ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অ প রা জি তা না রী

শাহনাজের আলো পার হলো দেশের গণ্ডি

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

শাহনাজের আলো পার হলো দেশের গণ্ডি

‘বেস্ট গ্লোবাল টিচার’ পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নিজের নামকে যুক্ত করার সফলতা দেখিয়েছেন বগুড়ার এক স্কুলশিক্ষিকা। নাম শাহনাজ পারভিন। শীর্ষ ৫০ জনের এই তালিকায় শাহনাজই একমাত্র বাংলাদেশী। তিনি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সদর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। চলতি বছরের বিশ্বসেরা শিক্ষকদের নামের পাশে উজ্জ্বল হয়ে আছে শাহনাজ পারভিনের নামটিও। ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভারকি ফাউন্ডেশন’ বিশ্বসেরা শিক্ষকদের গত তিন বছর ধরে এই পুরস্কারটি দিয়ে আসছে। সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্যটি পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশী শিক্ষক শাহনাজ পারভিনকে শিক্ষকতার অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই শীর্ষ তালিকায় স্থান দেয়া হয়। ১ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক মূল্যে পুরস্কারটি দেয়া হবে। ১৭৯টি দেশের ২০ হাজার প্রার্থীর মধ্য থেকে এই শীর্ষ শিক্ষকদের নির্বাচন করা হয়। ৩৭টি দেশের শিক্ষকদের মানসম্মত বিচার প্রক্রিয়াটিতে ৫০ জন শিক্ষককে পুরস্কারের জন্য বিবেচনায় আনা হয়। ১৯৭৬ সালে বগুড়া জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শাহনাজের জন্ম। শিক্ষকতার মতো মহান পেশাটি তিনি অনেকটাই অর্জন করেন পারিবারিক আবহে। বাবা এবং মা দু’জনেই ছিলেন শিক্ষক। মায়ের স্কুলেই তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি। ১৯৮৫ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে মেধাতালিকায় সরকারী বৃত্তি অর্জন করেন। কিন্তু রক্ষণশীল এবং ধর্মীয় পারিবারিক প্রতিবেশে তিনি ছিটকে পড়েন একেবারে কামিল মাদ্রাসায়। সেখানেও রাখেন কৃতিত্বের ছাপ। ১৯৯০ সালে বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে দাখিল পাস করেন। কিন্তু ১৯৯১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার জীবনে নেমে আসে বাল্যবিয়ের মতো সামাজিক অভিশাপ। স্বামীও মাদ্রাসার শিক্ষক। তার পরও শাহনাজ থেমে থাকেননি। ১৯৯২ সালে কামিল মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর এগিয়ে যাওয়ার আরও জোরালো ইতিহাস। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ ডিগ্রী নেয়ার সাধ পূর্ণ না হলেও বগুড়ার সরকারী আযিযুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবন চালিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। এরপরে আর পেছনে ফিরে তাকাননি। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে সম্মানসহ স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পারিবারিক পেশাকে আদর্শ ধরে শিক্ষকতাকেই বেছে নেন। তিনি তার বিদ্যালয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের জন্য প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শাখা উন্মোচন করেন। এখানে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত, অসহায় কর্মজীবী শিশুরা শিক্ষা-অর্জনে সুযোগ পায়। শিক্ষা সম্পর্কিত তার বহুবিধ কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে তিনি জেলা পর্যায়ে এবং ২০১৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ২০১৬ সালে উপজেলা পর্যায়ে সেরা কবি লিডার হন। ২০১৭ সালে একুশে পদকের জন্য রাজশাহী বিভাগ থেকে তার নামই উঠে আসে। এই কৃতী শিক্ষাবিদ দুই কন্যা সন্তানের জননী। বড় মেয়ে মাসুমা মরিয়ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতকের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে আমিনা মুমতারিন শ্রেয়া বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। এই অনুকরণীয় শিক্ষিকা দেশে বসে শিক্ষার যে আলো বিশ্বময় ছড়ালেন তা যেমন অসাধারণ একইভাবে গৌরবদীপ্ত। অপরাজিতা ডেস্ক
×