ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ

সর্বস্তরে বাংলা ভাষা

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সর্বস্তরে বাংলা ভাষা

প্রত্যেক বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আসে। এবার একুশ এসেছে নতুন বেশে জিজ্ঞাসা নিয়ে। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মাতৃভূমির সম্ভ্রম রক্ষায় পূর্ব বাংলার অমিততেজ ছাত্রসমাজ যে সাহসের সঙ্গে ঔপনিবেশিক চক্রান্তকে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং আদায় করে নিয়েছিল বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে, সেই রক্তাক্ত পূর্ববাংলা আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ‘মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা’ পঙ্ক্তিটি যখন মধ্যযুগের কবি লিখেছিলেন, তখন তিনি ঠিকই লিখেছিলেন। বাংলা ভাষা তখন ছিল বাঙালীর গর্বের ধন এবং আশা-ভরসার স্থল। ভাষা আন্দেলনের ছয় দশকের মধ্যেই মাতৃভাষার প্রতি অশ্রদ্ধা, অবজ্ঞা এবং নৈরাজ্য এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, বাংলা ভাষার লালিত্য, মাধুর্য ও সৌন্দর্য প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে। বাংলাদেশে এখন ভাষা বিকৃতির মহোৎসব চলছে। যখন সমাজের বিত্তশালীরা তাদের সোসাইটি কিংবা আভিজাত্য বোঝাতে ইঙ্গবঙ্গ মিশ্র ভাষায় জনসাধারণের সামনে কথা বলেন, তখন বোঝা যায় বাংলা ভাষার প্রতি আমরা কতটা শ্রদ্ধাশীল! গাড়ির নেমপ্লেট থেকে শুরু করে সাইন বোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন, সরকারী ও বেসকারী প্রতিষ্ঠানের নাম বেশিরভাগই ইংরেজীতে। ইংরেজীর আধিপত্য ও আগ্রাসন আজ সর্বত্র। অবস্থাদৃষ্টে এমন মনে হচ্ছে যে, বাংলা নয় ইংরেজীই যেন বাংলাদেশের প্রধান ভাষা। বদলে যাচ্ছে বাংলার সংস্কৃতি বদলে যাচ্ছে ভাষা। আমরা পাচ্ছি অপসংস্কৃতিতে ভরা ‘বাংলিশ জাতি’। বৈশ্বিক প্রয়োজনে আমরা মাতৃভাষা ছাড়াও অন্যান্য ভাষা শিখব। তবে বাংলাকে রাখতে হবে অন্তরের মণিকোঠায়। কবিগুরু বলেছেন, ‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, পরে ইংরেজী শেখার পত্তন।’ আসলে মাতৃভাষার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চাই জাতীয় অগ্রগতির চাবিকাঠি। চীন, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স প্রভৃতি রাষ্ট্র মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারলে আমরা কেন ইংরেজীনির্ভর থাকব! প্রযুক্তির প্রভাবে প্রচুর বই প্রকাশিত হচ্ছে এখন, বের হচ্ছে অনেক সংবাদপত্র। কিন্তু কোথাও কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে বলে মনে হয় না। পাঠ্যবই ও পত্রপত্রিকাগুলোতে উপেক্ষিত হচ্ছে বাংলা একাডেমির ‘প্রমিত বানানরীতি’। এ ছাড়া বছরের শুরুতেই ভুলে ভরা পাঠ্যবই যোগ করেছে নতুন মাত্রা। দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও উচ্চ আদালতে বাংলা উপেক্ষিত। অথচ এ বাংলার জন্যই ১৯৫২ সালে প্রাণ দিয়েছিলেন দামাল ছেলেরা। সেদিনের প্রধান দাবিগুলোর একটি ছিল সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন। এভাবে ক্রমান্বয়ে প্রিয় বাংলা ভাষা বা বাঙালী সংস্কৃতি এক সময় কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে। তখন নিজেদের ভাষা আর নিজেদের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ যার যার ভাষা হচ্ছে তার তার জাতিসত্তার প্রাণ। এ প্রাণ না থাকলে মনোদৈহিকভাবে বেঁচে থেকেও আমরা মৃতবৎ হয়ে পড়ব। আর তাই মাতৃভাষার কোন বিকল্প নেই। যে কারণে এ ভাষার অস্তিত্ব রক্ষায় সবার এগিয়ে আসা দরকার। আকুরটাকুর পাড়া, টাঙ্গাইল থেকে
×