ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পীর ক্যানভাসে মূর্ত গ্রেট মোহাম্মদ আলী

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

শিল্পীর ক্যানভাসে মূর্ত গ্রেট মোহাম্মদ আলী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিপক্ষের চোয়াল বরাবর আঘাত হেনেছে গ্রেট বক্সারের মুষ্টিবদ্ধ হাতটি। মোহাম্মদ আলীর সজোরে চালানো ঘুষিতে ধরাশায়ী সেই প্রতিপক্ষ। পরের ছবিতে দৃশ্যমান রিংয়ের লড়াইয়ে বিজয়ী হওয়ার অনবদ্য অভিব্যক্তি। এভাবেই শিল্পীর ক্যানভাসে মূর্ত হয়েছেন গ্রেট বক্সার মোহাম্মদ আলী। আর চিত্রভাষ্যে এই কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধাকে মেলে ধরেছেন চিত্রশিল্পী প্রশান্ত কর্মকার। রং ও রেখার আশ্রয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই বক্সারের তারুণ্য থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত উপস্থাপন করেছেন শিল্পী। সেসব ছবি নিয়ে সেজেছে গুলশান এ্যাভিনিউয়ের রেডিয়াস সেন্টারের বে গ্যালারি। এখানে চলছে এই উদীয়মান চিত্রকরের আঁকা ৩২টি চিত্রকর্ম নিয়ে কুড়িতম একক প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘মোহাম্মদ আলী : দ্য লিজেন্ড লাইভস অন।’ বক্সিং রিংয়ে মোহাম্মদ আলীর রাজকীয় অভিব্যক্তিকে ক্যানভাসে মূর্ত করেছেন শিল্পী। দুনিয়া কাঁপানো এই বক্সার বক্সিং রিংয়ে যেমন প্রজাপতির মতো উড়ে গিয়ে মৌমাছির মতো করে প্রতিপক্ষকে হুল ফোটাতেনÑ সেসব অনন্য ভঙ্গিমা উদ্ভাসিত হয়েছে ছবিতে। একটি প্রতিকৃতিতে লাল রঙের জমিনের ভেতর থেকে আবির্ভূত হয়েছেন এই গ্রেট বক্সার। বিজয়ী হওয়ার বাসনায় চোখে-মুখে দৃশ্যমান দারুণ ক্ষিপ্রতা। আরেক ছবিতে চিরজীবন তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে সবুজ রঙের আশ্রয়ে মেলে ধরা হয়েছে মোহাম্মদ আলীর মুখাবয়ব। রিংয়ের দড়িতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন আলী; জয়ের অদম্য বাসনায় প্রতিপক্ষকে আঘাত করছেন; ধরাশায়ী প্রতিপক্ষের সামনে পাহাড়ের মতো অবিচল ভঙ্গিমায় কিংবা মুষ্টিবদ্ধ হাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আঘাতেরÑ এমন নানা অভিব্যক্তি উপস্থাপিত হয়েছে ছবিগুলোয়। শুক্রবার গ্যালারিতে ঘুরে ঘুরে ছবি দেখছিলেন এক শিল্পরসিক। কথা বলে জানা যায়, ওই দর্শনার্থীর নাম ফারহানা ইউসুফ। কথা প্রসঙ্গে এই শিল্পপ্রেমী বলেন, ঈদের রকমারি বিনোদনের মাঝে শিল্পকর্ম দেখে মন রাঙাতে এসেছি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখলাম। বেশ ভাল লাগল। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে মোহাম্মদ আলীকে কখনও সরাসরি দেখার সুযোগ পাইনি। ছবির ভেতর দিয়ে মানুষটিকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করছি। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে যেন মোহাম্মদ আলীকে সরাসরি দেখছি বক্সিং রিংয়ে। কিংবদন্তি এই মুষ্টিযোদ্ধার বক্সিং রিংয়ের অভিব্যক্তিগুলো অদ্ভুত সুন্দর করে আঁকা হয়েছে। একই সঙ্গে রিংয়ে তার রাজকীয় চলন-বলনও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সমান দক্ষতায়। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধ বলেন, পৃথিবীজুড়ে বিশ্বখ্যাত লোকের অভাব নেই। তবে মোহাম্মদ আলীকে যেন মনে হয়েছে আমাদেরই মানুষ। এ দেশকে তিনি ভালবেসেছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ সফরে এলে তৎকালীন সরকার তাকে এ দেশের নাগরিকত্ব দিয়েছিল। ওই সফরে মুগ্ধ হয়ে বক্সিং রিংয়ের এই রাজা পরবর্তীতে বলেছিলেন, আমেরিকা যদি কোনদিন আমাকে প্রত্যাখ্যান করে আমি আবাস গড়ব বাংলাদেশে। এ দেশে মানুষের আতিথেয়তায় আপ্লুত হয়ে অন্যদের বলেছিলেন, তোমরা যদি সোনার মানুষ দেখতে চাও তবে বাংলাদেশে যাও। এভাবেই তিনি ধারণ করেছিলেন আমাদের এই সবুজ-শ্যামল বাংলাকে। আর শুধু বক্সিংয়ের মানবতার বিচারেও এক উদার মানুষের নাম মোহাম্মদ আলী। মার্কিনীদের চাপিয়ে দেয়া ভিয়েতনাম যুদ্ধের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামেও মার্কিন নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন এই গ্রেট বক্সার। পপ আর্ট ঢঙে প্রদর্শনীর অধিকাংশ ছবিই আঁকা হয়েছে উজ্জ্বল রংয়ের ব্যবহারে। এ্যাক্রিলিক ও মিশ্র মাধ্যমের আশ্রয়ে ক্যানভাস ও পেপারে সৃজিত হয়েছে ছবিগুলো। ৩০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া দুই মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×