ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই পরিবারে আহাজারি

মালয়েশিয়ায় আটকে মুক্তিপণ দাবি

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৬ মে ২০১৭

মালয়েশিয়ায় আটকে মুক্তিপণ দাবি

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ অভাব-অনটনকে জয় করতে প্রায় তিন মাস আগে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান বাসাইল উপজেলার হযরত আলী ও সখীপুর উপজেলার শাপলু মিয়া। কিন্তু বিধিবাম- সেখানে গিয়ে পড়েন প্রতারক চক্রের খপ্পরে। শরীরে ফুটন্ত পানির ছ্যাঁক, গরম ব্লেড দিয়ে শরীর কেটে ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে তাদের পরিবারকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেছেন তারা। টাকা না দিলে লাশ ফিরবে বাংলাদেশে এ রকম হুমকি দেয়া হচ্ছে ফোনে। টাকা চেয়ে ইমু ম্যাসেজ দেয়া হচ্ছেÑ ‘বুঝলাম তোমরা টাকা দিবা, তা কবে? মারা যাওয়ার পড়ে?‘ দুইজনকে দুই জায়গায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করছে বলে পরিবারটির অভিযোগ। র‌্যাব অভিযোগ পাওয়ার পর আলম নামের এক আদম ব্যবসায়ীকে গত ৭ মে গ্রেফতার করেছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তাদের মালয়েশিয়া নেয়ার কথা। কিন্তু মালয়েশিয়াতে না অন্য কোন দেশে নেয়া হয়েছে বিষয়টি জানে না তাদের পরিবার। এদিকে অজ্ঞাত প্রতারক চক্র ফোনে ইন্দোনেশিয়ায় আটকের বিষয়টি জানায় পরিবারকে। পরিবারের অভিযোগ- জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দালালদের যোগসাজশ রয়েছে। তা না হলে বাকি টাকা পাওয়ার পর তাদের ছাড়া হবে এমন কথা কেন বলল। জানা যায়, সখীপুর উপজেলার বেরবাড়ি গ্রামের মিজান মিয়া ও বাসাইল উপজেলার সুন্না গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে আলম মিয়া মালয়েশিয়া নেয়ার জন্য হযরত আলীর কাছে থেকে নগদ সাড়ে তিন লাখ ও শাপলুর কাছে থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার শর্তে নগদ দেড় লাখ টাকা নেয়। হযরত আলী বাসাইল উপজেলার সুন্না গ্রামের আবদুল কাদের মিয়ার ছেলে। শাপলু সখীপুর উপজেলার কাঙ্গালীসেও গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের দুইজনকে মালয়েশিয়া নেয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের করে নেয়া হয়। বিমানবন্দরে গিয়ে হযরত আলী পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে বলে কিছুক্ষণের মধ্যে বিমান ছাড়বে, তোমরা ভাল থেক। প্রায় ১৫ দিন পর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে বলে হযরত আলী জেলে রয়েছে। একই কায়দায় শাপলুর পরিবারের কাছে জেলহাজতে থাকার কথা বলে টাকা দাবি করা হয়। এরপর বিষয়টি অবহিত করলে দালালরা হযরতকে বের করতে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। দালালরা বাকি টাকা দাবি করে শাপলুর কাছে। শাপলুর পরিবার ঋণ করে বাকি টাকা পরিশোধ করে। টাকা পাওয়ার পরেও দালাল চক্র মিজান ও আলম শাপলুকে ছেড়ে দেয়নি। দালালরা শাপলু ও হযরতকে ছেড়ে দেয়ার কয়েকটি তারিখও দেয়। কিন্তু তারপরও ছেড়ে দিচ্ছে না তাদের। দালালরা শাপলুকে ছেড়ে দেয়ার বিভিন্ন তারিখ দেয়ার কারণে তার পরিবার এখনও পুলিশের দ্বারস্থ হয়নি। কিন্তু হযরতের পরিবার বাসাইল থানায় সাধারণ ডায়েরি ও টাঙ্গাইল র‌্যাব অফিসে অভিযোগ দায়ের করেছে। হযরত আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, আমার স্বামীর ওপর অমানুষিক নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। পরে এ্যাকাউন্ট নম্বর দেয় মাসুদ রানা (+৬২৭৬৫৯১০৯৪)। তারা বলে, মাসুদ রানার বাড়ি যশোরে। তার স্ত্রীর মোবাইল নম্বর-০১৮৮৪৫২৩৩৭৯। টাকা পাঠিয়ে এই নম্বরে যোগাযোগ করবেন। এখনও আমরা টাকা দিতে পারিনি। আমরা গরিব মানুষ এতো টাকা পাব কোথায়। আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আমার স্বামী সেও এখন একটি চক্রের কাছে জিম্মি। কি করে তাকে উদ্ধার করবো। শাপলুর স্ত্রী নূরজাহান বেগম বলেন, আদম ব্যবসায়ী মিজান আমার স্বামীকে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা বলে সাড়ে তিন লাখ টাকার শর্তে নগদ দেড় লাখ ও মালয়েশিয়া যাওয়ার পরে বাকি টাকা পরিশোধ করব এই শর্তে মালয়েশিয়া পাঠায়। কিন্তু সেখানে নিয়ে জিম্মি করে নানা রকম অত্যাচার শুরু করে। এই খবর জানার পর আদম ব্যবসায়ীদের কাছে এই বিষয়টি বললে তারা বলে বাকি টাকা দাও আমরা শাপলুকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবো। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে বাকি ২ লাখ টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা দেই তারপরেও তারা আমার স্বামীকে ছেড়ে দিচ্ছে না।
×