ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাকারিয়া স্বপন

আমেরিকা ॥ ল্যান্ড অব ইমিগ্র্যান্টস?

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আমেরিকা ॥ ল্যান্ড অব ইমিগ্র্যান্টস?

আমেরিকাতে এখন নির্বাচনী হাওয়া বইছে। আগামী ৮ নবেম্বর (মঙ্গলবার) আমেরিকার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন তা নির্ধারিত হয়ে যাবে। আর চল্লিশ দিনের মতো সময় আছে হাতে। তাই যেখানেই যাই, মানুষ এটা নিয়ে কথা বলে। আমেরিকার রাজনীতি বাংলাদেশের মতো এত রমরমা না হলেও এর সঙ্গে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের আগ্রহের পরিমাণ অনেক। তার অবশ্য কারণও আছে। তাদের জীবন এতে জড়িয়ে আছে। যে জীবন পাখির নয়, মানুষের- সে জীবনে রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব থাকবেই। তবে এবারে তার পরিমাণ একটু বেশি। যদিও আমেরিকার ৫০টি রাজ্য মিলে তাদের গণতন্ত্র, তবে বেশিরভাগ রাজ্য ইতোমধ্যেই ডেমোক্র্যাট কিংবা রিপাবলিকানরা দখল করে নিয়েছে। ওই সব রাজ্যে ভোটের তেমন কোন হেরফের হয় না, রাজনৈতিক নির্বাচনী নমিনেশন থাকলে মূলত অনেক সুইং রাজ্যকে প্রভাবিত করেই ভোটে জিতে আসা যায়। তবে এবারে বিষয়টি বেশ গোলমেলে। হয়ত এই প্রথম আমেরিকাতে কিছু বেসিক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এখানে হিলারী কিংবা ট্রাম্প যতটা না বড় ইস্যু, তার থেকে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমেরিকার মূল ভিত্তিতে। আমেরিকার মানুষ বিশ্বাস করে, এটা হলো অভিবাসীদের মাটি। সারা পৃথিবী থেকে মানুষ এসে এই মাটিতে জীবন গড়েছে এবং এখন পর্যন্ত তারা অভিবাসীদের আসার পথ খোলা রেখেছে। এই দেশের মানুষ গর্ব করে বলে, এটা হলো ল্যান্ড অব ইমিগ্র্যান্টস। পুরো পৃথিবীর মানুষ এটাকে ইমিগ্র্যান্টদের তীর্থস্থান হিসেবে দেখে এবং এটাই এই দেশের মাটির সংজ্ঞা। তাই আমেরিকান বলতে মূলত আলাদা করে কিছু নেই। বাংলাদেশের অনেক মানুষ ‘মার্কিন’ বলে এই দেশকে গালি দেয়। কিন্তু আমি মোটামুটি নিশ্চিত তারা ঠিক জানে না, গালিটা কাকে দেয়া হলো? তারা হয়ত বুশকে গালি দেয়, ওবামাকে গালি দেয়, হিলারীকে দেয়, ট্রাম্পকে দেয়। কিন্তু অনেকেই হয়ত বুঝতে পারেন না, আমেরিকা মানে ওবামা নয়, আমেরিকা মানে বুশ নয়, আমেরিকা মানে হিলারী নয়, কিংবা ট্রাম্প নয়- আমেরিকা মানে হলো এই গ্রহের বিভিন্ন স্থান থেকে উঠে আসা মানুষ যারা এই মাটিতে বসত গড়েছে। এই মাটি বিশেষ কারও মাটি নয়, এ মাটি এই গ্রহের সবার মাটি। আমেরিকাতে যখন নাইন/ইলেভেন হামলা হয়, তখন এই দেশের কিছু রাজ্যে বেশ ঝামেলা হচ্ছিল। তখন গাড়িতে তেল নেয়ার সময় আমার এক বন্ধুকে একজন চিৎকার করে বলেছিল, তুমি তোমার দেশে ফিরে যাও। আমার বন্ধুটি চিৎকার করে তাকে উত্তর দিয়েছিল, তুমি আগে