ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিয়ানমারের মিথ্যাচার

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

মিয়ানমারের মিথ্যাচার

দীর্ঘদিন একঘরে হয়ে থাকা সামরিক জান্তাশাসিত মিয়ানমার নামক রাষ্ট্রটিতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সামরিক শাসন পরিহারের পর গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা চালুকালেও দেশের শাসকরা রোহিঙ্গা নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। অর্থনৈতিক অবরোধ দেশটির ওপর থেকে উঠিয়ে নেয়ার পরও নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। নিজ দেশের নাগরিকদের এভাবে নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ, একুশ শতকে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। নোবেল জয়ী নেত্রী আউং সান সুচি ও তার দল ক্ষমতায় এসেও সামরিক জান্তা শাসকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোহিঙ্গা উচ্ছেদ বজায় রেখেছে, যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় তুলছে। ক্লিন রোহিঙ্গা অপারেশনের নামে সে দেশের সেনাবাহিনী পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বর্বরতা বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। রোহিঙ্গার ওপর নৃশংস নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে পড়ার পর চার পুলিশ কর্মকর্তাকে আটকও করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। হত্যা, ধরপাকড়, ধর্ষণ, জ্বালাও পোড়াওসহ এমন কোন ঘটনা নেই, যা ঘটছে না। মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ তারা দিনের পর দিন ঘটিয়ে চলেছে সেই ১৯৭৮ সাল থেকে। রোহিঙ্গাদের জাতিগত স্বীকৃতি না দিয়ে আন্তর্জাতিক সকল আইনকানুন লঙ্ঘন করে চলেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। বিশ্ব জনমতের চাপে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেছিলেন সুচি। কিন্তু তাকে যথাযথভাবে কাজ করারও সুযোগ দেয়া হয়নি। সাংবাদিক ও এনজিওদের প্রবেশাধিকারও নেই। গত ৯ অক্টোবর সীমান্ত চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার পর সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। দু’শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে। তাদের অত্যাচারে হাজারপঞ্চাশেক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বিশ্ব জনমত ও জাতিসংঘের চাপে মিয়ানমার সরকার সাবেক জেনারেল শিশু সোয়ের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে। কিন্তু অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্তিতে রয়েছেন। আর এই কমিশন দাবি করছে, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও নিপীড়নের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মিথ্যাচারে ও ডাহা অসত্যের বুননে গাঁথা কমিশনের প্রতিবেদনটি, যা বিশ্ব বিবেককে হতবাক করেছে। সরকারী কমিশন বলছে, রোহিঙ্গা নির্মূলে সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সঠিক নয়। রাখাইনে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা ও মালিকদের অবস্থা প্রমাণ করছে, গণহত্যা ও ধর্মভিত্তিক নির্যাতনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। ধর্ষণের পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ধরপাকড়ের ঘটনাকেও অস্বীকার করা হয়েছে। একুশ শতকে রাষ্ট্রীয় মিথ্যাচারের এক জ্বলন্ত নিদর্শন সরকারী কমিশনের এই প্রতিবেদন যা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে চিহ্নিত করেছে। একদা দক্ষিণ চট্টগ্রামের অংশ আরাকানকে ব্রিটিশ রাজরা মিয়ানমারের অংশে পরিণত করায় রোহিঙ্গারা আজ নিপীড়িত। মিয়ানমার এদের বাঙালী হিসেবে অভিহিত করছে। এর মধ্য দিয়ে তারা আরাকান যে অতীতে চট্টগ্রামেরই অংশ ছিল তা স্বীকার করে নিচ্ছে। জাতিগত নিপীড়িত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করা যায় অনায়াসে। বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জাতি রোহিঙ্গাদের রক্ষায় অবশেষে ওআইসির টনক নড়ছে। তারা মালয়েশিয়ায় বৈঠক ডেকেছে। বুধবার মিয়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে দুই দেশ একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
×