ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইপিও’র চাহিদা ৩ গুণ

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১৯ মার্চ ২০১৭

আইপিও’র চাহিদা ৩ গুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজার মন্দা কিংবা চাঙ্গা যেমনই থাকুক না কেন প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শেষ নেই। আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা কেমন যাচ্ছে, আগামীতে কেমন হবে, কোন দামে কেনা উচিত কোন দিকেই ভ্রুক্ষেপ নেই বিনিয়োগকারীদের। ভাল-মন্দ সব কোম্পানির আইপিওতেই ওভার সাবস্ক্রিপশন দেশের শেয়ারবাজারের একটি পরিচিত বাস্তবতা। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে আইপিওতে ওভার সাবস্ক্রিপশনের চাহিদা প্রায় তিন গুণ হয়েছে। ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বিগত পাঁচ বছরের আইপিও পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে আইপিওগুলোয় গড়ে ৩ দশমিক ১০ গুণ ওভার সাবস্ক্রিপশন হয়। ২০১৫-১৬ সালে তা ৮ দশমিক ৭৮ গুণে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ ওভার সাবস্ক্রিপশনের প্রবণতা প্রায় তিন গুণ (২ দশমিক ৮৩ গুণ) হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেকেন্ডারি মার্কেটে উত্থান-পতন নিয়ে অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে শঙ্কা কাজ করে। বিপরীতে প্রায় শূন্য ঝুঁকির বিনিয়োগ আইপিওতে তাদের আগ্রহ অনেক বেশি। সেটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রেই কমবেশি সত্য। গত পাঁচ বছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৩ হাজার ৪০০ পর্যন্ত নেমেছে, আবার ৫ হাজার ৭০০ পয়েন্টের ঘরেও উন্নীত হয়েছে। সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন ১০৪ কোটি টাকা পর্যন্ত যেমন নামতে দেখা গেছে, তেমনি তা ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিপরীতে আইপিওর বাজার সবসময়ই চড়া। হাতেগোনা কয়েকটি মিউচুয়াল ফান্ডে আইপিওর টার্গেট পূরণ হয়নি। এর বাইরে সব আইপিওতেই ওভার সাবস্ক্রিপশন ছিল। এক পরিসংখ্যান বলে, গত পাঁচ বছরে আইপিওর মাধ্যমে বাজারে এসেছে ৭৩টি কোম্পানি ও ফান্ড। এর মধ্যে ২০১১-১২ সালে ১ হাজার ৩০১ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলনের বিপরীতে সাবস্ক্রিপশন হয়েছে ৪ হাজার ৩১ কোটি টাকা। ওভার সাবস্ক্রিপশন হয়েছে ৩ দশমিক ১০ গুণ। ২০১২-১৩ সালে ১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলনের বিপরীতে সাবস্ক্রিপশন হয়েছে ৫ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। ওভার সাবস্ক্রিপশন ছিল ৩ দশমিক ৩৭ গুণ। ২০১৩-১৪ সালে ৯৩৪ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলনের বিপরীতে সাবস্ক্রিপশন হয়েছে ৯ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। ওভার সাবস্ক্রিপশন ৯ দশমিক ৮২ গুণ। ২০১৪-১৫ সালে ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলনের বিপরীতে সাবস্ক্রিপশন হয়েছে ১০ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। ওভার সাবস্ক্রিপশন ৮ দশমিক ৬ গুণ। ২০১৫-১৬ সালে ৮৫৮ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলনের বিপরীতে সাবস্ক্রিপশন হয়েছে ৭ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। ওভার সাবস্ক্রিপশন হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ গুণ। গড় ওভার সাবস্ক্রিপশন তিন গুণ হলেও গত পাঁচ বছরে বাজারে আসা অনেক কোম্পানি শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে। শুরুর দিকে বিশেষ করে প্রথম কয়েক কার্যদিবসে নতুন কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ভাটা পড়ে। বেশির ভাগ কোম্পানিই শুরুর দিককার দর ধরে রাখতে পারেনি। যারা ইস্যুমূল্যে পাওয়া শেয়ার ধরে রেখেছেন, তারা মুনাফায় থাকলেও সেকেন্ডারি বাজার থেকে চড়া দামে কেনা শেয়ার নিয়ে অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যেই হতাশা দেখা গেছে। এদিকে অভিহিত মূল্যে বাজারে আসা কোম্পানির শেয়ারেই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল। গত পাঁচ বছরে ওভার সাবস্ক্রিপশনে সবার উপরে থাকা তিনটি কোম্পানিই প্রিমিয়াম ছাড়া আইপিওতে আসে। কোম্পানিগুলো হলো ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ইনফরমেশন টেকনোলজি কনসালট্যান্টস ও এএফসি এ্যাগ্রো বায়োটেক।
×