ফিরে যাও। সে লোকটি তখন ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, তুমি ইমিগ্র্যান্ট। আমার বন্ধুটি উত্তরে বলল, তুমিও ইমিগ্র্যান্ট। পার্থক্য শুধু এটুকু যে, তুমি এসেছিলে নৌকায় করে, আর আমি এসেছি বিমানে চড়ে। এটাই মূল আমেরিকা। আমেরিকার দর্শন এবং আমেরিকার মহত্ত্ব। আমেরিকার সেই মহত্ত্বে ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে। ॥ দুই ॥ একদিনের জন্য এরিজোনা রাজ্যের ফিনিক্স শহরে গিয়েছিলাম। সকালে গিয়ে পরের দিন সকালে ফিরে আসা। দীর্ঘ দিনের পুরনো কিছু বন্ধুর সঙ্গে দেখা, যারা ওই শহরের সঙ্গে জীবনকে গেঁথে ফেলেছে, ওই মাটিতে নিজেদের গাছের বিজ পুঁতে ফেলেছে। আমার বন্ধুটি স্থানীয়ভাবে খুব সক্রিয়। তার জীবনের বিশাল একটা সময় সে ব্যয় করে মানুষের কল্যাণে, মানুষের জন্য। বাংলাদেশী মানুষের কল্যাণ, মূল আমেরিকানদের কল্যাণ, স্কুলগুলোর কল্যাণ, বাংলা ভাষার কল্যাণ, শিশুদের স্কুল চালানো থেকে শুরু করে মানুষের জন্য কী করছে না সে! এলাকার যাবতীয় উন্নয়নে সে যুক্ত। একজন সুনাগরিক হিসেবে প্রতিটি মানুষের এমনটা করার কথা, যদিও আমরা বেশিরভাগ নিজেরটা নিয়েই ব্যস্ত থাকি; আর আশা করি অন্যরা আমাদের জন্য কাজগুলো করে দেবে। কিন্তু আমি যার কথা বলছি, সে আপাদমস্তক একজন সুনাগরিক। একজনকে সম্মাননা দিতে হবে। আমার বন্ধুটি তার জন্য একটি মানপত্র লিখেছে। বাংলায় সেটা টাইপ করে একটি দোকানে নিয়ে গেছে ছাপাতে। এমন নয় যে সে এই প্রথম এটা করছে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এই দোকান থেকে কাজ করাচ্ছে সে। দোকানির সঙ্গে তার সম্পর্ক এতটাই মধুর যে, তাদের দোকানের ভেতরে গিয়ে কম্পিউটারে কাজ করে, প্রিন্ট করে নিয়ে এসেছে। এবারও তাই করতে গেল। কাজের আউটপুট নিতে গিয়ে দেখল, কিছু টুকটাক ভুল হয়েছে। আমার বন্ধুটি বলল, এই ভুলগুলো কি একটু ঠিক করে দেয়া যাবে? দোকানি মুখ গম্ভীর করে বলল, না, হবে না। আমার বন্ধুটি বললো, এই ভুল জিনিস আমি একজনকে দেব কিভাবে? আমি খরচ দেব, তোমরা এটা ঠিক করে দাও। এবারে দোকানি বেশ ক্ষেপেই গেল, যা আগে কখনই হয়নি। সে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, আমি চাই না তুমি আর এই দোকানে আসো। আমার বন্ধুটি আকাশ থেকে পড়ল। এমন কঠিনভাবে কেউ তার ক্রেতার সঙ্গে আচরণ করতে পারে সেটা দেখেনি। একটু থতমত খেয়ে বন্ধুটি বলল, আমি কি এই সেবাটি পেতে পারি না? তুমি এভাবে কথা বলছ কেন? এবারে দোকানি আরও ক্ষেপে গিয়ে বলল, তুমি এটা নিয়ে যাও। আমি তোমাদের ব্যবসা চাই না। যেটা করেছ, তার জন্যই কোন টাকা দিতে হবে না। তুমি আর কখনও এই দোকানে আসবে না। আমার বন্ধুটি কী বলবে বুঝতে পারছিল না। এমন ব্যবহার আমেরিকাতে আগে দেখেনি কখনও। তাছাড়া এই দোকানটির সঙ্গে সে দীর্ঘ সময় ধরে লেনদেন করছে। এমন পরিচিত