ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমিষের জন্য

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৬ মার্চ ২০১৭

আমিষের জন্য

মানবজীবনের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণ জরুরী। কিন্তু সব খাদ্যই তো জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। আমিষ, প্রোটিন জাতীয় খাবার মানবদেহের জন্য জরুরী। এক্ষেত্রে মুরগির মাংস এবং ডিম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে তাই গড়ে উঠেছে পোল্ট্রি শিল্প। গত কয়েক বছর ধরে দেশের এই শিল্পে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে বলা যায়, এই শিল্পে বিপ্লব চলছে। এতে বর্তমানে বিনিয়োগের পরিমাণ পঁচিশ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কৃষি খাতের প্রভাব ব্যাপক, যেখানে পোল্ট্রি খাতের ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে এই খাত কর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যম, যেখানে ষাট থেকে সত্তর লাখ মানুষ জড়িত। পোল্ট্রি খাত হতাশাগ্রস্ত মানুষের জীবনে আশার আলো নিয়ে এসেছে। জীবিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও গড়ে উঠেছে মুরগির খামার, যা মাংস ও ডিমের জোগান দিয়ে যাচ্ছে। এই শিল্প না থাকলে মুরগির মাংস ও ডিম থাকত মানুষের নাগালের বাইরে। তবে রোগ-বালাইয়ের আশঙ্কাও থেকে যায়। বিশেষ করে বার্ড ফ্লু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিল্পের বিষয়ে খুবই আন্তরিক। তার সময়োচিত পদক্ষেপের কারণেই বার্ড ফ্লুর প্রকোপ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত শত বছরের পুরনো ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার সরকারের সময় সংগঠনটি দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এই শিল্প প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু ২০০১ পরবর্তী সময়ে এই শিল্প নিঃশেষ হওয়ার পথে ছিল। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবারও সরকার গঠনের পর এই খাতটিকে রক্ষায় আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেন। দেশের পোল্ট্রি শিল্প কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় রোগ-বালাইয়ের কারণে এ শিল্পের ওপর বিপর্যয় নেমেছে। খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আপৎকালীন সময়গুলোতে খামারিদের জন্য প্রণোদনা এবং এই শিল্পের অগ্রগতির স্বার্থে কর মওকুফ সুবিধা, কাঁচামাল ও অত্যাবশীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি প্রদান সঙ্গত হলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই করা হচ্ছে না। ফলে মাংস ও ডিমের দাম বাড়তে থাকে। বাংলাদেশের মোট খাদ্য সরবরাহের ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ মাংস এবং ডিম আসে পোল্ট্রি খাত থেকে। সুতরাং এই শিল্পের উন্নতির জন্য নীতি-সহায়তা প্রদান জরুরী। করারোপের ক্ষেত্রে যৌক্তিকতা বিবেচনা করার পাশাপাশি ক্ষুদ্র খামারি ও ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ এবং ঋণ সহায়তা দেয়া অত্যাবশ্যক। ২০২১ সাল নাগাদ ডিমের মাথাপিছু বার্ষিক ব্যয় ৫১ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ৮৫তে এবং মুরগির মাংসের ক্ষেত্রে মাথাপিছু বার্ষিক ব্যয় ৪ দশমিক ২ কেজি থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ কেজিতে উন্নীত করা প্রয়োজন। অপুষ্টির হার কমাতেও এই শিল্পের বিস্তার জরুরী। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৭টির সঙ্গেই পোল্ট্রি শিল্পের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাই পৃথকভাবে গুরুত্ব থাকার কথা এই শিল্পের। বিজ্ঞানী, গবেষক, খামারি ও উদ্যোক্তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে এই খাতের মানোন্নয়নে এগিয়ে আসা উচিত। নতুবা ২০২১ সালের মধ্যে ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন দ্বিগুণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। ঢাকায় তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত দশম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনারে এসব প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। সবাই এই খাতের অগ্রগতিতে সরকারী সহায়তা চেয়েছে। অপুষ্টি থেকে রক্ষা পেতে হলে এই খাতের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
×