ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিএনপিহীন বিরোধী দলের সন্ধানে

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিএনপিহীন বিরোধী দলের সন্ধানে

বিএনপির এমন দশা স্বপ্নেও ভাবা যায়নি। কথায় বলে পাপের ঘড়া পূর্ণ না হওয়া অবদি সময় কথা বলে না। সেই জিয়ার আমল থেকে নেগেটিভ রাজনীতির সুফল ভোগ করা এই দল জামায়াতের কাঁধে চড়ে দেশের গদি দখল করে ভেবেছিল এই ক্ষমতাভোগ চিরকালের। অনেক বছর ককটেল খাইয়ে মানুষকে পাকি প্রেমে মজিয়ে রাখলেও শেষ রক্ষা হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াতের টপ লিডারদের বিদায়ের পর ময়দানে বিএনপি এখন অসহায়। শেখ হাসিনা আর কোন্ কারণে টিকে থাকবেন জানি না তবে আমার মতো মানুষদের কাছে ইতিহাস হননকারী বিএনপিকে লেজে জান এনে এই হাল করার জন্য অভিনন্দন তার চিরকালের প্রাপ্য। কারণ, এই দলটি মুসলিম লীগের চাইতেও ভয়াবহ। কোন নীতি আদর্শ ছাড়া একটি দল এত বছর মুক্তিযুদ্ধে পাওয়া দেশের শাসনভার দখলে রেখে চেতনার বারোটা বাজিয়েছে এটা বড় দুর্ভাগ্যের। আজ বিএনপির আস্ফালন কাগুজে হুঙ্কার। আপোসহীন নামে পরিচিত খালেদা জিয়ার কথা দলেও কেউ শোনে না। জানা যায় তিনি যা করেন বা বলেন তা গোপনীয় হলেও প্রচার হয়ে যায়। গুটিকয় নেতা ব্যতীত বাকিরা কাঁটার মতো দলের গলায় লেগে আছে। তাদের গিলতে বা ফেলতে পারছে না কেউ। তাছাড়া ইলেকশানে না গিয়ে জনগণের কথা না শুনে তাদের মতামতের ধার না ধেরে আওয়ামী লীগকে গদি থেকে নামানোর খেলা যে শেষ এটা তারা টের করতে পারেননি। আমি সবসময় মনে করি আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে না থাকাই মঙ্গল। কারণ, তারা যে কোন ইস্যুতে দেশ কাঁপিয়ে তুলতে পারে। আর বিএনপি ও জামায়াত যে সাংগঠনিকভাবে কতটা হতদ্যম সেটাই এবার দেখলাম আমরা। এমন বাস্তবতায় বিএনপি কি আসলে নির্বাচনে যাবে? বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল বলেছেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা-চিন্তার এই দিকটা জানা ছিল না। এই অসম্ভব-সম্ভবের দেশে কত কিছুই না ঘটে। প্রয়োজনে বাঘে-ছাগলে একঘাটে পানিও খায়। খবরটা সত্য ধরে নিয়েই বলি, এর ভেতর মহানুভবতা বা উদারতা আছে ভাবলে বিরাট ভুল হবে। এমনকি কৌশলও নেই। এটা প্যাঁচে পড়ে একঘাটে পানি খাওয়ার মতো। বিএনপি যদি তাদের দলীয় অস্তিত্ব বজায় রাখতে চায় এখন এর বিকল্প নেই। খালেদা জিয়ার একগুঁয়ে মনোভাবের দিন শেষ। তিনি মানেন কি মানেন না জানি না তবে এখন তাঁর ক্যারিশমা শেষ। যেটুকু মিটমিট করে জ্বলছে কোনভাবে একটি বিচারে সাজা হলে তাও নিভে যাবে। সরকার বা খালেদাবিরোধীরা বসে নেই। যে সাইলেন্ট মেজরিটির জোরে বিএনপি এতদিন বুক ফুলিয়ে চলত সে আর মাঠে নামবে না। সমর্থন থাকলেও তারা কোন ঝুঁকি নেবে না। তাছাড়া আইনগত ঝামেলার পাশাপাশি পরপর দুবার জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলে নিবন্ধন বাতিলের দুর্ভাবনাও এড়িয়ে চলা যাবে না। কিন্তু কে তাদের গ্যারান্টি দেবে ভোটে দাঁড়ালেই গদি মিলবে? বিএনপির এই কঠিন সময়ে গুজব আছে বড় বড় নেতার অনেকেই ঘাপটি মেরে চান্সের অপেক্ষায়। এবার বেগম জিয়া না এলে তারাই নাকি বিএনপির নামে ইলেকশান করবে। করুক বা না করুক তারা যে সক্রিয় না সেটা তো চাক্ষুস। কেউ কোন কথা বলে না। যা প্রলাপ বকে একাই রিজভী। মাঝে মাঝে ফখরুল সাহেব। ও হ্যাঁ আর একজন আছেন বটে। গয়েশ্বর রায়। কোন এক কারণে তিনি নিরাপদ ও সরব। মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলেন, দল তো দল দেশেরও পিলে চমকে যায়। এই যেমন ফখরুল সাহেবের কথা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, নতুন সিইসি ও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া নাকি জাহান্নামে যাওয়া। বাবুজী জান্নাত জাহান্নামের কি বোঝেন, আর কোনটা বেহেশত কোনটা দোজখ সেটারই বা কি জানেন? কিন্তু এই যে হটকারী কথা এবং সমঝোতা বা লাইনে আসার পথে বাধা দেয়া এর পরিণাম বিএনপিকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার কুফল, ষড়যন্ত্রের বদদোয়া আর যুবরাজের বাড়াবাড়িতে দল এমনিতেই গৃহবন্দী। জাতির পিতার শোক দিবসে কেক কাটার পাপ এখনও ঘোচেনি। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এমন মনোভাব ও কথায় এটাই প্রমাণ হয় বিএনপি এখন আসলেই এতিম। বাঁচতে হলে লাইনে আসার বিকল্প নেই। গণতন্ত্র দেশ ও রাজনীতির স্বার্থে তাকে খোলস ছাড়তে হবে। হামবড়া ভাব কঙ্কালের মানায় না। বিএনপি কি এটা বোঝে? অচিরেই বাংলাদেশ বিকল্প বিরোধী দলের সন্ধানে মাঠে নামলে দলটিতে হায় হায় করার জন্যও কেউ থাকবে না।
×