড়ি যেতেও তাকে সমপরিমাণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। এ ব্যাপারে কাউন্টার মাস্টার কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে এই পরিবহনের সবকটি বাসে যাত্রীদের উদ্দেশে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি ঝোলানো দেখা গেছে। এতে লেখা রয়েছে, বাড়তি ভাড়া বা দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা হলে উল্লেখিত নম্বরে ফোন করে অভিযোগ দিন। আদনান নামের আরেক যাত্রী বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব সর্বোচ্চ ১২২ কিলোমিটার। অথচ এই দূরত্বে বাস ভাড়া আসে ২০৭ টাকা। যদিও মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ টার্মিনালের দূরত্ব ১১০ কিলোমিটারের বেশি নয়। কারণ ঢাকা-ময়মনসিংহের জিরো কিলোমিটার থেকে দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। তবুও ঢাকা-ময়মনসিংহগামী সবকটি বাস যাত্রীপ্রতি নিয়মিত আদায় করছে ২২০ টাকা। ঈদ উৎসবে যা ৩০০ কোটা অনেক সময় ছাড়িয়ে যায়। প্রকৃত অর্থে এই রুটে ১৮০ টাকার বেশি বাস ভাড়ার কথা নয়। নেত্রকোনা থেকে শাহজালাল পরিবহনে আসা যাত্রী বিকাশ জানালেন, ২৫০ টাকা ভাড়ার স্থলে ৩০০ টাকা নেয়া হয়েছে। যাত্রীদের প্রতিবাদ করার কোন উপায় নেই। কারণ যাত্রী বেশি হওয়ায় কাউন্টার থেকে যা চাওয়া হয়েছে তাই দিতে বাধ্য হয়েছেন সবাই। পাবনা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ভৈরব, নরসিংদী, জামালপুর, শেরপুর, মদন, আটপাড়া, গৌরীপুরসহ মহাখালী টার্মিনালে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে যাত্রীরা বাড়তি বাস ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন। সকালে গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, হানিফ, গোল্ডেন লাইনসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাসে করে রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও রংপুর থেকে ঈদ ফেরত যাত্রীরা ঢাকায় নামছেন। আর রাজধানীতে গণ ও প্রাইভেট উভয় পরিবহনই কম থাকায় ঝক্কিহীনভাবেই গন্তব্যে পৌঁছান তারা। তবে আজ শুক্রবার ও শনিবার এ চিত্র একেবারেই বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা। সে সময় যাত্রী উপস্থিতি যেমন বেশি হবে, তেমনি বেড়ে যাবে যানবাহনের চাপ। আজকের স্বস্তি তাই কাল পরিণত হতে পারে বিড়ম্বনায়। নীলফামারী থেকে শাজাহান তপন ৮ ঘণ্টায় আলম এন্টারপ্রাইজের একটি বাসের করে সকাল সাড়ে ৭টায় নেমেছেন গাবতলীতে। তিনি বলেন, ঈদের আগের যাত্রা থেকে এখন অনেক আরাম ও স্বস্তিতে ঢাকায় ফিরেছি। বাস ও জেলা টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের উপস্থিতি ভালই ছিল। ঠাকুরগাঁও থেকে রুবেল হোসেন ১২ ঘণ্টায় গাবতলী এসেছেন হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাসে। তিনি বলেন, কোন ভোগান্তি হয়নি। সঠিক সময় ঢাকায় এসেছি। গাবতলী বাস টার্মিনালের বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার কর্মকর্তারা বলছেন, এখন চাপ কম থাকায় যাত্রীরা অনেকটা আরাম এবং স্বস্তিতে রাজধানীতে ফিরছেন। তবে শুক্রবার ও শনিবারে চিত্র থাকবে ভিন্ন। যাত্রী চাপ ও পরিবহন বেশি থাকবে বলে রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হতে পারে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, এখন বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় যথেষ্ট। ঈদের পরদিন থেকেই মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন যেমন, তেমনি আসছেনও। বাড়তি বাড়া নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাড়তি ভাড়া নেয়ার কথা নয়। এ ব্যাপারে সকল পরিবহন