ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুধু এ্যাসেম্বলিং নয়, ম্যানুফেকচার করতে আগ্রহী হবে উদ্যোক্তারা;###;ইন্দো-বাংলা অটোমেটিভ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা

চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে গাড়ি রফতানির আশা

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে গাড়ি রফতানির আশা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও ভারতীয় কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণে প্রথমবারের মতো অটোমোবাইল মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার যোগাযোগ অবকাঠামোকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। পদ্মা সেতু হয়ে গেলেই অটোমোবাইলের বাজার কয়েক গুণ বাড়বে। বন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ইত্যাদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে যানচলাচল আরও কয়েকগুণ বাড়বে। তারা বলেন, দেশে অটোমোবাইলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাড়ায় নীতিমালা করছে সরকার। যাতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা শুধু এ্যাসেম্বলিং নয় ম্যানুফেকচার করতে আগ্রহী হবে। ভবিষ্যতে চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে অটোমোবাইল রফতানি করতে পারবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ভারতের বেশকিছু কোম্পানি বাংলাদেশে অটোমোবাইল কারখানা স্থাপন করেছে। বেশকিছু প্ল্যান্ট স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রদর্শনী দুই দেশকেই উপকৃত করবে এবং ভবিষ্যত বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত তৈরি করবে। রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে বৃহস্পতিবার ‘ইন্দো-বাংলা অটোমটিভ শো’ নামের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ভারতের হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও শিল্পসচিব মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দুই দেশের প্রধান প্রধান গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো এই মেলায় অংশ নিয়েছে। অনুষ্ঠানে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রদর্শনী দুই দেশকেই উপকৃত করবে এবং ভবিষ্যত বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত তৈরি করবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ভারতের বেশ কিছু কোম্পানি এখানে অটোমোবাইল কারখানা স্থাপন করেছে এবং বেশকিছু প্ল্যান্ট স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জ্যেষ্ঠ সচিব মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এমন পলিসি তৈরি করছি, যেখানে দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা শুধু এ্যাসেম্বলিং নয় ম্যানুফেকচার করতে আগ্রহী হবে। দেশে অটোমোবাইলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমরা নিজেরাই আমাদের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে অটোমোবাইল রফতানি করতে পারব বলে আশা করি। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে গাড়ি বাজারজাত করার ব্যাপারে ভেবেছেন এবং আমাদেরও ওই মতে নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশের মধ্যে কারখানা নির্মাণ করে গাড়ি বানাতে তিনি সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের ছাড় দেয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। দেশের প্রতি ভালবাসা তৈরি করতে হবে। তাহলে আমাদের দেশে গাড়ি উৎপাদন ও ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) সভাপতি ও ইফাদ অটোজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন আহমেদ বলেন, আমাদের উদ্যোক্তাদের জোর প্রস্তুতি নিতে হবে। সর্বোপরি সরকারের কাছ থেকে প্রগ্রেসিভ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের জন্য সহায়ক নীতিমালা প্রয়োজন হবে। টু হুইলারের জন্য আমাদের একটি নীতি হয়েছে। আপনারা দেখছেন, নেপালে বাংলাদেশ থেকে মোটরসাইকেল যাচ্ছে। এগুলোই ইতিবাচকতার সূচনা। চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মেক্সিকোর শিল্প কীভাবে দাঁড়িয়েছে দেখলে আমাদের বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যত করণীয় বোঝা সম্ভব। অশোক লেল্যান্ড, বাজাজ অটো, হিরো মটোক্রপ, হোন্ডা, মাহিন্দ্রা, মারুতি-সুজুকি, রানার, টাটা মোটরস, ইয়ামাহা, টিভিএস মোটরসহ মোট ১৪টি অটোমোবাইল নির্মাণকারক প্রতিষ্ঠান ও এদের দেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে বলে জানান মেলার আয়োজকরা। এতে মোটরসাইকেল, কার, বাস, ভ্যান, জিপ, অটোরিক্সা ও ট্রাক্টরের প্রদর্শনী করছে ভারত-বাংলাদেশের অটোমোবাইল নির্মাণকারক ও পরিবেশকরা। মেলা আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফেকচারার্স (সিয়াম) ও সমন্বয় বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিয়ামের সভাপতি ভিনোদ কে. দাশারি ছাড়াও দুই দেশের ব্যবসায়ী ও সরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মেলায় ইয়ামাহা, টিভিএস, বাজাজ, হিরো, রানার, হোন্ডাসহ জনপ্রিয় মোটরসাইকেল নির্মাতারা বেশ কিছু নতুন মডেল মেলায় নিয়ে এসেছে, যেগুলো বিশেষ মূল্য ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে বলে পরিবেশকরা জানিয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনর হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং উত্তরা মোটরসের চেয়্যারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান উত্তরা মোটরসের প্যাভিলিয়নে বাজাজ এ্যাভেঞ্জার ১৫০ মোটরসাইকেলের উদ্বোধন করেন। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপক উৎপল সাহা জানান, এ্যাভেঞ্জার ১৫০ স্ট্রিট মোটরসাইকেলটির দাম ১,৯৯,৫০০ টাকা। শুক্রবার থেকে উত্তরা মোটরসের সকল শোরুম ও অনুমোদিত ৩ঝ (সেলস, সার্ভিস ও স্পেয়ার পার্টস) ডিলারদের নিকট পাওয়া যাবে। হিরো মোটরসাইকেলের যে কোন মডেলে ১৫ হাজার টাকা ছাড় দেয়া হচ্ছে বলে জানান ব্র্যান্ডটির রিটেইলার নিলয় মোটরস লিমিটেডের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহবুব আলম। একশ’ থেকে দেড়শ সিসির এই বাইকগুলো ১ লাখ ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজারের মধ্যে পাওয়া যাবে। রানার অটোমোবাইল লিমিটেডের এজিএম (পাবলিক রিলেশন্স) ওয়াহিদ মুরাদ বলেন, প্রদর্শনীতে কাইট প্লাস ও নাইট রাইডার নামের সম্পূর্ণ নতুন দুটি মোটরসাইকেল মডেল নিয়ে এসেছে আমাদের কোম্পানি। মূল্য ছাড় চলছে হোন্ডা ব্র্যান্ডেও; সিবি সাইন, সিবিআর, সিবি ট্রিগার ও সিডি-৮০ মডেল ১৩ থেকে ৪০ হাজার টাকা ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। ইয়ামাহার রিটেইলার এসিআই মোটরস লিমিটেডের সিনিয়র ব্র্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ বলেন, গত বছর ভারতের বাজারে আসা ইয়ামাহা ভার্সন-২ এবার আমরা মেলার নিয়ে এসেছি। ব্লু-কোর ও এফআই প্রযুক্তির ইঞ্জিন থাকায় বাইকগুলো পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানিসাশ্রয়ী। ওয়াইএফজেড, এফআই, ফেজার, এসজেড, এফটু-এসের ভার্সন-২সহ অন্যান্য মোটরসাইকেলে ২৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ছাড় দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
×