ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফিদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ!

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মাশরাফিদের সামনে  কঠিন চ্যালেঞ্জ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রস্তুতি ম্যাচ একটা সতর্কতা জানিয়ে দিল। আফগানিস্তান ক্রিকেট দল কাগজে-কলমে যতই নিচুসারির দল হোক, ভুল করলেই পা ফসকাবে সেই ইঙ্গিতটা ভালভাবেই পাওয়া গেছে। অতীতটাও এখন সামনে চলে আসছে। টি২০ ও ওয়ানডেতে একবার করে দেশের মাটিতেই আফগানদের বিরুদ্ধে হেরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আবারও সেই দলটির বিরুদ্ধে নামতে হবে বাংলাদেশকে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এবার। সব ম্যাচই দিবরাত্রির এবং দেশের হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার প্রথম ওয়ানডেতে সফরকারী আফগানদের মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। আফগানিস্তান দল এবার বাংলাদেশে আসার আগেই ভারতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছে। সেখানে সার্বিক প্রস্তুতির মধ্যে অনুশীলন ম্যাচও খেলেছে আর বাংলাদেশের ক্রিকেট, ক্রিকেটার এবং আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ ভালভাবেই পরিচিতি আছে তাদের। এরপরও দীর্ঘদিন শেষে বাংলাদেশে সফর, তাই কিছুটা ঝালিয়ে নেয়ার প্রয়োজন ছিল। বুধবার বিকেলে ঢাকায় এসে পৌঁছানোর পর আফগানরা বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুরে অনুশীলন করেছিল। তবে এরচেয়ে বড় প্র্যাকটিসটা তাদের হয়ে গেছে শুক্রবার ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে। লো-স্কোরিং ম্যাচে ৬৬ রানের বড় ব্যবধানে সফরকারীদের কাছে হেরে গেছে বিসিবি একাদশ। আফগান ব্যাটসম্যানরা যে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন এবং অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবী যেমন বোলিং করেছেন এতে পরিষ্কার হয়ে গেছে তার স্পিনটা বেশ ভোগাবে বাংলাদেশকে। এছাড়া লেগস্পিনার রশিদ খানও দারুণ বোলিং করেছেন। বিসিবির পক্ষে খেলেছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে স্কোয়াডে থাকা ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেন। এর মধ্যে শুধু তরুণ মোসাদ্দেকই কিছুটা আলো ছড়িয়েছেন। বাকিরা ব্যর্থ হয়েছেন। দীর্ঘ বিরতি বড় একটা আশঙ্কার নাম। বাংলাদেশের ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে যোগ দেয়া সাবেক শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান থিলন সামারাবীরা সেটাই বলছিলেন কাজ শুরুর পর থেকে। আরও অনেকেই সেটা বলছেন। সামারাবীরা এ বিষয়টি নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে জানি ৫/৬ মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকলে ভাল করাটা ব্যাটসম্যানদের জন্য কত বড় চ্যালেঞ্জ।’ বাংলাদেশ দল ৬ মাস আগে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে টি২০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেছে। এরপর শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট আসর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) শুধু প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়েছে ক্রিকেটাররা। আর ১১ মাস আগে গত বছর ১১ নবেম্বর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে খেলেছে সর্বশেষ ওয়ানডে। তাই এটা কাটিয়ে ওঠা বেশ চ্যালেঞ্জের হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। সেটারই ভয়াল ছাপ দেখা গেছে আফগানদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে। বিসিবি একাদশের হয়ে খেলা স্পিনাররা দুর্দান্ত সাফল্য পেলেও ব্যাটসম্যানদের ভরাডুবি হয়েছে। এটাই এখন নতুন করে চিন্তার বিষয়। মাঝে একদিনে এই ঘাটতি পুষিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা চালাতে হবে বাংলাদেশ দলকে। ইনজুরি কাটিয়ে ওঠা নির্ভরযোগ ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গী ইমরুল প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার রান পাচ্ছেন না অনেকদিন। এ বিষয়টিও ভাবার প্রয়োজন আছে। অবশ্য প্রথমবার ওয়ানডে দলে ঠাঁই করে নেয়া মোসাদ্দেক দারুণ ব্যাট করেছেন। ৭৬ রানের ইনিংস খেলে নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছেন। গত এক বছরে বাংলাদেশ দলের বোলিং বিভাগটা পুরোপুরি পেসারদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। টানা ভাল করেছেন আলআমিন হোসেন। কিন্তু তিনি ফিটনেস সমস্যায় এবার দলে জায়গা পাননি। দলে ফিরেছেন শফিউল ইসলাম। বোলিং এ্যাকশন শোধরানোর পরীক্ষা দিয়ে আসা তাসকিন আহমেদ ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন বলে তিনিও নেই। বাম কাঁধে অস্ত্রোপচার করানোর কারণে খেলতে পারছেন না অন্যতম নির্ভরতা মুস্তাফিজুর রহমান। দীর্ঘ ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন রুবেল হোসেন। এ কারণে এবার পেসারদের নিয়েও ভাল করাটা চ্যালেঞ্জের হবে মাশরাফি বাহিনীর জন্য। সেক্ষেত্রে স্পিনারদের ওপর আবারও কিছুটা নির্ভরতা থাকবে আফগান বধে। সেখানেও বোলিং ত্রুটির কারণে নেই অভিজ্ঞ আরাফাত সানী। ফিরেছেন তাইজুল ইসলাম। তার সঙ্গে আছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এসব নিয়েই এবার আফগানদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশ দলকে। নিজেদের মধ্যে অনুশীলনে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন মাশরাফিরা। তবে বিসিবি একাদশকে যখন ফতুল্লায় নাস্তানাবুদ করছে আফগানরা, তখনও মিরপুরে অনুশীলন করছেন মাশরাফিরা। যদিও সর্বশেষবার বাংলাদেশ সফরটা ভাল যায়নি আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের। গত মার্চে অনুষ্ঠিত টি২০ ফরমেটের এশিয়া কাপে চূড়ান্ত পর্বে খেলতে পারেনি দলটি। তাদের টেক্কা দিয়ে এশিয়া কাপের মূল পর্বে খেলে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে এরপরই ভারতে অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপের সুপার টেনে খেলে আফগানরা। এরপর নিয়মিতই বেশ ভাল ক্রিকেট খেলেছে দলটি। তাছাড়া বাংলাদেশের মাটিতেই তারা ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তবে গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেই প্রতিশোধটা চরমভাবে নিয়েছিল টাইগাররা। তাই অতীত পরিসংখ্যান অনুসারে ১-১ সমতা আছে মোকাবেলায়। এখন প্রস্তুতি ম্যাচটাও ভালভাবে জিতে তাই আফগানরাও বেশ উজ্জীবিত। সর্বশেষ কয়েকটি সিরিজে আফগানরা দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে। ব্যাক-টু-ব্যাক দুটি সিরিজেই টেস্ট খেলুড়ে দেশ জিম্বাবুইয়েকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে। এরপর স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১-০ ব্যবধানে জয় ও আয়ারল্যান্ড সফরে ২-২ সমতায় শেষ করেছে তারা। তাই দারুণ উজ্জীবিত দল আফগানরা। এছাড়া ২০১৪ সালে টি২০ বিশ্বকাপের প্রাথমিক রাউন্ডেও বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিল তারা। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ বেশ চেনা প্রতিপক্ষ তাদের। এ কারণে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইটা সহজ হবে না।
×