ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘দুনিয়ার মজদুর ভাইসব, আয় এক মিছিলে দাঁড়া’

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১ মে ২০১৭

‘দুনিয়ার মজদুর ভাইসব, আয় এক মিছিলে  দাঁড়া’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকার হিসাবে আজ সোমবার পহেলা মে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তভেজা অনন্য দিন মহান মে দিবস। এ উপলক্ষে রবিবার মে দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ। বৈশাখী বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উন্মুক্ত আকাশের নিচে উচ্চারিত হলো শ্রমজীবী মানুষের জয়গান। গানের সুরে, বক্তার কথায় কিংবা কবিতার দোলায়িত ছন্দে ধ্বনিত হলো মেহনতি মানুষের অধিকারের কথা। সবকিছুতেই ছিল শ্রমিকের প্রাপ্য মৌলিক অধিকার আদায়ের প্রতিধ্বনি। শিল্পের আলো ও বক্তার কথায় ব্যক্ত হয় শোষণমুক্ত মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয়। ‘দুনিয়ার মজদুর এক হক’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি উদ্যাপন করে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ। আয়োজনের সূচনা হয় গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদভুক্ত শিল্পীদের গানের সুরে। শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে এক সুরে গেয়ে ওঠেনÑ ‘দুনিয়ার মজদুর ভাইসব, আয় এক মিছিলে দাঁড়া/নয়া দুনিয়ার ডাক এসেছে, একসাথে দে সাড়া...।’ মে দিবসের এ আয়োজনটি ছিল দুই পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। দ্বিতীয় পর্বে ছিল গান ও কবিতার সমন্বিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর। আলোচনায় মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তারা বলেন, শ্রমজীবীসহ দেশের সব মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সব নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর শুধু শ্রমিকের অধিকার রক্ষার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয় মে দিবসের অঙ্গীকার, দিবসটি এখন নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের অধিকার এবং ন্যায্যতা প্রাপ্তির প্রতীকে পরিণত হয়েছে। তাই সব মানুষের জন্য মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্র গড়ার মধ্য দিয়ে দিবসটির প্রকৃত তাৎপর্যের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে প্রথম মে দিবসের স্বীকৃতি দেয়া হয়। তাই শ্রমজীবীসহ সব শ্রেণীর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি একটি অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণের মাধ্যমেই মে দিবসের প্রকৃত সাফল্যের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। গান ও কবিতায় সাজানো সাংস্কৃতিক পর্বে বাচিকশিল্পী রেজিনা ওয়ালী লীনা পাঠ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘ওরা কাজ করে’। এছাড়াও একক কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল ও ফয়জুল আলম পাপ্পু। বহ্নিশিখার শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘ফুল লেখবার দিন নয় অদ্য’ শিরোনামের গান। ‘নতুন সূর্য আজ’ শিরোনামের গান শোনান স্ব-ভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্রের শিল্পীরা। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘১৮৮৬ সালের পয়লা মে’। কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর পরিবেশন করে ‘আমরা পুবে-পশ্চিমে’। এছাড়াও সম্মেলক কণ্ঠে গান শোনান ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, আনন্দন, পঞ্চভাস্কর, ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সঙ্গীত একাডেমি, সুরতাল সঙ্গীত একাডেমি ও ভিন্নধারার শিল্পীরা। একক কণ্ঠে গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর গেয়ে শোনান ‘নাম তার ছিল জন হেনরি’। পান্থপথে দৃকের নতুন গ্যালারিতে শহিদুল আলমের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ॥ নতুন ঠিকানা পেল শিল্পকর্ম ও চিত্রকর্ম প্রদশর্নীর অন্যতম স্থান ধানম-ির ‘দৃক গ্যালারি’। রাজধানীর ধানম-ির পুরনো ২৬ নম্বরে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি এবার পেল আরেকটি প্রদর্শনালয়। নতুন প্রদর্শনালয়টি ঠাঁই পেল পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের পাশের ইউনিয়ন হাইটস ভবনে। রবিবার বিকেলে হয়ে গেল ‘দৃক পিকচার লাইব্রেরি লিমিটেড’-এর এই নতুন ঠিকানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। সেই সঙ্গে নতুন ঠিকানায় গড়ে তোলা দৃক গ্যালারিতে শুরু হলো আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের ‘দ্য বেস্ট ইয়ার্স অব মাই লাইফ : বাংলাদেশী মাইগ্র্যান্টস ইন মালায়েশিয়া’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনী সম্পর্কে শহিদুল আলম বলেন, এ প্রদর্শনীতে ২৪টি আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। আলোকচিত্রগুলোয় মালায়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশী অভিবাসীদের জীবনযাপনের চিত্র, তাদের কাজের নানান বিষয়, দেশ নিয়ে তাদের অনুভূতি ও আবেগ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রদর্শনীটি আগামী ২ মে থেকে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে। এদিকে, এ প্রদর্শনী এবং দৃক গ্যালারির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে রবিবার সকালে পান্থপথের দৃক গ্যালারিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এবং দৃকের মহাব্যবস্থাপক ও কিউরেটর এএসএম রেজাউর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের নক্সায় নির্মিত ২০১৬ সালে ‘আগা খান এ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’ পুরস্কারে ভূষিত ঢাকায় অবস্থিত বাইতুর রউফ মসজিদের নানান দিকের আলোকচিত্র নিয়ে ওই মসজিদ প্রাঙ্গণেই অনুষ্ঠিত হবে একদিনের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী। আগামী ৮ মে সকাল ১০টায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের ‘এম্ব্রেসিং দ্য আদার’ শিরোনামের এ একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হবে। প্রদর্শনীটি এশার ওয়াক্ত পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ভবিষ্যতে এ প্রদর্শনী বিশ্বের বিভিন্ন গ্যালারিতে প্রদর্শিত হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
×