ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

ঘোড়াও মানুষকে বুঝতে পারে

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৭ অক্টোবর ২০১৬

ঘোড়াও মানুষকে বুঝতে পারে

ঘোড়াও মানুষকে বুঝতে পারে এবং সে কি চায় সেটাও সে মানুষকে জানাতে পারে- এই তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীতে অনেক প্রাণী আছে যারা মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারে। অর্থাৎ তারা মানুষকে বুঝতে পারে এবং তারা কি বলছে সেটাও তারা মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করতে পারে। এই গ্রুপে এখন যোগ দিয়েছে ঘোড়াও। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বলছেন, এই প্রাণীটি মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারে। আর এই কাজটি তারা করে বিভিন্ন প্রতীকের দিকে ইশারা করার মাধ্যমে। এই পরীক্ষা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা কয়েকটি ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। নরওয়ের পশুরোগ বিষয়ক একটি ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ড. সেসিলি মেডেল এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলছেন, এই গবেষণায় ঘোড়ার কাছে কিভাবে জানতে চাওয়া যায় যে সে কম্বল পরতে চায় কিনা- তার একটি উপায় খুঁজে বের করা। নরওয়ের মতো নরডিক দেশগুলোতে সারা বছরেই ঘোড়ার গায়ে কম্বল পরানো থাকে। এই পরীক্ষার বিষয়ে বিজ্ঞানী ড. সেসিলি মেডেল বলেছেন, ‘ঘোড়া কিভাবে অনুধাবন করে সেটা বোঝার জন্য আমরা এই পরীক্ষাটি চালিয়েছি। দেখার চেষ্টা করেছি এই প্রাণীটির শেখার ক্ষমতা কি ধরনের, কি ধরনের জিনিস সে শিখতে পারে এবং ঘোড়া কিভাবে চিন্তা করে।’ এসব ঘোড়াকে বলা হয়েছে তারা যদি গায়ে কম্বল পরতে চায় তাহলে তাদের মুখে পরানো ঠুলি দিয়ে একটি বোর্ড স্পর্শ করে দেখাতে। কোন জিনিসের দিকে ইঙ্গিত করার মাধ্যমে আরও যেসব প্রাণী মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারে তাদের মধ্যে রয়েছে গরিলা, শিম্পাঞ্জি ও বানর জাতীয় প্রাণী এবং ডলফিন। ‘প্রায়শই মনে করা হয় যে ঘোড়া খুব বেশি বুদ্ধিমান প্রাণী নয়। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেছে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে তারা মানুষের সঙ্গে ভালভাবেই কমিউনিকেট করতে পারে এবং তারা কি চায় সেটা তারা বোঝাতে পারে,’ বলেন তিনি। এই গবেষণায় বিভিন্ন প্রজাতির ২৩টি ঘোড়ার আচরণ পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। প্রশিক্ষকের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পরেই এসব পরীক্ষা চালানো হয়। ঘোড়াগুলোকে প্রথমে শেখানো হয়েছে প্রাচীরের ওপর টাঙানো একটি বোর্ডে কিভাবে তাদের মুখে পরানো ঠুলির মাধ্যমে স্পর্শ করতে হবে। তারপর তাদের শেখানো হয়েছে বোর্ডে যেসব প্রতীক আছে সেগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার তফাতকে কিভাবে প্রকাশ করতে হবে। যেমন কম্বল পরতে চাইলে আড়াআড়িভাবে আঁকা রেখা স্পর্শ করা, কম্বল পরতে না চাইলে খাড়া করে আঁকা রেখা স্পর্শ করা আর কোনটাই করতে না চাইলে যে জায়গাটায় কোন রেখা আঁকা নেই সেই জায়গাটি স্পর্শ করা। আর সবশেষে শেখানো হয় নির্দিষ্ট কোন কাজের সঙ্গে বিশেষ একটি প্রতীককে বেছে নিতে। প্রশিক্ষণ শেষে দেখা গেছে, খুব বেশি ঠাণ্ডা বা গরম লাগলে ওই ঘোড়াগুলো সেটা আলাদা আলাদাভাবে বোঝাতে পারছে। অর্থাৎ তখন বলতে পারছে তারা কি গায়ে কম্বল পরতে চায় কি চায় না। গবেষকরা বলছেন, যখন খুব বৃষ্টি হচ্ছে বা জোরে বাতাস বইছে অথবা খুব ঠাণ্ডা পড়েছে- এ রকম আবহাওয়াতেই ঘোড়াগুলো কম্বল পরতে চেয়েছে। কিন্তু যখন খুব গরম পড়েছে তখন তারা কম্বল ছাড়াই বাইরে হেঁটে গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, নিজেদের প্রয়োজন ও ইচ্ছা অনুসারেই এসব ঘোড়া সিদ্ধান্ত নিতে পারছে এবং সেটা প্রকাশ করছে। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে মাত্র দুই সপ্তাহ। আর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। গবেষকরা আশা করছেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এখন ঘোড়াকে আরও অনেক প্রশ্ন করতে পারেন এবং এই গবেষণাকে পশু-প্রাণীর কল্যাণে ব্যবহার করা যেতে পারে। সূত্র : বিবিসি, ডয়েচ ভেলে
×