একটি দোকানি এমন খারাপ ব্যবহার করছে দেখে সে চুপচাপ চলে এলো। আমি আমার বন্ধুটিকে জিজ্ঞেস করলাম, দোকানি এমন করল কেন? বন্ধুটি চোখ বড় বড় করে বলল, ট্রাম্প ইফেক্ট! এই দেশের সাধারণ মানুষের ভেতর বিভেদ তৈরি হচ্ছে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ট্রাম্প জিতলে কী হবে? বন্ধুটি বলল, ট্রাম্প জিতুক আর নাই জিতুক, ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে যাচ্ছে। সাদাদের সঙ্গে আমাদের একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েই যাচ্ছে। এই দ্বন্দ্ব নিয়ে আমরা কিভাবে এখানে থাকব? ॥ তিন ॥ ফিনিক্স থেকে প্লেনে করে সান ফ্রান্সিসকো ফিরছিলাম। প্লেনে পাশের সিটে বসেছে এক তরুণী। আমেরিকান সাদা মেয়ে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি যদি কিছু মনে না কর তাহলে কি বলবে তুমি কোন্ এলাকার? মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল, আমি ওয়াইওমিং রাজ্যের। ওর হাসি এবং সহজ সরল ভঙ্গি দেখে আমি পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি ‘লিটল হাউজ অন দ্য প্রেইরী’ পড়েছ? মেয়েটি আরও হাসতে থাকল। বলল, অবশ্যই পড়েছি। সেটা তো আমার এলাকার গল্প। লরা ওয়াইল্ডারের লেখা বিখ্যাত বই। -তোমাদের ওখানে কি এখনও মানুষকে কাঠ কাটতে অনেক দূরে যেতে হয়? -হুম। আমাদের ওটা হলো প্রেইরী অঞ্চল। মানুষের সংখ্যা খুব কম। পাহাড় আর প্রকৃতি মিলে ছবির মতো সব কিছু। - হুম, দেখেছি আমি ইন্টারনেটে। যাইনি কখনও। তবে তোমাদের ইয়োলো স্টোন পার্কটি দেখার খুব ইচ্ছা। -ওহ, তুমি ওখানে এখনও যাওনি! পৃথিবীতে এমন সুন্দর জায়গা আর আছে নাকি? -সেই জন্যই যেতে চাই। ছবি দেখে আমার মাথা খারাপ হওয়ার যোগাড়। আমার কথা শুনে মেয়েটি তার এ্যাপল ফোন থেকে কিছু ছবি বের করে দেখিয়ে বলল, এই যে দেখ আমাদের বাড়ি। আমি আঙ্গুল দিয়ে টেনে টেনে কিছু ছবি দেখলাম। বিস্তীর্ণ প্রেইরী অঞ্চলের ভেতর একটি বাড়ি। আমি বললাম, তুমি ওখানেই বড় হয়েছ? - হুম। ওখানে জন্ম। এখনও ওখানেই থাকি। - কী কর তুমি? - বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। - কোন্ সাবজেক্ট? - ফিজিক্যাল হেলথ। - এটা আবার কী? - এটা পড়ে আমি ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট হব। - দারুণ তো! মানুষের কাজে লাগবে। এমন একটা বিষয় নিলে কেন? - আমি খেলাধুলা করতে পছন্দ করি। তখন থেকেই দেখছি মানুষের শরীরের অনেক সমস্যা থাকে। ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট হয়ে আমি তাদের জন্য কাজ করতে চাই। -তুমি ঘোড়া চালাতে পারো? - হুম পারি। আমার দাদার অনেক ঘোড়া আছে। আমরা দাদার বাড়ি বেড়াতে গেলে ওই পাহাড়ের নিচে বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘোড়া চালাই। তখন আমাকে ওই প্রেইরীর রাজকন্যা মনে হয়। বলেই মেয়েটি খিল খিল করে হাসতে থাকে। ওর মনটা যেন ওই প্রেইরী অঞ্চলের মতোই পরিষ্কার; ওর হাসি ওই ঝরনার পানির মতোই কলকল করছে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কোথাকার? -আমি বাংলাদেশের মানুষ। চেনো তুমি? - হুম চিনি। -তুমি সত্যি চেনো? খুবই ছোট একটি দেশ বাংলাদেশ। - আমি চিনি তো। -প্রেইরী অঞ্চলের মেয়ে হয়ে তুমি কিভাবে চেনো বাংলাদেশকে? -(নিজের গায়ের পোশাকটি দেখিয়ে বলল) তোমরা এটা বানাও। -হুম। বাংলাদেশের পোশাক সারা পৃথিবীর মানুষ এখন পরে। - আমিও পরি। - তা হলে তো তোমার একটু ধারণা আছেই। তুমি কি ভোটার? - হুম। আমার বয়স উনিশ হলো। এবারে ভোট দেব। - কাকে সমর্থন করছ তুমি? - বার্নি সেন্ডার্স। - কেন? - (হাসতে হাসতে) বার্নি মারিজুয়ানা বৈধ করে দেবে, তাই। -(হাসতে হাসতে) সত্যি? -হুম। সেই জন্যই তো তরুণ ভোটাররা তাকে এত পছন্দ করে। -নাহ, তুমি দুষ্টামি করছ। সত্যি করে বল, কেন তরুণ ভোটাররা বার্নিকে এত পছন্দ করে? -আমার মনে হয়, সে সৎ। আমাদের একজন সৎ প্রেসিডেন্ট দরকার। -হিলারী কিংবা ট্রাম্প? -হিলারীর তো নির্বাচনে দাঁড়ানোই ঠিক হয়নি। তার বিরুদ্ধে এফবিআই তদন্ত করছে। সে তো সৎ না। সে কেন নির্বাচন করবে? -মানুষ তো তাকে ভোট দিয়ে এই পর্যন্ত এনেছে। -কিন্তু তরুণ ভোটারদের ভোট সে একটুও পাবে না। আমরা তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাই না। সে রাষ্ট্রের অনেক কিছু ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছে। সে নির্বাচন করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। -আর ট্রাম্প? -সে তো একটা জোকার। -কিন্তু জোকার লোকটি তো আগামী প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারে? - হুম পারে। এটা তো গণতন্ত্র। বেশিরভাগ মানুষের ইচ্ছাতেই সব হবে। -আমেরিকাতে সে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। আমেরিকার মূল ভিত্তিকে সে নষ্ট করছে। ইমিগ্র্যান্টদের ভেতর বিভেদ ছড়াচ্ছে। -সেটাই। এই লোকগুলো কিভাবে যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়ে গেল! আমরা এদের সমর্থন করি না। এগুলো কারও জন্যই ভাল নয়। -তুমি শান্তিপ্রিয়? নাকি যুদ্ধ? -একমাত্র পাগল ছাড়া আর কে যুদ্ধ সমর্থন করে? -আমেরিকার রক্তে তো যুদ্ধ আছে। -হুম। আমাদের যুদ্ধ করেই এতদূর আসতে হয়েছে। কিন্তু সেগুলো আমাদের অস্তিত্বের জন্যই প্রয়োজন ছিল। এই যেমন ধর, আমাদের বাড়িতে অস্ত্র আছে। এটা ছাড়া আমরা নিরাপদ নই। