ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ প্রাধান্য সক্ষমতা অর্জনে

সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১ মে ২০১৭

সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার

তৌহিদুর রহমান ॥ দেশের সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকার। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর্থিক সক্ষমতা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ জনশক্তি, সমুদ্র নিরাপত্তা, সমুদ্রে বিনিয়োগ ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ এখন সরকারকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সে কারণে সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকটাই ধীরগতিতে চলছে সরকার। প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলায় বিজয়ের পরে ওই অঞ্চলের সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগর এলাকার বিশাল সমুদ্র অঞ্চল ঘিরে একটি কর্মপরিকল্পনাও তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার। এ কর্মপরিকল্পনার আওতায় সমুদ্র সম্পদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার রূপরেখাও তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম জনকণ্ঠকে বলেন, সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা প্রথম যেটি প্রাধান্য দিচ্ছি, সেটা হলো সক্ষমতা অর্জন। সক্ষমতা অর্জন না করতে পারলে সমুদ্র সম্পদ আহরণ করা সম্ভব নয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সমুদ্র সীমার মীমাংসা হয়েছে মাত্র তিন বছর। তবে এ তিন বছর যথেষ্ট সময় নয়। আমাদের আরও সময় লাগবে। কেননা আমরা কখনোই সাগরমুখী ছিলাম না। এখন সাগরমুখী হচ্ছি। তাই এ বিষয়ে এখন আমরা নজর দিচ্ছি। সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৬৮ হাজার কাঠের জাহাজ উপকূল থেকে মাত্র ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাছ ধরতে যেতে পারে। আর শুধু ২৫০ থেকে ৩০০টি জাহাজ প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে যেতে মাছ ধরতে পারে। তবে বাংলাদেশ উপকূল থেকে সমুদ্রসীমানার দৈর্ঘ্য ৬৬৪ কিলোমিটার। বিশাল এ এলাকায় মাছ ধরার মতো কোন জাহাজই নেই। বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে গিয়ে টোনা মাছ ধরতে চাইলে যে আধুনিক প্রযুক্তির জাহাজ প্রয়োজন, সেটা বাংলাদেশের নেই। সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে চায় সরকার। সমুদ্র সম্পদের মধ্যে মাছ আহরণ ছাড়াও নৌ ও বন্দর ব্যবহার, খনিজ সম্পদ, পর্যটনসহ বিভিন্ন সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদ কাজে লাগাতে চায় সরকার। কেননা সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে মানুষের শেষ ভরসাই হয়ে উঠবে সমুদ্র সম্পদ। এটি অনেক বড় বিষয়। এ সম্পদ কাজে লাগাতে পারলে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের পাশাপাশি সমুদ্র নিরাপত্তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সে কারণে কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সমুদ্র নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যেই দুইটি সাবমেরিন ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া সমুদ্র জরিপ ও গবেষণার জন্য মালয়েশিয়া থেকে আরভি মীন সন্ধানী নামে একটি জাহাজও ক্রয় করেছে সরকার। এ জাহাজ সমুদ্র সম্পদ নিয়ে গবেষণা ও জরিপ চালাবে। এদিকে সমুদ্র সম্পদ আহরণে বেসরকারী খাতকেও সম্পৃক্ত করতে চাইছে সরকার। দেশী-বিদেশী কোম্পানিকেও সমুদ্র খাতে বিনিয়োগে আহ্বান জানিয়েছে। তবে সরকারের আহ্বানে সমুদ্র খাতে এখনও বড় ধরনের কোন বেসরকারী বিনিয়োগ আসেনি। বঙ্গোপসাগর দেশের সম্পদের বিশাল উৎস। এ সমুদ্র সীমানার মধ্যে শুধু বিশাল মৎস্য ভা-ার নয়, রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ভা-ারও। বিশেষ গঠন-প্রকৃতির কারণেই তেল-গ্যাসসহ নানা খনিজ সম্পদ সঞ্চিত রয়েছে এর তলদেশে। এছাড়া সারাবিশ্বে এখন সমুদ্র সম্পদ বিশেষ আকর্ষণের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ তাদের সমুদ্রসীমায় সম্পদের জরিপ, গবেষণা, অনুসন্ধান ও সম্পদ আহরণে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। সে অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশও তার সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশই তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শেষ দিগন্ত হিসেবে টেকসই উন্নয়ন কর্মসূূচীর মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের মতো একটি উপকূলীয় দেশের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর সহযোগিতা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ, মৎস্য রফতানি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ সর্বোপরি জীববিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলা বিজয়ের পরে বঙ্গোপসাগর এলাকার দুই শ’ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপানে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলের আয়তন এখন এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নির্ধারণের পরে বাংলাদেশের আওতায় পড়া সমুদ্র অঞ্চলের সম্পদের ক্ষেত্রের অনুসন্ধান ও অর্থনৈতিক মূল্যও নির্ধারণ করা এখনও সম্ভব হয়নি। এছাড়া খুব সহজভাবেই এ সম্পদের সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে সেটাও নিশ্চিত করতে চায় সরকার। বাংলাদেশের ভূ-ভাগের আয়তন এখন এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার। আর বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকার আয়তন এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। তবে এ সমুদ্র অঞ্চলের সম্ভাবনা অতীতের কোন সরকারই কাজে লাগাতে পারেনি। জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এখন সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার এখন সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
×