স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতির মনন গড়তে দেশের ৬৪ জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে সরকারী গণগ্রন্থাগার। এসব সরকারী গণগ্রন্থাগারে চালু হয়েছে চিত্রকলা বিষয়ক বইয়ের বিশেষ কর্নার। ঠাঁই পেয়েছে দেশের শিল্পচর্চায় নিবেদিত প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত শিল্প বিষয়ক পাঠ্যসম্ভার। এসব গ্রন্থে বরেণ্য শিল্পীদের কাজের প্রতিলিপি যেমন রয়েছে, তেমনি আছে তাঁদের সংক্ষিপ্ত জীবনী। রয়েছে তরুণ শিল্পীদের কর্মধারা। এছাড়াও আছে শিল্পচর্চা বিষয়ক বইও। গত দুই মাস ধরে দেশের ৭০টি জেলা ও উপজেলা গণগ্রন্থাগারে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন উপহার দিয়েছে তাদের শিল্প বিষয়ক পাঠ্যসম্ভারগুলো। ২৩৭টি বিষয়ের ৫৮৪টি চিত্রকলা সম্পর্কিত বই, ক্যাটালগ ও ফোলিও মিলিয়ে মোট ৩৯ হাজার ৪৮০টি পাঠ্যসম্ভার উপহার দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই কাজে সহযোগিতা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন গণগ্রন্থাগার অধিদফতর।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব আক্্তারী মমতাজ ও গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে পুরো প্রকল্পের বিষয়ে জানান ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে কিভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গণগ্রন্থাগারগুলোতে পাঠ্যসম্ভাব পাঠানো সংক্রান্ত আট মিনিটের তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সংস্কৃতিচর্চা ছাড়া আলোকিত মানুষ গড়া সম্ভব নয়। আমরা যদি আলোকিত মানুষ গড়তে না পারি তাহলে অন্ধকারের শক্তি বার বার আঘাত হানতেই থাকবে এবং আঘাত হানছেও। কারণ এরা ধর্মও বোঝে না সংস্কৃতিও বোঝে না। কিন্তু ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে। এজন্য সংস্কৃতির আশ্রয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। বইকে যত বেশি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া যাবে তত বেশি আমাদের চারপাশের অন্ধকারের শক্তি কমে আসবে। সরকারী এবং বেসরকারীভাবে যত বেশি উদ্যোগ নেয়া হবে সাধারণ মানুষও তত বেশি আমাদের সঙ্গী হবে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগের ফলে বিপুলসংখ্যক শিল্পবিষয়ক পাঠ্যসম্পদ সারাদেশের গণগ্রন্থাগারগুলোতে থাকায় সব ধরনের মানুষ এগুলো দেখার এবং পড়ার সুযোগ পাবে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আরও বলেন, ভবিষ্যতে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রকাশিত অন্যান্য পত্রিকা, ম্যাগাজিন বিশেষ করে শিশুদের জন্য প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’র ব্রেইল সংস্করণ নিয়েও আমরা বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিতে চাই।
