ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্য রেজা করিম

এভারেস্ট জয়ী এক অদম্য কিশোরীর গল্প

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৩০ মার্চ ২০১৭

এভারেস্ট জয়ী এক অদম্য কিশোরীর গল্প

২০১৪ সালের ২৫ মে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে আরোহণ করেছিল পূর্ণা মালাভাত। তেলেঙ্গানার নিজামাবাদ জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের অতি সাধারণ সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে পূর্ণার বয়স তখন ছিল মাত্র ১৩ বছর ১১ মাস। পূর্ণাই পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ নারী যে সর্বপ্রথম এভারেস্টশৃঙ্গে আরোহণ করে। এখন পূর্ণার বয়স ১৬ চলছে। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠা এভারেস্ট জয়ী নারী পূর্ণার কথা অনেকেই জানেন না। মেয়েরা চাইলে যে কোন অসাধ্য সাধন করতে পারে। পূর্ণা তার অনেক সীমাবদ্ধতার পরেও এভারেস্ট জয় করতে সক্ষম হয়েছে। এভারেস্ট জয়ী কিশোরীর অসাধ্য সাধনের বাস্তব কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে মুক্তি প্রতীক্ষিত বলিউডি সিনেমা ‘পূর্ণা’য়। এ সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। প্রখ্যাত অভিনেতা রাহুল বোস পরিচালিত দ্বিতীয় সিনেমা ‘পূর্ণা’য়। এ সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। প্রখ্যাত অভিনেতা রাহুল বোস পরিচালিত দ্বিতীয় সিনেমা ‘পূর্ণা’কে ঘিরে বিভিন্ন মহলে দারুণ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সবাই রাহুল বোসকে একজন আন্তর্জাতিক মানের সুঅভিনেতা হিসেবে চেনেন। এর বাইরে তিনি একজন চিত্রনাট্যকার, সমাজকর্মী এবং ভাল রাগবি খেলোয়াড়। টালিউডি বাংলা ছবি ‘মিস্টার এন্ড মিসেস আয়ার’, ‘কালপুরুষ’, ‘অনুরণন,‘ ‘অন্তহীন’, ‘ল্যাপটপ’, ‘দ্য জাপানিজ ওয়াইফ’ এ তার দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকদের আলোড়িত করেছে। পাশাপাশি বলিউডেও তার স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ সবার চোখে পড়ে। ‘পেয়ার কে সাইড ইফেক্টস, মান গ্যায়ে মুগল এ আজম, ঝংকার বিটস, চামেলি, কুচ লাভ জ্যায়সা’ প্রভৃতি হিন্দী সিনেমায় রাহুল বোস তার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। মঞ্চ অভিনেতা হিসেবেও তিনি কম যান না। অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্রপরিচালক হিসেবে ২০০১ সালে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘এভরিবডি সেজ আই অ্যাম ফাইন।’ ইংরেজী ভাষায় নির্মিত এ ছবির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রেহান ইঞ্জিনিয়ার এবং কোয়েল পুরি। রাহুল বোস নিজেও একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ছবিটিতে। দেশ-বিদেশে পরিচালক রাহুল বোসের প্রথম পরিচালিত ছবিটি বেশ ভাল প্রশংসা অর্জন করেছিল। দীর্ঘ ১৬ বছর পর তিনি আবার নতুন একটি ছবি নিয়ে দর্শকদের সামনে উপস্থিত হচ্ছেন। শুরুতে এভারেস্ট জয়ী কিশোরী পূর্ণা মালাভাতকে নিয়ে নির্মিতব্য ছবিতে একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান রাহুল বোস। ছবির স্ক্রিপ্টটি তার ভীষণ পছন্দ হয়। তিনি নিজেই ছবিটি পরিচালনা এবং প্রযোজনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কয়েক মাসের মধ্যে ছবিটির জন্য মোটামুটি অঙ্কের অর্থের সংস্থান করেন। ১০৯ জন কিশোরীর মধ্য থেকে পূর্ণা চরিত্রের জন্য অদিতি ইনামদারকে নির্বাচন করা হয়। এভারেস্ট জয়ী কিশোরী পূর্ণার নিজের গ্রাম প্রাকালায় ১১ দিন ধরে ছবিটির শূটিং করা হয়। রাহুল বোস, অদিতি