ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে শুরু হয়েছে সিরিয়াল কিলিং ॥ খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৭ জুন ২০১৬

দেশে শুরু হয়েছে সিরিয়াল কিলিং ॥ খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন ও নাটোরে খ্রীস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ হত্যাকা-ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন, দেশে শুরু হয়েছে সিরিয়াল কিলিং। একের পর এক হত্যাকা- হলেও সরকার নির্বিকার। দেশে একদলীয় দুঃশাসনের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার একটি হচ্ছে এই জঙ্গী তৎপরতা। সোমবার গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় দেশে যেন প্রতিমুহূর্তে গোরস্থানের পরিসরই বিস্তৃত হচ্ছে। দেশবাসী এক নিরাপত্তাহীন অন্ধকার গুহায় বসবাস করছে। চারদিকে ভয়, শঙ্কা আর আতঙ্ক নিয়েই মানুষ অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে দলমত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার রাজনৈতিক অন্ধকারে পা রেখেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন কাউকে তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে বারবার হত্যাকা- ঘটানোর পরও এক নির্বিকার উদাসীনতা দেখাচ্ছে সরকার। বর্বরোচিত ঘটনাগুলোর রহস্য কী, জঙ্গীরা কে কী বার্তা দিতে চাইছে তা নিয়ে জনগণের মধ্যে এক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, সরকার জঙ্গীদের তৎপরতা দমন করার পরিবর্তে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপিয়েও দায়িত্বের সমাপ্তি ঘটালেও নিজেরা তা থেকে মুক্ত হতে পারছে না। তাই প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতারের পরিবর্তে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই সুযোগে জঙ্গীরা আরও বেশি শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। জঙ্গীরা প্রকাশ্য দিবালোকে নির্ভয়ে হত্যাকা- সংঘটিত করছে। অথচ সরকার এগুলোকে আমলেই নিচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বিদেশী হত্যা থেকে শুরু করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন ও তাদের ধর্মগুরু, মসজিদের ঈমাম, শিয়া মুসলমান, পীর ও পীরের শিষ্য কেউই ঘাতকদের প্রকাশ্য অস্ত্রের আঘাত থেকে রেহাই পায়নি। জনপদের পর জনপদে এখন শোকের মাতম উঠেছে। এই রক্তনদী আর কতদূর বইবে তা কেউ জানে না। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ক্ষমতা বজায় রাখতে গিয়ে নিজেই রক্তাক্ত হানাহানির পথ বেছে নিয়েছে। যার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ দেখেছি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে। সরকারের রাজনৈতিক আচরণ এবং জঙ্গীদের আচরণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এই দু’পক্ষই বিরোধী চিন্তা ও মত সহ্য করে না। গণতন্ত্রে মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকারটুকুও এরা সৃশংস কায়দায় থেঁতলে দিতে কুণ্ঠিত হয় না। অমানবিক বর্বরতাই এদের দিন রাতের কর্মসূচী। মানুষের অধিকারহীন এই দেশ যেন এখন মৃত্যুনগরীতে পরিণত হয়েছে। মানুষকে প্রতিনিয়ত জীবনাশঙ্কার ভয়াল পরিবেশে বসবাস করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তিনি অবিলম্বে মাহমুদা খাতুন এবং সুনীল গোমেজের হত্যাকারী দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান। একইসঙ্গে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বাংলাদেশী শ্রমিক নিতে সৌদির প্রতি আহ্বান খালেদা জিয়ার ॥ এদিকে সোমবার অপর এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ থেকে দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক নিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সূদীর্ঘকাল থেকেই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়, আন্তরিকতাপূর্ণ। এই সম্পর্ক ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্মবিশ্বাস ও মূল্যবোধের দ্বারা উদীপ্ত। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার শাসনামলে সৌদি আরবের সঙ্গে বিশেষ কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। তার গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই তখন থেকে সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। এই সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় বিগত বিএনপি সরকার সৌদি সরকারের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বসূলভ সম্পর্ক আরও জোরদার করে। জিয়াউর রহমানের আমলেই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে ব্যাপকহারে বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রবেশ শুরু হয়। বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে জনশক্তি রফতানিতে নিম্নমুখী প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রতি বছরেই রেমিটেন্সের আয় কমে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সৌদি শ্রমবাজারে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ-সৌদি আরব দুই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ যারা নিজেদের নানামুখী সঙ্কট উত্তরণে বদ্ধপরিকর এবং শিক্ষা ও কারিগরি খাতসহ নানাবিধ উন্নয়ন অগ্রগতির অংশীদার। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বিএনপি আশা প্রকাশ করে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগে সৌদি কর্তৃপক্ষ সকল বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করবে। তাতে বাংলাদেশী দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকরা সৌদি আরবের শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। ফলে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছে। সরকারের অপকর্মের প্রতিশোধ নেবে জনগণ ॥ এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব দাবি করেছেন জনগণই ক্ষমতাসীনদের প্রতিটি অপকর্মের প্রতিশোধ নেবে। দেশজুড়ে একের পর এক হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটলেও কোন তদন্ত ছাড়াই সরকার বলে দিচ্ছে, এগুলো বিরোধী দলের কাজ। অথচ জনগণ বিশ্বাস করে, বিরোধী দলকে দোষারোপ করতেই এসব হত্যাকা- ঘটাচ্ছে সরকার। তাই জনগণ ক্ষমতাসীনদের প্রতিটি অপকর্মের প্রতিশোধ নেবে। সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান মুক্তি পরিষদ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন। এদিকে অপর এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট লুটপাটের বাজেট। উন্নয়নের নামে লুটপাটের বাজেট করা হয়েছে। জনগণের পকেট মারার মধ্য দিয়ে লুটপাট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুলিশের এসপির স্ত্রী সকালে আর রাতে সামরিক বাহিনীর এক সদস্যের মা খুন হয়েছেন। যারা জনগণের, দেশের নিরাপত্তা দেবে তাদেরই কোন নিরাপত্তা নেই। তারপরও নাকি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল। পুলিশ এবং সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দল কোন সভা সমাবেশ করতে পারে না। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার মুক্তি দাবিতে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
×