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সবার সঙ্গে আমাদের যুদ্ধে জড়াতে হবে। -তুমি কি চাও এই দেশে আরও ইমিগ্র্যান্টস আসুক? -আসুক। সমস্যা কী? আমরা সবাই তো ইমিগ্র্যান্টস। আমরা নিজেরা এসে অন্যের জন্য তো দরজা বন্ধ করে দিতে পারি না! মেয়েটির সঙ্গে আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা হলো। এই সময়ের আমেরিকান ছেলেমেয়েরা কিভাবে চিন্তা করে, তাদের প্রাইয়োরিটি কি ইত্যাদি নানা বিষয়। তাদের জীবনের কষ্ট, তাদের দুই ভাই আর দুই বোনের সংসারে বাবা-মা কিভাবে তাদের লেখাপড়া করাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে ফি যোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে ইত্যাদি। আমার শুধু এটুকু মনে হলো, বর্তমান আমেরিকান রাজনীতিবিদদের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের দূরত্ব অনেক, অনেক। ॥ চার ॥ বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের ভেতর এক ধরনের ডুপলিসিটি আছে। এটা রাজনীতিবিদদের যেমন আছে, একইভাবে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের ভেতরও আছে। তারা দিন-রাত আমেরিকাকে গালি দেবে, আবার আমেরিকাতে কোন বাংলাদেশী ভাল করলে, তাকে নিয়ে গর্ব করবে। কেউ কেউ আবার আমেরিকার যাবতীয় সুবিধা নিয়ে আমেরিকাকে গালি দেবে। এই ডুপলিসিটির কারণে আমাদের দেশের মানুষ পৃথিবীর যেখানেই যায়, তাদের ভেতর সেটা রয়েই যায়। তারা না হতে পারে আমেরিকান, আবার না হতে পারে খাঁটি বাংলাদেশী। আপনি যদি খাঁটি বাংলাদেশী হন, তাহলে বাংলাদেশ প্রশ্নে আপনার কোনও আপোস হওয়ার সুযোগ নেই। আবার আপনি যদি খাঁটি আমেরিকান হন, তাহলে আমেরিকার স্বার্থে আপনার দ্বিধান্বিত হওয়ার সুযোগ নেই। এর বাইরে গেলেই আপনার ভেতর ডুপলিসিটি তৈরি হচ্ছে। এই ডুপলিসিটির কারণেই অসংখ্য বাংলাদেশী-আমেরিকানরা ভোট দিতে যান না। তারা ভাবেন, এতে তাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু এবারের ভোটটি হয়ত আগেরগুলোর মতো নয়। এবারে কিছু আসতে যেতে পারে। তাই এবারে তাদের এর সঙ্গে ইনভলব হতে হবে- নিজেদের স্বার্থে, তাদের ছেলেমেয়ের স্বার্থে, ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে। বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের জীবন আটকে আছে আমেরিকার মাটির সঙ্গে। অসংখ্য মানুষের সন্তান এখন এই মাটিতে থাকে, লেখাপড়া করে, চাকরি করে, জীবনকে বেঁধে ফেলেছে। তাই তাদের উচিত হবে, এভাবে অতিথির মতো এই দেশে না থেকে, এই দেশের রাজনীতির সঙ্গে, কর্মকা-ের সঙ্গে নিজেকে জড়ানোর সবচেয়ে ভাল সময় এখন। দেখা যাক, কিভাবে মোড় নেয় আগামী নবেম্বরের নির্বাচন। পুরো বিশ্বের অসংখ্য মানুষের মতো এর ফলাফল দেখার জন্য আমিও অপেক্ষা করছি। আমি দেখতে চাই, এটা কি এখনও ল্যান্ড অব ইমিগ্র্যান্টস থাকে, নাকি কিছু পাগল মানুষের পাগলামিতে ক্ষুদ্র স্বার্থের বেড়াজালে আটকে যায় এই মাটি! ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, সিলিকন ভ্যালি, যুক্তরাষ্ট্র লেখক : তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ুং@ঢ়ৎরুড়.পড়স
×