ইনামদার ছাড়া ‘পূর্ণা’ ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন হিবা শাহ ধৃত্বিমান চট্টোপাধ্যায়, হর্ষবর্ধন, মনোজ কুমার, আরিফ জাকারিয়া প্রমুখ। গত বছর পাম স্প্রিংস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘পূর্ণা’ ছবিটি প্রদর্শিত হয়ে প্রশংসা অর্জন করে। সেরা ৩০টি ছবির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয় ওই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর পরিচালক হিসেবে আবার ফিরে এসেছেন রাহুল বোস ‘পূর্ণা’ ছবির মাধ্যমে। এভারেস্ট জয়ী আদিবাসী কিশোরী পূর্ণা মালাভাতের বায়োপিক সিনেমাটি বলিউডের অন্যান্য বায়োপিকের মতো বড় বাজেটে নির্মিত হয়নি। এ ছবিতে বলিউডের জনপ্রিয় নামী-দামী তারকা শিল্পী নেই ‘পূর্ণা’ ছবিটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছে কিশোরী অভিনেত্রী অদিতি ইনামদার। পানিকে এমনিতেই ভীষণ ভয় পেত মেয়েটি। ‘পূর্ণা’ ছবির শূটিং যেখানে হয়েছে তার পাশেই ছিল পানির প্রবাহ। কিন্তু কয়েক দিন প্রশিক্ষণ নেয়ার পর অদিতির পানিভীতি কেটে যায়। সে ঠিকমতো পানির মধ্যে শূটিং করতে সক্ষম হয়। গত বেশ কয়েক বছর ধরে বলিউডে বায়োপিক নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। মিলখা সিং, মেরি কম, নিরজা, এমএস ধোনি, দঙ্গল, সুলতান প্রভৃতি বায়োপিকের ভিড়ে অখ্যাত এক সাধারণ কিশোরী পূর্ণার এভারেস্ট জয়ের গল্প দর্শকদের কতটা আলোড়িত করবে। কারণ পূর্ণার কথা খুব বেশি মানুষ জানেন না এখনও। সুবিধাবঞ্চিত দুর্গম প্রত্যন্ত এক গ্রামের সাধারণ দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হয়ে পূর্ণা জীবনবাজি রেখে অসাধ্য সাধন করেছিল। বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী নারী হিসেবে এভারেস্ট জয়ের ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল মেয়েটি। এ কাজটি করতে গিয়ে তার জীবন বিপন্ন হয়েছে, তার পরেও সে হাল ছেড়ে দেয়নি, সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করে দেখিয়ে দিয়েছিল মেয়েদের অসাধ্য কিছু নেই, চাইলে সেও অনেক কিছু করতে পারে। সাধারণত বায়োপিকগুলোতে বাস্তবতার পাশাপাশি তুমুল নাটকীয়তার অবতারণা করা হয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। পরিচালক রাহুল বোস নিজেও স্বীকার করেন, অন্যান্য বায়োপিকের মতো ‘পূর্ণা’ও বাস্তবতার সঙ্গে নাটকীয়তার সংমিশ্রণে নির্মিত একটি সিনেমা। তবে বাস্তবতার সঙ্গে নাটকীয়তার ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছবিতে শুধু একটি বাড়তি চরিত্র সৃষ্টি করতে হয়েছে কাহিনীর প্রয়োজনে, বাকি আশি ভাগই বাস্তবতানির্ভর। রাহুল বোস সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, এখন যে মেয়েটির বয়স মাত্র ১৬, যখন তার বয়স মাত্র ১৩ ছিল এবং ওই সময়ে সে এভারেস্ট জয় করেছিল তাকে নিয়ে সিনেমা তৈরিটা আমার জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল বৈকি। ‘আমি শেষ পর্যন্ত ছবিটি করতে পারব কিনা সংশয়ে ছিলাম।’ যে মেয়েটিকে নিয়ে ছবিটি নির্মিত সেই পূর্ণা মালাভাত তার বায়োপিক নিয়ে বেশ উৎসাহী। অনেকটা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছে যে, আমি এমনিতে সিনেমা খুব একটা দেখি না, আমাকে নিয়ে সিনেমা তৈরি হবে ভাবিনি। আমি ‘পূর্ণা’ ছবিটি অবশ্যই দেখব। এ ছবিটির ব্যাপারে আমার অনেক কৌতূহল। শাবানা আজমি, বিদ্যা বালান, ভারতীয় ক্রিকেট দলের সবাই ‘পূর্ণা’ ছবিটি দেখে ভীষণভাবে মুগ্ধ হয়েছেন। ছবিটি দেখার পর তাদের চোখ অশ্রুসজল হয়েছে। পূর্ণার এভারেস্ট জয়ের গল্প তাদের স্পর্শ করেছে।
×