ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে ভয়ঙ্কর প্রকৃতির দুর্ধর্ষ জঙ্গীরা;###;পলাতক এসব জঙ্গী সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য;###;মাসিক সভায় পুলিশকে সতর্ক করেছেন কমিশনার

জঙ্গীরা সক্রিয়

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

জঙ্গীরা সক্রিয়

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আবারও জঙ্গী হামলার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। কারণ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকার ভয়ঙ্কর প্রকৃতির দুর্ধর্ষ জঙ্গীরা। পলাতক এসব জঙ্গীরা সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। যে কোন সময় তারা জঙ্গী হামলা চালাতে পারে। বেশকিছু দিন ধরে দেশে জঙ্গী তৎপরতা না থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের মধ্যেও জঙ্গী দমনে অলসভাব দেখা যাচ্ছে। এজন্য জঙ্গীদের গতিবিধির বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও ডিএমপি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, গত শনিবার ডিএমপির সদর দফতরে অনুষ্ঠিত মাসিক অপরাধ সভায় ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছেন, যে কোন সময় জঙ্গীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এজন্য রাজধানী ঢাকায় নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে পুলিশের টহল বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ডিএমপি কমিশনার। বেলা একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মাসিক অপরাধ সভায় জঙ্গী গ্রেফতারের জন্য বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, আত্মগোপনে আছে এমন মোস্ট ওয়ান্টেড ভয়ঙ্কর প্রকৃতির দুর্ধর্ষ ও সুইসাইড স্কোয়াডের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক জঙ্গী। তিন বছর ধরে দেশে যেসব জঙ্গী হামলা, ব্লগার হত্যাকা-সহ ভিন্নমতাবলম্বীদের খুন হওয়ার ঘটনাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসা পলাতক এসব শীর্ষ জঙ্গী। গোপন জঙ্গী আস্তানায় আত্মগোপনে থেকে তৎপর আছে তারা। জঙ্গী সংগঠনকে সংগঠিত করার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। আত্মগোপনে থাকা এসব জঙ্গীকে ধরতে নানা ধরনের ফাঁদ পেতেছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পলাতক ভয়ঙ্কর প্রকৃতির দুর্ধর্ষ শীর্ষস্থানীয় জঙ্গীরা হচ্ছে জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক কমান্ডার সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম জিয়া, রাজধানীর আশকোনার সূর্য ভিলা নামের জঙ্গী আস্তানার মূল নায়ক মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির জঙ্গী হামলার অন্যতম অর্থ সংগ্রহকারী বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেট, পুরনো জেএমবির শূরা সদস্য (বর্তমানে নব্য জেএমবির অস্ত্রের জোগানদাতা) মাহফুজ সোহেল ওরফে হাতকাটা সোহেল ওরফে নাসির উদ্দিন ওরফে ভাগিনা সোহেল। তাদের সঙ্গে আরও কয়েক জঙ্গী সদস্য রয়েছে যারা গোপন আস্তানায় লুকিয়ে আছে। জঙ্গী বিষয়ে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, যে চারজন শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতা আত্মগোপনে আছে তারা উচ্চ শিক্ষিত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তিন বছর ধরে তারা জঙ্গী তৎপরতায় সম্পৃক্ত হয়ে বাড়ি ঘর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হিযরতে আছে পলাতক শীর্ষ পর্যায়ের চার জঙ্গী নেতা। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনাকারী শীর্ষ জঙ্গী নুরুল ইসলাম মারজান মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার সময় তার এক সহযোগী জঙ্গী পালিয়ে গেছে, যাকে এখনও ধরা যায়নি বলে থানায় দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পলাতকদের মধ্যে যে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী রয়ে গেছে তারা যে কোন সময় বড় ধরনের জঙ্গী হামলার জন্য হুমকি বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের দাবি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, পলাতক শীর্ষস্থানীয় জঙ্গীদের মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া, আশকোনার জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া মাঈনুল ওরফে মুসা, আজিমপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেট, মাহফুজ সোহেল, খুবই দুর্ধর্ষ ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির। এই দুর্ধর্ষ শীর্ষস্থানীয় পাঁচ জঙ্গী ছাড়াও সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য আবু ইউসুফ মোহাম্মদ বাঙালী, খোকন, ওয়াসিম আজওয়াদ ওরফে আসিফ আজওয়াদ, আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর, কমান্ডার মানিক, মামুনুর রশিদ লিটন, ইব্রাহিম হাসান খান ও তার ভাই জুনায়েদ হাসান খান, ইকবাল, মামুন, বাদল, সাগর, আজাদুল ওরফে কবিরাজ ও সাকিব ওরফে মাস্টার। তারা সবাই সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। হিযরতে থেকে জঙ্গী তৎপরতায় সম্পৃক্ত তারা। পলাতক থাকায় পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে এসব জঙ্গী। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়া ইতোমধ্যেই অনেক জঙ্গীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামিয়েছে যাদের মধ্যে অনেকেই নিহত ও গ্রেফতার হয়েছে। অনেকেই এখনও পলাতক আছে। এই জঙ্গী নেতা গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে এমন কথা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তারা। অপর শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতা মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা ভয়ঙ্কর প্রকৃতির জঙ্গী নেতা যা রাজধানীর আশকোনার সূর্য ভিলা নামক জঙ্গী আস্তানায় অভিযানকালে উদ্ধারকৃত অস্ত্র, বিস্ফোরক, সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধারে প্রমাণিত হয়েছে। এসব অস্ত্র, বিস্ফোরক, সুইসাইডাল ভেস্ট সংগ্রহকারক মাঈনুল ওরফে মুসা। বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলটে বাশার ওরফে চকোলেট র‌্যাবের প্রকাশিত নিখোঁজের তালিকার ১৮ নম্বরে। সে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছলি। বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেট বাশার ওরফে চকোলেট নব্য জেএমবির শীর্ষ কমান্ডারদের মধ্যে অন্যতম। পুরনো জেএমবির শূরা সদস্য (বর্তমানে নব্য জেএমবির অস্ত্রের জোগানদাতা) মাহফুজ সোহেল ওরফে হাতকাটা সোহেল ওরফে নাসির উদ্দিন ওরফে ভাগিনা সোহেল অস্ত্র, বিস্ফোরক ও সুইসাইডাল ভেস্ট সরবরাহ করা থেকে শুরু করে জঙ্গীদের অর্থ ও সংগ্রহের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, যেই শীর্ষস্থানীয় দুর্ধর্ষ ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির শীর্ষ জঙ্গী নেতারা তিন বছর ধরে আত্মগোপনে থেকেই দেশের ভেতরে জঙ্গী হামলা, হত্যাকা-, নাশকতার মতো বড় ধরনের অপরাধী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত। ২০১৩ সালে ব্লগার হত্যাকা- থেকে শুরু করে ধর্মযাজক, পুরোহিত, বিদেশী, ভিন্নমতাবলম্বী হত্যাকা- ঘটানো ছাড়াও গুলশান, শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলা ও জঙ্গীবিরোধী অভিযানে গোপন জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলেছে। তবে এখনও যারা পলাতক আছে তারা জঙ্গী হামলার জন্য হুমকি। তারা ধরা না পড়া পর্যন্ত জঙ্গী হামলা কিংবা গুপ্তহত্যা বা টার্গেট কিলিং আবার হবে না এমন কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউই।
×