ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী দমনে ঐক্য

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গী দমনে ঐক্য

বিশ্বজুড়ে জঙ্গীবাদের যে নারকীয়তা চলছে, তা দমনে নানা কৌশল প্রয়োগ যে জরুরী, তা সংশ্লিষ্টরা উপলব্ধি করছেন। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণই সফলতা নিয়ে আসতে পারে। জঙ্গীরা তাদের সশস্ত্র হামলা চালানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে আসছে। এদের হামলা সম্পর্কে পূর্বাভাস সহজে মিলছে না। আগাম তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রও হচ্ছে না সম্প্রসারিত। বিশ্বের ঝানু ঝানু বিশেষজ্ঞরা মাথা ঘামিয়েও জঙ্গী দমনের কলাকৌশল আবিষ্কারে অগ্রগতি ঘটাতে পারছে না। নির্ভুলভাবে অসুখের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা ছাড়া রোগ নিরাময় যে সহজসাধ্য নয়, তা সবার জানা। অনুরূপ জঙ্গীদের স্বরূপ, আস্তানা, অর্থ ও অস্ত্রের উৎস এবং দেশী-বিদেশী সংযোগের বিষয়টি পরিষ্কার নয়। অনুসন্ধান চালিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ থেমে নেই যদিও। কিন্তু এদের সাকিন, মৌজা, ঠিকুজির সন্ধান পাওয়াও হয়ে আছে দুরূহ। তথাপি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে জঙ্গী নির্মূলে। কিন্তু জঙ্গীরা কোথায় থাকে, কে তাদের আশ্রয়দাতা, কে তাদের রসদ যোগানদাতা; সে সবের হদিস পাওয়া গেছে, এমনটা নয়। গোপনীয়তা জঙ্গীরা সব সময় অবলম্বন করে আসছে। যে কারণে তারা রয়ে যায় অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের কার্যক্রম, চলাফেরায় যতই গোপনীয়তা থাকুক না কেন, তা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা খুব পারদর্শী হয়ে উঠতে পেরেছে, তা নয়। কারণ, জঙ্গীরা মিশে আছে সমাজের নানা স্তরে। এরা কারও না কারও সন্তান, আত্মীয় এবং বয়সে তরুণ। অনেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্র। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষকই জঙ্গীদের মদদদাতা এবং জঙ্গী মানসিকতা গঠনে সহায়ক। এদের হদিস ক্রমশ মিলছে। জঙ্গীবাদকে ‘না’ বলা যত সহজ, জঙ্গী নির্মূল তার চেয়েও অনেকগুণ কঠিন। এরা মিশে আছে মানুষের মাঝে ছদ্মাবরণে। তাই পৃথকভাবে চিহ্নিত করা সহজ নয়। সন্ত্রাসী জঙ্গীদের শিকড় যে অনেক গভীরে প্রোথিত, তাই তাদের উৎসমূলের সন্ধান পাওয়া পরিশ্রমসাধ্য অবশ্য। জঙ্গী হামলা চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া বা আত্মহনন স্পষ্ট করে এরা যথেষ্ট প্রশিক্ষিত এবং জীবনের প্রতি কোন মায়ামমতাও নেই। এরা নাম অদল-বদলের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা করে থাকে। এদের মূল পিতৃ সংগঠন হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। পাকিস্তানকেন্দ্রিক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটি এই দেশকে অস্থিতিশীলতার আবরণে ঢেকে ফেলতে সদা তৎপর। এদের একটা অংশ উচ্চ শিক্ষিত; অন্যরা মাদ্রাসা ও কলেজ শিক্ষায় শিক্ষিত। ইহজাগতিকতাকে এড়িয়ে পারলৌকিকতায় আকৃষ্ট করার মন্ত্র এদের মস্তিষ্কে এমনভাবে গেঁথে দেয়া হয় যে, এরা ধর্মান্ধতায় আবদ্ধ হয়ে মানুষ হত্যাকেই স্বর্গপ্রাপ্তি মনে করে। ঘরবাড়ি, স্বজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে এরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে জঙ্গী হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করে নির্বিবাদে মানুষ হত্যা করছে। মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম যখন বিশ্বজুড়ে নিন্দিত, ঘৃণিত, সমালোচিত হচ্ছে তখন জঙ্গীপথের আকর্ষণ তাদের টেনে নিচ্ছে। এই পথ থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা জরুরী। জঙ্গী তৎপরতা প্রতিহত করতে দরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গীকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তিকে জঙ্গী তৎপরতা প্রতিরোধে কাজে লাগাতে পারে। ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়তে পারলে যে কোন অশুভ শক্তিকেই প্রতিহত করা সম্ভব। ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার সারাদেশে সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী কমিটিতে সকল দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিয়ে গড়ার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা প্রশাসকদের এই নির্দেশ প্রদান করে বলেছেন, এই কমিটি কোন দলের অঙ্গ সংগঠন হবে না; স্থানীয় সরকার, সিটি কর্পোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটিস, ইউনিয়ন পরিষদÑ সবাই এতে অন্তর্ভুক্ত হবে। বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও এতে থাকবেন। তবে এটা কোন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম নয় তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত কমিটি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে করা হবে। ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের আগুনসন্ত্রাস প্রতিরোধে যে সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী কমিটি হয়েছিল বিভিন্ন স্তরে, সেগুলোও পাশাপাশি সচল করা হচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী বলা যায়। কারণ জঙ্গীবাদ মোকাবেলার জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরী। জনপ্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ এলাকার জনগণকে নিয়ে জঙ্গী নির্মূলে এগিয়ে এলে পরিস্থিতি বদলে যেতে বাধ্য। জনগণও চায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে এবং জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতা রোধে সচেষ্ট হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ওপর নির্ভর করছে জঙ্গী দমনের ক্ষেত্রে সফল হওয়ার প্রক্রিয়া।
×