ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরাঞ্চল থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

 উত্তরাঞ্চল থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ

ফিরোজ মান্না ॥ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে বিদেশে কর্মী নিয়োগের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়ার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। উন্নত প্রশিক্ষণ পেলে তারা বিদেশে ভাল বেতনের চাকরি নিয়ে যেতে পারবেন। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের মানুষের সচ্ছলতা আনতে মন্ত্রণালয় এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উত্তরাঞ্চলের সব জেলায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। গত মাসের শুরুর দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূুরুল ইসলাম বিএসসি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিদর্শন করেছেন। তিনি কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ডিসিদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী তদারকিরও নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেছেন, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে নারী ও পুরুষ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পর তাদের পর্যায়ক্রমে বিদেশে চাকরি দেয়া হবে। অনগ্রসর অঞ্চল হিসেবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উত্তরাঞ্চল থেকে ৯০ হাজারের বেশি নারী-পুরুষ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ পেয়ে তারা গৃহস্থালি কাজ থেকে শুরু করে গার্মেন্টসকর্মী হিসেবে বিদেশে চাকরি নিতে পারেন। এটা বাস্তবায়ন হলে কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীসহ এ অঞ্চলের মানুষ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শামিল হতে পারবেন। জাতীয় অর্থনীতিতে তারা অবদান রাখবেন। ২০১৬ সালে কুড়িগ্রাম থেকে ৭০ হাজার যুব ও যুব মহিলা বিদেশে চাকরি নিতে সক্ষমতা অর্জন করবেন। কুড়িগ্রামের কৃষ্ণপুরে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অধুনালুপ্ত ছিটমহল থেকে জর্দানগামী যুব মহিলা গার্মেন্টসকর্মীদের জন্যও একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে যুব ও যুব মহিলারা নিজেরা যেমন আর্থিকভাবে সচ্ছল হবেন, একই সঙ্গে তাদের সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদাও বৃদ্ধি পাবে। যুব মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিনা খরচে জর্দানে পাঠানো হবে। প্রতি দুই মাসে ৪০ জন করে যুব মহিলাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে বিদেশে পাঠানো হবে। একই ভাবে ২০১৬ সালে নীলফামারী জেলার ২০ হাজার যুব ও যুব মহিলা বিদেশে যেতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে অনগ্রসর জেলাগুলোতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাড়ানো হবে, যাতে সারাদেশে সমানভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়। সূত্র জানিয়েছে, জনশক্তির বাজার তৈরি করতে নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। কর্মীদের বিদেশী ভাষায় পারদর্শিতা, প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক এ্যাক্রেডিটেশন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এ্যাফিলিয়েশন করা, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদার আলোকে বিদ্যমান কোর্স কারিকুলামকে নিয়মিত আপগ্রেড করা, বেসরকারী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত প্রশিক্ষণের মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রাখার জন্য নিয়মিতভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা নিয়েছে মন্ত্রণালয়। কর্মীরা দক্ষতা অর্জন করলে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকেই কর্মী নেবে। তখন আর জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে কোন বেগ পেতে হবে না। এদিকে, নারী কর্মীদের বিদেশে সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছে। কারণ বিভিন্ন সময় নারী কর্মীরা মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসছেন। এমন ঘটনা যাতে না হয় তার জন্য নারী কর্মীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স ফর মাইগ্রেশনস রাইটস বাংলাদেশ এমন দাবিতে ইতোমধ্যে সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে। এ সংগঠনটি বিদেশে যেসব নারী কর্মী গেছে এবং যাবেন তাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বিশেষ করে এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যারা কর্মী হিসেবে যাচ্ছেন তাদের অধিকার রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নজর রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। অভিবাসীদের নিরাপত্তা রক্ষায় সরকার নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। কর্মীরা এখন আর আগের মতো প্রতারণার শিকার হচ্ছেন না। সরকার জনশক্তি রফতানিকারকদের দক্ষতা, প্রশিক্ষণের জন্য গাইডলাইন তৈরি করেছে। এ গাইডলাইনের বাইরে কারও কিছু করার সুযোগ নেই। বিশেষ করে মহিলা কর্মীদের বিদেশে সুরক্ষা দেয়ার বেলায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার সুপারিশ নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। এ গাইডলাইনে নারী কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এটা কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম সামসুন্নাহার বলেছেন, গৃহকর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ২১ দিনের পরিবর্তে ৪২ দিন করা হযেছে। এতে মহিলা কর্মীরা অনেকাংশে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠছে। একই সঙ্গে তারা নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন। এখন বেশিরভাগ কর্মী নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই বিধান করতে সক্ষম হচ্ছেন। এখন আর আগের মতো অভিযোগ আসে না। যেসব অভিযোগ আসছে তার ৯০ শতাংশ বিএমইটিই সমাধান করে দিচ্ছে। বিএমইটি আশা করছে, বিভিন্ন সামাজিক ও সরকারী সংস্থার সহযোগিতা বাড়লে বিদেশে নারী কর্মীরা ভাল থাকবেন।
×