ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরকীয়ার প্রতিবাদ ॥ স্বামীর নির্যাতনে কেয়া হাসপাতালে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

পরকীয়ার প্রতিবাদ ॥ স্বামীর নির্যাতনে কেয়া হাসপাতালে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৬ এপ্রিল ॥ তাল গাছের চেরা দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। পিঠের আঘাতের চিহ্নগুলো লাল ছোপ ছোপ দাগ হয়ে ফুটে আছে। মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হয়ে যায়। এমনকি একমাত্র সন্তান তিন বছরের আরাফাত হোসেনকে আটকে রেখে দেয়া হয়েছে। চকরিজীবী সৈয়দা উম্মে হানি কেয়ার জীবনে এমন দুর্বিষহ দুর্যোগ নেমে এসেছে। স্বামী পা-ন্ড মোঃ হিমু, তার ভাইয়ের বউ জেসমিন, বাড়ির কাজের মহিলা শিরিনা একত্র হয়ে এমন নির্দয় হামলা চালায় কেয়ার ওপর। রবিবার সকালে এমন বর্বর মারধরের শিকার হয়ে এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন এ তরুণী গৃহবধূ। একদিকে স্বামীর নির্দয় নির্যাতন অপরদিকে নাড়িছেঁড়া একমাত্র ধন পুত্রসন্তানকে কাছে না পেয়ে এখন দুই চোখের অশ্রু ঝরাচ্ছেন নির্যাতিতা কেয়া। কাজের মহিলার সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরকীয়ার সম্পর্কে অন্তরায় হয়ে পড়েন কেয়া। নিজের আর্থিক সচ্ছলতার কথা না ভেবে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মচারী হয়েও মাস শেষ বেতনের সমুদয় টাকা স্বামী নামের ওই মানুষটির কাছে তুলে দিতেন। এমনকি চাকরির পরের নমিনি হিসেবেও তাকে মনোনীত করেছেন। তারপরও মন গলেনি পাষ-ের। কেয়া জানান, যতদিন তার শ^শুর আলতাফ মিয়া বেঁচে ছিলেন এমন সমস্যা তিনি সামলে রাখতেন। এখন শাশুড়িসহ ভাসুর, তার স্ত্রীসহ স্বামীর পরকীয়া সম্পর্কের কাজের ঝি শিরিনা মিলে নানা ছলছুতোয় হামলে পড়ে কেয়ার ওপর। যেন হায়েনার ছোবল। এমনকি চাকরিস্থল থেকে ফিরে খাওয়া নিয়েও খোটা দেয়া হতো। যেন নিষ্ঠুরতার এক কালো ছাপ পুষে রেখেছেন নির্যাতিতা কেয়া। বাবা-মা হারা কিশোরী বয়সেই মিঠাগঞ্জের কেয়ার বিয়ে হয় একই এলাকা বড়-বালিয়াতলী গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে হিমুর সঙ্গে। কিন্তু হিমুর ছিল স্বামী পরিত্যক্ত কাজের মহিলার সঙ্গে পরকীয়ার গভীর সম্পর্ক। এ সম্পর্কের কাছে সুন্দরী কিশোরী বয়সের কেয়া ছিল বরাবর উপেক্ষিত। এক সন্তান হওয়ার পরে তা আরও উচ্ছন্নে যায়। মারধর-গলগ্রহ নিত্যদিনের। নিগ্রহের যেন শেষ নেই। কাজের ঝির সঙ্গে স্বামী হিমুর পরকীয়ার সম্পর্ক ওপেন সিক্রেট। একপর্যায়ে হিমু বলে দেয় এসব মেনে, দেখে সহ্য করে পারলে সংসারে থাক নইলে কেটে পড়। তবে সন্তান দেয়া হবে না। যেন মগের মুল্লুক। সর্বশেষ মারধরে অচেতন হওয়ার পরে জ্ঞান ফিরলে কেয়া মোবাইল করে যমজ ভাই সৈয়দ ইলিয়াসের কাছে। সাইয়েদুজ্জামান তার চাচা সৈয়দ ফারুককে নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে গুরুতর আহত কেয়াকে আনতে গেলে উল্টো তাদের ওপরও হামলা চালায় হিমুসহ তার বাড়ির লোকজন। এমন সব অভিযোগের পরে ইলিয়াস জানান, তারপরও স্থানীয়দের সহায়তায় নিয়ে কেয়াকে উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু তিন বছরের সন্তানকে এখন পর্যন্ত ফিরে পায়নি কেয়া। তার শরীরের ক্ষতের চেয়ে অন্তরের ক্ষত এখন বেশি ভারি। ছল ছল চোখে যাকে পায় তার কাছে সন্তান ফিরে পাওয়ার আকুতি জানায়। আর প্রশ্ন করেন কীভাবে স্বামীরূপী মানুষটির সঙ্গে একসঙ্গে জীবন কাটাবেন। উল্টো হিমু হুমকি দিয়ে পারলে যা পার করো। তবে এ নির্যাতিতা কেয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন নারী ফোরামের নেত্রী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিচ জাহান। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময় বিয়ে হয় কেয়ার। বিয়ের পর ভালই ছিলেন। এখন জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, স্বপ্ন সব যেন বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তিনি এমন নির্মম নির্যাতনের যথাযথ বিচার চেয়েছেন। অভিযুক্ত হিমু জানান, তিনি এসবের কোন কিছুই করেননি। কিছুই জানেন না। কারও সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক নেই। সব মিথ্যা।
×