ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাল শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী আয়করমেলা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

কাল শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী আয়করমেলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’ এ সেøাগান নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে আয়কর মেলা। ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের কর দিতে উৎসাহী করতে প্রতিবারের মতো এবারও এ মেলার আয়োজন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে সেপ্টেম্বরে এ মেলা আয়োজন করা হলেও এবার আয়কর দিবস পিছিয়ে যাওয়ায় মেলাও পিছিয়েছে। আগামী ১ থেকে ৭ নবেম্বর সপ্তাহব্যাপী এ মেলা রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা শহরে অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় প্রথমবারের মতো রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিজস্ব ভবনে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ মেলার উদ্বোধন করবেন। এবারের মেলার নতুনত্ব হলো, অনলাইনে আয়কর জমা ও বিবরণী দাখিল। মেলায় এসে করদাতারা প্রথমবারের মতো অনলাইনে আয়কর জমা ও বিবরণী দাখিল করতে পারবেন। আর ‘সুখী স্বদেশ গড়তে ভাই, আয়করের বিকল্প নাই’ এ প্রতিপাদ্যে এবারের আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। গত কয়েক বছর সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হলেও এবার নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের মেলায় করদাতারা প্রথমবারের মতো অনলাইনে আয়কর বিবরণী দাখিলের সুযোগ পাচ্ছেন। আট বিভাগীয় শহরে সাত দিন হলেও জেলা পর্যায়ে মেলা হবে চার দিন। এছাড়া ২৯টি উপজেলায় মেলা হবে দুই দিন। ৫৮ উপজেলায় একদিন ভ্রাম্যমাণ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ২০১০ সাল থেকে আয়কর মেলা আয়োজন করছে এনবিআর। এটি হবে সপ্তম মেলা। এতদিন আয়কর মেলা হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করে আসছিল এনবিআর। এখন আগের তারিখ পরিবর্তন করে ৩০ নবেম্বর আয়কর দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেজন্য নবেম্বর মাসে আয়কর মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে আয়কর দিবস চালু করেছিল এনবিআর। এর দু’বছর পর শুরু হয় মেলা। প্রথমদিকে শুধু ঢাকায় করা হলেও করদাতাদের সাড়া পাওয়ায় দেশের অন্যান্য স্থানেও এ মেলার পরিসর বাড়িয়েছে এনবিআর। সে ধারাবাহিকতায় এখন উপজেলা পর্যায়েও আয়কর মেলা আয়োজনের চিন্তাভাবনা চলছে। এতদিন ঢাকায় অফিসার্স ক্লাবে আয়কর মেলা আয়োজন করা হতো। এবারই প্রথম আগারগাঁওয়ে নির্মিত এনবিআরের ভবনে অনুষ্ঠিত হবে। বরাবরের মতো এবারও মেলায় করদাতাদের সব ধরনের তথ্যসেবা দেয়া হবে। থাকবে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা, রিটার্ন দাখিল করা, ই-পেমেন্ট কর পরিশোধ ইত্যাদি। এছাড়া বরাবরের মতো এবারও বয়স্ক নাগরিক, প্রতিবন্ধী ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা বুথ থাকবে। কর পরিশোধের জন্য মেলায় থাকবে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের বুথ। এছাড়া আয়কর দিবস উপলক্ষে এবারও সেরা করদাতাদের পুরস্কৃত করা হবে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রতি বছর ৩০ অক্টোবর কর দিবস ঘোষণা করে ওই সময়ের মধ্যে আয়কর বিবরণী (রিটার্ন) দাখিলের বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রস্তাব করেন। পরে অবশ্য ৩০ অক্টোবরের পরিবর্তে ৩০ নবেম্বর কর দিবস পালনের ঘোষণা দেয় এনবিআর। তারই ধারাবাহিকতায় এবার নবেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারাদেশে আয়কর মেলা আয়োজন করছে এনবিআর। এতদিন কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য করদাতার জন্য রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু প্রতি বছরই করদাতাদের আবেদনে এ সময় বাড়ানো হয়। এ প্রসঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘কখনও কখনও রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ একাধিকবার বর্ধিত হয়। করদাতারা প্রতি বছরই সময় বাড়বে ধরে নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল থেকে বিরত থাকেন। এর ফলে কর নির্ধারণ ও রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে এতে রিটার্ন জমার সর্বশেষ সময়সীমা সংক্রান্ত আইনী বিধানটি গুরুত্ব হারাচ্ছে।’ পৃথিবীর অনেক দেশেই রিটার্ন জমার জন্য ‘অপরিবর্তনীয় ডেডলাইন’ থাকার উদাহরণ দিয়ে মুহিত বলেন, “আমি প্রস্তাব করছি যে, বাংলাদেশেও রিটার্ন দাখিলের জন্য একটি অপরিবর্তনীয় ডেডলাইন থাকবে; যা ‘কর দিবস’ নামে অভিহিত হবে। সাধারণভাবে ৩০ অক্টোবর হবে ‘কর দিবস’; তবে ৩০ অক্টোবর সরকারী ছুটির দিন হলে ‘কর দিবস’ হবে তার পরবর্তী কার্যদিবস।” পরে ৩০ অক্টোবরের পরিবর্তে ৩০ নবেম্বর ‘কর দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশে বর্তমানে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) নাগরিকের সংখ্যা ১৮ লাখ হলেও রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ১২ লাখ ৩৫ হাজার। গতবার মেলায় এক লাখ ৩৫ হাজার করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছিলেন। সব মিলিয়ে কর আদায় হয়েছিল দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকার মতো। মেলা উপলক্ষে ৩১ অক্টোবর সোমবার বিকেল ৩টায় মেলা প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে এনবিআর। সেখানে মেলার বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরা হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
×