ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়া থিয়েটারের ‘কোর্টমার্শাল’ নাটকের ২০ বছর পূর্তি

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২২ নভেম্বর ২০১৬

বগুড়া থিয়েটারের ‘কোর্টমার্শাল’ নাটকের ২০ বছর পূর্তি

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতিক রাজধানী বগুড়ার অন্যতম প্রধান নাট্য সংগঠন বগুড়া থিয়েটার। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তৌফিক হাসান ময়নার নেতৃত্বে বিভিন্ন সময় নন্দিত সব নাট্য প্রযোজনা উপহার দিয়েছে দলটি। দলের বেশিরভাগ প্রযোজনাই দেশে-বিদেশে প্রশসিংত হয়েছে। দলের অন্যতম নন্দিত ও জনপ্রিয় প্রযোজনা ‘কোর্টমার্শাল’। ১৯৯৬ সালে নাটকটি মঞ্চে আসার পর ব্যাপক প্রশংসিত হয়। ‘কোর্টমার্শাল’ নাটকটি বগুড়াসহ সারাদেশে এ পর্যন্ত মোট ৩৭ মঞ্চায়ন করেছে। নাটকটি মঞ্চায়নের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বগুড়ার উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বগুড়া থিয়েটার। অনুষ্ঠানে নাটক মঞ্চায়ন ছাড়াও ছিল আলোচনা ও ‘কোর্টমার্শাল’ নাটকের কলাকুশলীদের সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বগুড়া থিয়েটারের সহ-সভাপতি বজলুর রশিদ রাজা। বক্তব্য রাখেনÑ বাংলাদেশ প্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক, বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ও নাটকটির নির্দেশক তৌফিক হাসান ময়না, কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল হান্নান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার সহ-সভাপতি আবদুল্লাহেল কাফী তারা, আতিকুর রহমান মিঠু, সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ সিদ্দিকী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম জিয়াউল হক বাবলা, সংশপ্তক থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান সুজন, বাঙময় আবৃত্তি চক্রের সাধারণ সম্পাদক মোঃ দৌলতুজ্জামান, নান্দনিক নাট্যদলের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ লাইনস স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদত আলম ঝুনু, বগুড়া থিয়েটারের সাংগঠনিক সম্পাদক কবির রহমান, সদস্য রুনা খান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের দফতর সম্পাদক কনক কুমার পাল অলক। নাটক মঞ্চায়ন শেষে নির্দেশক, নাট্যভিনেতা ও কলাকুশলীদের ক্রেস্ট প্রদান এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। ‘কোর্টমার্শাল’ নাটকটির মূল রচয়িতা স্বদেশ দীপক। এর অনুবাদ করেছেন এসএম সোলায়মান ও নির্দেশনা দিয়েছেন তৌফিক হাসান ময়না। ওইদিন নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এম জেড ইসলাম সবুজ, নুরুল আলম রুবেল, তাজুল ইসলাম মতিন, মাসউদ করিম, দ্বীন মোহাম্মদ দ্বীনু, কবির রহমান, জিএম জিয়ন, রেহেনা আমিন শিল্পী, বিধান রায়, ফারুক হোসেন, সবুজ চন্দ্র প্রমুখ। নাটকের নেপথ্যে আবহ সঙ্গীতে ছিলেন মাহবুবে সোবহানি বাপ্পী, আলোক প্রক্ষেপণে সাইফুল ইসলাম এবং পোশাক পরিকল্পনায় ছিলেন আবু সাইদ সিদ্দিকী। একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর অভ্যন্তরে বিদ্রোহের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে ‘কোর্টমার্শাল’ নাটকের কাহিনী এগিয়েছে। নাটকটি ব্যারাকের অভ্যন্তরে একটি বিদ্রোহের বিচারের গল্প। বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধ ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে ভাস্বর। শুধু কি আত্মত্যাগ? বাংলাদেশের জন্মকথায় লুকিয়ে আছে নারীর সম্ভ্রম হারানোর বেদনার গল্প। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর আমরা পেয়েছি নীলাকাশে লাল-সবুজ পতাকা ওড়ানোর অধিকার। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর যাঁদের আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়েছে দেশ তারা কি পেয়েছে তার সম্ভ্রম হারানোর মর্যাদা? ‘কোর্টমার্শাল’ নাটকের বিদ্রোহের অভ্যন্তর থেকে উঠে আসে এমন এক ক্ষতস্থান, যে ক্ষতস্থানে উন্মুক্ত হয় মুক্তিযুদ্ধে সব হারিয়ে কিছু না পাওয়ার বঞ্চনার বেদনার গল্প। বিচারিক আদালত বীরাঙ্গনা পুত্র আকবরের চোখের জল মুছে দিতে ব্যর্থ হয়। আকবরের অস্ফুট কান্নায় আর্তনাদের মতো শোনায়- ‘মুক্তিযুদ্ধ তার মাকে করেছে বীরাঙ্গনা, বীরাঙ্গনা মানে বেশ্যা।’ সে কান্নায় মিশে একাকার হয়ে যায় তার মায়ের বীরাঙ্গনা হওয়ার ইতিহাস ও তার প্রতি উর্ধতন কর্মকর্তাদের তীব্র কটাক্ষ ও মর্যাদাহানির অসম্মানের চিহ্ন। স্বাধীনতা অর্জনের ৪৫ বছর পরেও স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা আজও দেখি প্রতিনিয়ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিগৃহীত হওয়ার দৃশ্য। কোর্টমার্শাল নাটকের মঞ্চায়নে আমরা সেই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজে ফিরছি কবে এদেশে একজন বীরাঙ্গনা পাবে যথার্থ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদা? এমনি বক্তব্য নির্ভর নাটক ‘কোর্টমার্শাল’।
×