ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরেন্দ্র ভূমিতে আগাম টমেটো চাষের হিড়িক

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বরেন্দ্র ভূমিতে আগাম টমেটো চাষের হিড়িক

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ শীতকালীন টমেটো আবাদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। পাশাপাশি দুই জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলে টমেটো আবাদ হয়ে থাকে। তবে চাঁপাইয়ের পাঁচ উপজেলাতেই কমবেশি টমেটো আবাদ হলেও রাজশাহীর শুধু গোদাগাড়ী উপজেলায় বড় ধরনের টমেটো আবাদ হয়ে থাকে। দেশের সর্ববৃহৎ টমেটো উৎপাদনকারী এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে গোদাগাড়ীকে। চাঁপাই সদরের একেবারে লাগোয়া গোদাগাড়ীর পুরো বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়ে টমেটোর আবাদ করে চাষীরা। এবারও গোদাগাড়ী অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে টমেটোর চাষ বাড়ছে। প্রায় দশ বছর ধরে এই অঞ্চলে টমেটোর আবাদ হয়ে আসছে। একেবারে পেশাদার কৃষকদের পাশাপাশি স্কুল, কলেজ শিক্ষক, শিক্ষিত বেকার যুবক, ছাত্রসহ অন্তত ১০টি ভিন্ন পেশার মানুষ ঝুঁকেছে টমেটো আবাদে। তাই প্রতি বছর টমেটো আবাদের জমির পরিমাণ বাড়ছে। পাঁচ বছর আগে গোদাগাড়ী অঞ্চলে মাত্র চার হাজার ৮২৫ একরে টমেটোর আবাদ হতো। তা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ছয় হাজার একরের কাছাকাছি। সামনের শীত মৌসুমে এই অঞ্চলে টমেটো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৯ শ’ হেক্টর। এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা খুবই বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। যা দেশের পুরো চাহিদার প্রায় সিংহভাগ পূরণে সামর্থ্য হবে একটি উপজেলার উৎপাদিত টমেটো। পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরসহ পাঁচ উপজেলায় এবার আড়াই হাজার হেক্টরে টমেটোর আবাদ হবে। ১০ বছর আগেও এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১৪ শ’ ৩৯ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯০ হাজার মেট্রিক টনের কাছাকাছি হতে পারে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অভিমত। এদিকে দুই জেলার বরেন্দ্র ভূমিতে বীজতলা তৈরির প্রস্তুতি শেষ। অনেকে আগাম আবাদের আশায় অনেক আগেই বীজতলার সাথে সাথে চারা তৈরি হয়ে গেছে। আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহে বীজতলা থেকে তৈরি চারা উঠিয়ে জমিতে লাগিয়েছে। এদিকে প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই বহুজাতিকসহ দেশি নানান নামের কোম্পানি টমেটো বীজ নিয়ে কৃষকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। এই অঞ্চলে টমেটো বীজের সবচেয়ে বড় দোকান বা ডিলার এজেন্ট রয়েছে গোদাগাড়ী অঞ্চলে। গোদাগাড়ীর একেবারে পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। এ নদী পার হলেই ভারতের মুর্শিদাবাদ। তাই এ বছরও টমেটোর ভারতীয় বীজ চোরাকারবারীরা নিয়ে এসে গোদাগাড়ী বাজার ভরে তুলেছে। চোরাকারবারীরা ভারত থেকে আনা টমেটো বীজের অধিকাংশ নিম্নমানের ও দামে কম। চোরাইপথে আসা টমেটো বীজ কোন সময়ে উন্নতমানের হয় না। চোরাকারবারীরা অধিক মুনাফার আশায় ভারতীয় নিম্নমানের টমেটো বীজ এনে বড় প্রতারণা করে থাকে চাষীদের। এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে প্রতিবছর বহু চাষীর সর্বনাশ হয়ে থাকে। একইভাবে বহুজাতিক কোম্পানির অনেকেই নিম্নমানের বা মেয়াদ উত্তীর্ণ বীজ বিক্রি বা বিতরণ করে টমেটো চাষীদের বিপদে ফেলে। বিধায় গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সাথে পরামর্শ করে যেসব চাষী টমেটো বীজ ক্রয় করে থাকে তারা প্রতারণার ফাঁদ থেকে অনেক দূরে থেকে অধিক মুনাফা করে থাকে। অনেক সময় দেখা গেছে গাছ খুব ভাল ও ডালপালা মেলে সবুজ হয়েছে কিন্তু ফলন ভাল হয়নি। এসব টমেটো চাষীরা বীজ ক্রয়ের সময়ে প্রতারণার মধ্যে পড়াতে উৎপাদনে মার খেয়ে পুঁজিপাট্টা হারিয়েছে। প্রতি বছর চাষী প্রতারণার মুখোমুখি হয়ে নানান ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করায় এবার খুবই সচেতন হয়ে টমেটো চাষে মাঠে নেমেছে। বিশাল অঙ্কের বীজ কেনা বেচা হয়ে থাকে এই অঞ্চলে প্রতিবছর। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
×