ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

রাজধানীর রাস্তায় ভাসমান জীবন, এক বেলার আহারেও অনিশ্চয়তা

এলেন বিশ্বাস, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ২০:০৩, ৩ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর রাস্তায় ভাসমান জীবন, এক বেলার আহারেও অনিশ্চয়তা

ছবিঃ জনকণ্ঠ

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরে ভাসমান অনেক মানুষকে দেখা যায় ফুটপাথে, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল কিংবা রেল স্টেশনে ঘুমাতে।

ঘরহীন এইসব মানুষের অনেকেরই থাকার কোনও আবাস না থাকায় তারা রাত কাটাতে বেছে নেয় এসব স্থানকে।আবার অনেকের ঘর থাকলেও জীবিকার প্রয়োজন কিংবা অন্য কোনও কারণে বাধ্য হন রাস্তাঘাটে এভাবে জীবন কাটাতে।

পথবাসী এইসব মানুষদের নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন, এদের জীবনমান উন্নত করতে দরকার বেশ কিছু সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ।

বিমানবন্দর এলাকার প্ল্যাটফর্মে দেখা যাচ্ছে ঘুমিয়ে আছেন মাথার ওপর ছাদহীন অনেক মানুষ।ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন আরো অনেকেই।

স্টেশনের ভেতরে এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছেন অনেক মানুষ। রাত যতই গভীর হচ্ছ তাদের সংখ্যাও বাড়ছে। আট নম্বর প্ল্যাটফর্মে দেখা গেল পাশাপাশি শুয়ে আছেন প্রায় দুই-আড়ইশ’ নারী-পুরুষ। অবশিষ্ট যেটুকু জায়গা খালি আছে সেখানেও ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে শোয়ার আয়োজন করছেন অনেকে।

ডেকেরোটরের দোকানে খানশামার কাজ করেন সবুর মিয়া। বাড়ি দিনাজপুরে। থাকার জায়গার অভাবে কয়েক বছর ধরে তিনি স্টেশনেই ঘুমান।

অশীতিপর খলিল হোসেনের জীবনের গল্প অন্যরকম। স্ত্রী মারা গেছেন অনেকদিন। থাকার মত একটি ঠিকানা থাকলেও ছেলে এবং ছেলেবউয়েরা চায় না বলে তাকেও আশ্রয় নিতে হয়েছে স্টেশনে।বয়সের ভারে এখন আর কোনও কাজ করতে পারেন না খলিল মিয়া। আবার ভিক্ষা করে খেতেও লজ্জা লাগে।

তিনি বলছেন “ছেলে মেয়েরা বাসা নিয়া থাকে। বড় বউ কয় খাইয়া যাইও, থাকনের জায়গা নাই। আজান দিলে গিয়া নামাজ পড়ে আসি। রাইতে এইখানে থাকি।”

“ পোলাপাইনের বাসায় মাঝেমধ্যে খাইয়া আসি, হেরা মাঝেমধ্যে টাকাপয়সা দিলে হোটেলে খাই। অনেকসময় হোটেলের লোকেরা কয় আইসা খাইয়া যাইয়েন, টেকা লাগবো না। আমি শরম লজ্জায় যাই না।”

পথবাসী বাবা মায়েরা নিজেদের মাথা গোঁজার জন্য নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করতে না পারলেও সচেতন হচ্ছেন ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যাপারে।

২৬ বছর ধরে ফুটপাতে রাত কাটাচ্ছেন এমন এক দম্পতিকে ঘুমতে দেখা গেল কারওয়ান বাজারের ঠিক উল্টোদিকের ফুটপাতে। তারা বলছেন “ যখন বৃষ্টি নামে তখন বিছনা উঠাইয়া পাশের দোকানের সামনে বসি, বৃষ্টি থামলে আবার শুই। কি করুম”।

একজন মহিলা হিসেবে রাতে পথে থাকতে ভয় লাগে কি-না জানতে চাইলে এই ছাব্বিশ বছর ধরে রাস্তায় রাত কাটানো এই নারী বলেন, “অহন আর ভয় কি? আমরার কি অইব? আমাদের কাছ থেইকা কি টেহা-পয়সা নিতে পারবো?”

এই দম্পতির ছেলেমেয়েরা থাকে গ্রামে। আর তারা রোজগার করে ভিক্ষা করেন।

আলীম

×