ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জে সহিংসতার জন্য দায়ী কয়েক পুলিশের বেপরোয়া আচরণ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২১ অক্টোবর ২০১৬

হবিগঞ্জে সহিংসতার জন্য দায়ী কয়েক পুলিশের বেপরোয়া আচরণ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার আর স্কুল সরকারীকরণের দাবিতে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা সদরে আয়োজিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচী ব্যাপক বিক্ষোভে রূপান্তর এবং পরবর্তীতে গুলিবর্ষণে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার নেপথ্যে ছিল ছাত্র-শিক্ষকের সঙ্গে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার বেপরোয়া আচরণ ও একচেটিয়া ক্ষমতা প্রয়োগে তাদের অত্যুৎসাহী ভূমিকা। শুধু তাই নয়, পুলিশের ওপর নানা কারণে ক্ষিপ্ত স্থানীয় বহিরাগত ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে গুটিকয়েক মৌলবাদী সংগঠনের সুযোগ সন্ধানী কতিপয় নেতাকর্মী আর ব্যক্তি কর্তৃক পরিস্থিতি ঘোলাটে করার ভূমিকা ছিল বেশ লক্ষণীয়। বৃহস্পতিবার দিনভর ওই ঘটনা নিয়ে বাহুবল উপজেলা সদর ও তার আশপাশ এলাকা সরেজমিন অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামসুন্নাহার পারভীনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতিসহ নানাবিধ অভিযোগ এনে বুধবার দুপুরে বাহুবল দ্বীননাথ ইনস্টিটিউট মডেল হাই স্কুলের শত শত শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসহাক মিয়াসহ আরও কয়েক শিক্ষক এবং বহু অভিভাবক। একপর্যায়ে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও শেষে তারা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ সময় এসআই জিয়া এক ছাত্রকে চড়-থাপ্পড় মারলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। তখন স্থানীয় জরপ্রতিনিধি ও গণমান্য ব্যক্তিবর্গের চেষ্টায় তা প্রশমিত হলে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সড়কপথে স্কুলের উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট থানার ওসি (তদন্ত) বিশ্বজিৎ রায় ও এসআই দেলোয়ারসহ কতিপয় পুলিশ সদস্য শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধ সুশৃঙ্খল মিছিল বিনা কারণেই আকস্মিক আটকানোর চেষ্টা চালান। কিন্তু মিছিল এগোতে থাকলে এই ওসি শুধু ছেলে নয়, মেয়ে শিক্ষার্থীদেরও আঙ্গুল উঁচিয়ে অশ্লীল ভাষায় কটূক্তি এবং নানাভাবে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। একই সময় এই ওসি ও এসআই মিছিলে ব্যবহৃত মাইক আটকনোর চেষ্টা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং সংশ্লিষ্ট রিক্সায় থাকা দশম শ্রেণীর ছাত্র ফেরদৌস আহমেদ হৃদয়কে নামিয়ে বেধড়ক মারপিট শুরু করেন। এ দৃশ্য দেখে শিক্ষক অশোক আচার্য এগিয়ে তার কারণ জানতে চাইলে তাকেও শার্টের কলার ধরে টেনে-হিঁচড়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন ওসি বিশ্বজিৎ ও এসআই দেলোয়ার। একপর্যায়ে শিক্ষক অশোককেও থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় সহকর্মী শিক্ষক মহিউদ্দিন তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন। এ সময় ওসি-এসআই মিলে মহিউদ্দিনকেও জাপটে ধরেন এবং বেদম মারপিট করেন। এতেও পুলিশের এ দুই কর্মকর্তা থেমে থাকেননি, পরবর্তীতে প্রথমে থানা ক্যাম্পাসে এবং ভেতরে শিক্ষক অশোককে নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালসহ আবারও লাঠিপেটা করেন তারা। একপর্যায়ে ডিউটি অফিসারের রুমে নিয়ে এক মহিলা ইউপি মেম্বারের সামনেই অশোকের ওপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন। এ সময় ওই মেম্বার বাধা দিয়েও ওই শিক্ষককে রক্ষা করতে পারেননি।
×