ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ল্যান্ডফোনে চালু হলো ভয়েস, ডাটা ও ডিশ টিভি সুবিধা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ল্যান্ডফোনে চালু হলো ভয়েস, ডাটা ও ডিশ টিভি সুবিধা

ফিরোজ মান্না ॥ ল্যান্ডফোনে চালু হলো বহু প্রতিক্ষিত ট্রিপল প্লে (ভয়েস, ডাটা ও ডিশ টিভি) সুবিধা। রাজধানীর বারিধারা, মিরপুর ডিওএইচএস ও জাজেস কোয়ার্টার এলাকায় এই সেবা দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর ২ লাখ ৩৯ হাজার ল্যান্ডফোন গ্রাহক ট্রিপল প্লে বা একের ভেতর তিন সুবিধা পাবেন। ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বিটিসিএল (১৭১ কেএল বা এক লাখ ৭১ হাজার নামে) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদশে টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) জানিয়েছে, ভয়েস, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগের সুবিধা দেবে ল্যান্ডফোন। গিগাবাইট ক্যাপাবুল অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক (জিপন নেটওয়ার্ক) অবকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু সেই সময় গ্রাহক পর্যায়ে এই সেবা পৌঁছাতে পারেনি বিটিসিএল। প্রকল্পটির শুরুতেই কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে দীর্ঘ তিন বছর লেগে যায় কারিগরি ত্রুটি দূর করতে। এ বছরের শুরুতে বারিধারা ও মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় সংযোগ দেয়া শুরু হয়েছে। জাজেস কোয়ার্টারে এ মাসের শুরু থেকে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বিটিসিএল’র সব গ্রাহক এ সেবা পাবেন। অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বেশি হয় বলে কপার কেবল ব্যবহার করা হয়নি এই প্রকল্পে। এনজিএন ভিত্তিক সফট-সুইচের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টেলিফোন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ সেবা যেমন ফাইবার টু দ্য বিল্ডিং, ফাইবার টু দ্য হোম ও ফাইবার টু দ্য অফিস সেবা দেয়া সহজ হবে। ফলে গ্রাহকরা একই সঙ্গে ভয়েস, ভিডিও এবং ডাটা সেবা সুবিধা পাবেন। গত বছরের শেষ দিকে সুইচের পরীক্ষামূলক ব্যবহারও শুরু হয়েছে। বর্তমানে উত্তরা, গুলশান, শেরেবাংলা নগর, রমনা, মগবাজার, নীলক্ষেত, মিরপুর, বাবুবাজার, চকবাজারসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় এক লাখের বেশি টেলিফোনে এই সেবা চালু করার জন্য প্রস্তত করা হচ্ছে। রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় ফাইবার অপটিক্যাল কেবল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। গ্রাহকদের এসব সেবা নিতে আলাদা আলাদা বিল দিতে হবে। ভয়েসের জন্য এক ধরনের বিল, ইন্টারনেট ও ডিশ টিভির জন্য আরেক রকম বিল দিতে হবে। গ্রাহকরা ইচ্ছে করলে যে কোন সেবা নিতে পারবেন। এক সঙ্গেই যে তিনটি সেবা নিতে হবে এমন কোন বাধ্যবাদকতা নেই। সেবাগুলোর জন্য বিটিসিএল প্যাকেজ দেবে। গ্রাহক সুবিধা মতো প্যাকেজ নিতে পারবেন। বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরের পুরনো টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপন প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। এ বছর সেবাটি পুরোপুরি চালু হবে। এর আগে সেবা চালুর জন্য স্থাপনকৃত যন্ত্রগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ শেষ করা হয়েছে। আরও অনেক এলাকায় যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে। ২০১৪ সালে সীমিত আকারে সেবাটি চালু করার পর পরই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার প্রকল্পের কোন কাজে কোন রকম ত্রুটি রাখা হয়নি। সেবাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নানা দিক থেকে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। কেন সেবাটি বিটিসিএল বন্ধ করে দিল। এখানে আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোপাইডর) ও কেবল অপারেটরদের কোন যোগসাজশ ছিল কিনা। গোটা বছর জুড়েই বিটিসিএল এই অপবাদ শুনে এসেছে। এবার বিটিসিএল এটা শুনতে রাজি না। ‘ট্রিপল প্লে’ সার্ভিস চালু হলে রাজধানী ঢাকা তার মুক্ত শহর হবে। ল্যান্ডফোনের লাইন মাটির নিচ দিয়ে গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছেছে। কিন্তু এখনও ডিশ লাইন ও আইএসপিদের লাইন মাটির ওপর দিয়ে গ্রাহক পর্যন্ত রয়ে গেছে। এতে গোটা রাজধানী জুড়ে তারের কু-ুলি। এই তারের কু-ুলি কোন কোন জায়গায় বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় এসব তারের কু-ুলি সড়কের ওপর পড়ে পথচারীদের পায়ে জড়িয়ে যায়। এই সুবিধা দেয়ার জন্য উত্তরা, শেরেবাংলা নগর, গুলশান ও মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ৭ ডিজিটের ফোন নম্বরের বদলে ৮ ডিজিট করা হয়েছে। উত্তরা এক্সচেঞ্জের ৮৯১ এবং ৮৯২ গ্রুপের ৭ হাজার পুরনো টেলিফোন নম্বর ৮ ডিজিট করার কাজ শেষ হয়েছে। শেরেবাংলা নগর ও গুলশান টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতায় ৮ হাজার নম্বর পাল্টে যাবে। মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতায় ৭ হাজার টেলিফোন ৮ ডিজিটে করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার সর্বত্র অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন হওয়ার আগে সব এলাকায় এ সেবা পাওয়া যাবে না। উত্তরা, শেরেবাংলা নগর, গুলশান, রমনা, নীলক্ষেত, মিরপুর, বাবুবাজার, চকবাজার ও মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের আওতায় এক লাখ গ্রাহকের টেলিফোন নম্বর ৮ ডিজিটে পরিবর্তন করার কাজ চলছে। রাজধানীর পুরনো ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপন (১৭১ কে.এল) প্রকল্পটি বিটিসিএল পরিচালনা পরিষদের সভায় অনুমোদিত হয়। বিটিসিএল’র নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পটির মাধ্যমে গ্রাহকদের আধুনিক টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
×