আবুল খায়ের বলেন, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সম্ভবত একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা দীর্ঘদিন ধরে শিল্পের প্রায় সবক’টি মাধ্যম নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করে আসছে। ভবিষ্যতে আমরা শিশুদের জন্য আর্টক্যাম্প আয়োজন করতে পারি। আমি সঙ্গীতে প্রয়াত ওয়াহিদুল হক, চিত্রকলায় প্রয়াত কাইয়ুম চৌধুরী এবং আমাদের প্রয়াত সহকর্মী সুবীর চৌধুরীর অবদানের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করি। গণগ্রন্থাগারগুলোয় দেয়া বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উপহারের তালিকায় রয়েছে প্রায় ১২০০ শিল্পীর কাজের প্রতিলিপি, শিল্পীর সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং প্রদর্শনী ও শিল্পরীতি সম্বন্ধে শিল্প-সমালোচকদের প্রবন্ধ; তরুণ ও শিশু শিল্পীদের কাজের প্রতিলিপি, বাংলাদেশের ১০০ জন শিল্পীর সিরিজ ‘শেকড়ে ও সৃজনে’ এবং ৯টি ফোলিও।
মঞ্চস্থ নৃত্যনাট্য বাঁদি-বান্দার রূপকথা ॥ আরব্য রজনীর কালজয়ী রূপকথা আলী বাবা ও চল্লিশ চোর। দুনিয়াব্যাপী আলোচিত এই গল্পটি প্রায় সবারই জানা। টেলিভিশন কিংবা সেলুলয়েডের পর্দায় বারবার দেখেছে মানুষ। ছোট্টদের জন্য কার্টুনও বানানো হয়েছে গল্পটি নিয়ে। পুরনো সে গল্পকে নৃত্যনাট্য রূপে মঞ্চে এনেছে সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার। তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে নৃত্যদল নৃত্যাঞ্চল। বিশ্ব নৃত্য দিবস উপলক্ষে তিন দিনের উৎসবের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় নৃত্যনাট্যটি। এটির পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন সুকল্যাণ ভট্টাচার্য। নৃত্যের সঙ্গে থ্রি ডাইমেনশন প্রজেকশন এবং সেট ও প্রপসের অভিনব ব্যবহারে নৃত্যনাট্যটি পেয়েছে ভিন্নমাত্রা।
আলী বাবার রাজদরবারে আগমন ঘটে চল্লিশ চোরের। রূপকথার নায়িকা ক্রীতদাসী বুদ্ধিমতী মর্জিনার কৌশলে ঘায়েল হয় চল্লিশ চোর। দস্যুদের কবল থেকে রক্ষা পায় রাজপ্রাসাদ। ঘটনার নানা পর্যায়ে উঠে আসে কাঠুরিয়া আলীবাবা, কাফ্রি বান্দা ক্রীতদাস আবদুল্লা, স্বার্থপর কাসেম, কেরামতি দেখানো মুস্তাফাসহ পরিচিত সব চরিত্র। মানুষের অন্তর্নিহিত লোভ, স্বার্থপরতা, হিংসা সবকিছু জয় করে মানুষকে মানবিক করে তোলার কাহিনী উপস্থাপিত হয় নৃত্যনাট্যের গল্পে। এমন সব বিষয়কে নাচের মুদ্রা ও অভিব্যক্তির সঙ্গে সংলাপ এবং গানের মেলবন্ধনে সাজানো হয়েছে নৃত্যনাট্যটি। সুরের সঙ্গে আলোকছটার সৌন্দর্যে উপস্থাপিত হয়েছে বাঁদি ও বান্দার অনবদ্য কল্পকাহিনী। বাঁদি-বান্দার রূপকথায় বুদ্ধিমতি ক্রীতদাসী মর্জিনা ও আলী বাবার চরিত্রে রূপ দিয়েছে নন্দিত নৃত্যজুটি শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন আনিসুল ইসলাম হিরু, সুকল্যাণ ভট্টাচার্য, ডলি ইকবাল, সাবরিনা নিসা, আবুল হাসান তপন, রানা ওয়াদুদসহ ৭০ জন নৃত্যশিল্পী। বিভিন্ন চরিত্রে কণ্ঠ ও সুুর দিয়েছেন অন্বেষা, ইন্দ্রানী হালদার, শ্রীকান্ত আচার্য, নচিকেতা, লোপা মুদ্রা মিত্র, অরিজিত চক্রবর্তী, জয়তী চক্রবর্তী, মনোময় চক্রবর্তী, সুভজিৎ বকসি, রাঘব চ্যাটার্জি ও শংকর তালুকদার। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন জয় সরকার।
লীলা স্যামনের ভরতনাট্যম কর্মশালা ॥ ভারতের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী লীলা স্যামসন। এই নৃত্যশিল্পী পরিচালিত ভরতনাট্য নৃত্যশালা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হলো বৃহস্পতিবার। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সভাকক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করে সৃষ্টি কালচারাল সেন্টাল ও সাধনা। সহযোগিতা করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: