ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

বাঁশখালীতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ৭ তলা ভবনকে স্থাপনাবিহীন বাড়ি দেখিয়ে রেজিস্ট্রি

জোবাইর চৌধুরী, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম 

প্রকাশিত: ১৩:১৬, ৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৩:১৭, ৩ জুলাই ২০২৫

বাঁশখালীতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ৭ তলা ভবনকে স্থাপনাবিহীন বাড়ি দেখিয়ে রেজিস্ট্রি

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ২৮ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ৭ তলা ভবনকে স্থাপনাবিহীন বাড়ি দেখিয়ে রেজিষ্ট্রি করিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভবনটি খোদ বাঁশখালী পৌরসভা অফিসের সম্মুখের অদূরে হলেও কর্তৃপক্ষ নিরব।

অভিযোগ ওঠেছে, জমির রেজিষ্ট্রি গ্রহিতা ২৮ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ও বাঁশখালী পৌরসভা অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মোটা অংকের লেনদেন করেছেন বলেও এলাকায় গুঞ্জন চলছে। রেজিষ্ট্রি কবলায় দেখা গেছে ৮.৫০ শতাংশ জমির বাজার মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ টাকা উল্লেখ করলেও ৭ তলা ভবনের ২৪ হাজার ১৯২ বর্গফুট ভবনের বাজার মূল্য ২ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার টাকা উল্লেখ করে নাই। উক্ত টাকা অলিখিতভাবে দাতা-গ্রহীতার মধ্যে লেনদেন হয়েছে। 

অবশ্য, সাব-রেজিষ্ট্রারের দাবি জমি রেজিষ্ট্রির সময় দাতা-গ্রহীতা ও দলিল লেখক অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কারসাজি করলে আমার কিছু করার নেই বলে দাবি করেছেন। বাঁশখালী পৌরসভার সচিবের দাবি পৌর এলাকায় ৫ তলা ভবনের চেয়ে উঁচু তলার ভবন অনুমোদন দেয়ার নিয়ম নাই। ৭ তলা ভবন করেও তিনি পৌর আইন লঙ্ঘন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে সরেজমিনে বাঁশখালী উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে গিয়ে   জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ মার্চ বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদি মৌজায় প্রধান সড়ক সংলগ্ন মিয়া বাজারে ছাবের আহমদের ছেলে মোস্তাক আহমদ  এবং আহমদুর রহমানের স্ত্রী রুমি আকতার মিলে মনকিচর গ্রামের আহমদুর রহমানের দুই ছেলে মোহাম্মদ আবদুল গফুর ও আবদু ছবুরকে ৮.৫০ শতাংশ স্থাপনাবিহীন বাড়ি বিক্রয় করেন। সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের ১৭৮৯/২৫ নং দলিলে স্থাপনাবিহীন বাড়ি দেখিয়ে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা জমির বাজার মূল্য দেখানো হয়েছে। উক্ত বাজার মূল্যের সাড়ে ৯% হিসেবে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব মূল্য দেয়া হয়েছে ১০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অথচ উক্ত ৮.৫০ শতাংশ জমিতে রয়েছে ৭ তলা ভবন। ভবন রেজিষ্ট্রির সরকারি নিয়ম অনুসারে প্রতি বর্গফুট ভবনের বিক্রয় বাজার মূল্য ১২০০ টাকা।  প্রতি তলা ৩ হাজার ৪৫৬ বর্গফুটের হিসেবে ৭ তলা ভবনে ২৪ হাজার ১৯২ বর্গফুট ভবন। উক্ত ভবনের প্রতি বর্গফুট ১২০০ টাকা হিসেবে বাজার মূল্য হবে ২ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই মূল্যের সাথে জমির মৌজার মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ হিসেব করলে সর্ব মোট মূল্য হবে ৪ কোটি ৩০ হাজার টাকা। ৭ তলা ভবনের স্থাপনাসহ বাজার মূল্য ৪ কোটি ৩০ হাজার টাকার সাড়ে ৯% হিসেবে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব মূল্য দিতে হবে ৩৮ লাখ ২ হাজার ৮৫০ টাকা। রেজিষ্ট্রি কবলা মূলে দেখা গেছে ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫০ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমি ক্রয়ে গ্রহিতাগণ সরকারি কোষাগারে মাত্র রাজস্ব মূল্য দিয়েছেন ১০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

জমির ক্রেতা মোহাম্মদ আবদুল গফুর বলেন, জমি কেনার সময় ৭ তলা ভবনটি ছিল ঠিক। তবে পরিপূর্ণ নির্মাণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় ভবনের কথা ও ভবনের বাজার মূল্য দলিলে ধরা হয়নি। সেজন্য দলিলে স্থাপনাবিহীন বাড়ি উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে এই কাজ করিনি। ভবন নির্মাণে পৌর আইন লঙ্ঘন করে ৫ তলার ভবনের স্থলে ৭ তলা ভবন করার ব্যাপারে বলেন, এটা আমি করিনি । আমাকে যিনি ভবন বিক্রয় করেছেন উনিই ৭ তলা ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন।

দলিল লিখক মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন বলেন, দাতা-গ্রহীতা যা বলেন আমরা তা লিখি। ঘটনাস্থলে কী আছে তা জানি না। দলিল রেজিষ্ট্রিতে জমির বাজার মূল্যের ব্যাপারে দলিল লেখকের অঙ্গীকার থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

বাঁশখালী সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের সাব-রেজিষ্ট্রার রতন অধিকারী বলেন, জমি রেজিষ্ট্রির সময় দাতা-গ্রহীতা ও দলিল লেখক অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কারসাজি করলে আমার কিছু করার নেই। জমি রেজিষ্ট্রির সময় আমাদের ঘটনাস্থলে যাবার সুযোগ নেই।

বাঁশখালী পৌরসভার সচিব তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পৌর এলাকায় ৫ তলা ভবনের চেয়ে উঁচু তলার ভবন অনুমোদন দেয়ার নিয়ম নাই। ৭ তলা ভবন করেও তিনি পৌর আইন লঙ্ঘন করেছেন। পৌরসভায় ওই ভবনের বিষয়ে ফাইলটা খোঁজা হচ্ছে। তদন্ত করে  আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

নোভা

×