কোম্পানিকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। কমলাপুর ও বিমানবন্দরে ভিড় ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় ঝুলে যাওয়ার চিত্র দেখা গেলেও আসার সময় এমন তাড়া নেই। নির্বিঘেœ ট্রেনের ভেতরে বসেই মানুষ ফিরছেন রাজধানীতে। আবার এখনও অনেকে রাজধানী ছেড়ে বাড়ির পথে যাচ্ছেন। তবে ভিড় নেই তেমন একটা। সকাল সাড়ে ৭টায় তিস্তা কমলাপুর ছাড়ে। ট্রেনটিতে ঈদের আগে যাত্রী ঠাসা ছিলেন। ছাদেও উঠেছিলেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। কিন্তু ঈদের পরের যাত্রায় ট্রেনটি স্বাভাবিক যাত্রী নিয়ে ছুটছে। তার আগে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে স্বাভাবিক যাত্রী নিয়ে। সকাল সোয়া ৭টায় কিশোরগঞ্জগামী এগারোসিন্দুর প্রভাতী কমলাপুর ছেড়ে যায়। তবে চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ঢাকা ছাড়ার কথা থাকলেও কিন্তু ট্রেনটি সাড়ে ৮টায় ঢাকায় এসে মাত্র পৌঁছেছে। ট্রেনটি দেড় ঘণ্টা দেরিতে চলছে। এই ট্রেনে ঢাকা ছাড়ার অপেক্ষায় কয়েকশ যাত্রী কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে। এদিকে মহানগর প্রভাতী ঠিক সময়ে কমলাপুর এসে পৌঁছেছে। মহুয়া কমিউটার, কণফুলী এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল, রংপুর এক্সপ্রেস, তিতাস কমিউটার, অগ্নিবীণা, একতা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস কমলাপুর ছেড়ে যায় অনেকটা যথাসময়েই। ট্রেনে যাত্রী উপস্থতি ছিল সন্তোষজনক। ঈদের পরে বাড়ি যাওয়ার কারণ হিসেবে দিনাজপুরের যাত্রী কবীর আহমেদ জানালেন, প্রতি ঈদেই ঢাকায় অফিস করতে হয়। ঈদ শেষে বেশি ছুটি নিয়ে বাড়ি যাই। ১০ দিন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে থাকার সুযোগ হবে। দীর্ঘ ছুটি ঈদের আনন্দ পুষিয়ে দেবে বলেও জানান তিনি। সবগুলো ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছাড়ার কথা জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবতী। তিনি বলেন, ঈদ পরবর্তী যাত্রায় কোন ধরনের যাত্রী ভোগান্তি নেই। চাপও আগের চেয়ে কম। আসার পথে যাত্রী বাড়লেও এষনও বাড়ি ফেরার তারা আছে অনেকের মধ্যে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের যাত্রী উপস্থিতি বেড়েছে। তেমনি এখনও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়ও রয়েছে। বিমানবন্দর রেলস্টেশনের বিপুল সংখ্যক মানুষকে ট্রেন থেকে নামতে দেখা গেছে। তেমনি বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে গেছেন এই স্টেশন থেকে। এখনও জমে ওঠেনি রাজধানী ভিআইপি সড়কে দিব্যি রিক্সা চলছে। সিগন্যালগুলো এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ট্রাফিক পুলিশকে বাঁশি অথবা লাঠি নিয়ে যানবাহন থামানোর চেষ্টায় খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এমন চিত্রই বলে দেয় এখনও জমে ওঠেনি রাজধানী শহর। বেশিরভাগ সড়ক এখনও ফাঁকা। ঈদ শেষে অফিস শুরুর দ্বিতীয় দিনেও বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত মতিঝিল অফিস পাড়াও এখন সরগরম হয়ে ওঠেনি। সচিবালয়েও লোকজন কম। তাছাড়া নগরীতে এখনও যানবাহন চলাচল পুরোদমে শুরু হয়নি। বাস চলাচল একেবারেই কম। তেমনি প্রাইভেটকার, অটোরিক্সা ও অন্যান্য পরিবহন কম চলতে দেখা গেছে। এর কারণ হিসেব তারা জানিয়েছেন, চালকরা ছুটিতে থাকা ও যাত্রীর চাপ কম থাকায় সবগুলো বাস এখনও রাস্তায় নামছে না। আগামী সপ্তাহের মধ্যে আবারও পুরনো চেহারায় ফিরে আসতে পারে মহানগরী ঢাকা। তবে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় আছে যথেষ্ট। জাতীয় জাদুঘর, চিড়িয়াখানাসহ অনেক বিনোদনকেন্দ্রে এ বছর টিকেট বিক্রির রেকর্ড হয়েছে।
×