ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্মৃতিশক্তির শুশ্র ষা...

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

স্মৃতিশক্তির শুশ্র ষা...

ছোটবেলায় স্কুলে নামতা বা কবিতা মুখস্থ করতে হয়েছে অনেককেই। আজকাল কম্পিউটার আর স্মার্টফোনের যুগে অনেক কিছুই মনে রাখার দরকার হয় না। কিন্তু স্মৃতিশক্তির প্রয়োজন মোটেই ফুরায়নি। আজকাল আর অচেনা শহরেও ঠিকানা মনে রাখতে হয় না। টেলিফোন নম্বর বা জন্মদিনও আলাদা করে মনে রাখার দরকার নেই। মস্তিষ্কের স্মৃতিভাণ্ডার এখন ‘আউটসোর্স’ করা হচ্ছে স্মার্টফোন ও ডেটা গ্লাসের মধ্যে। মাথা খালি রাখাই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তবে স্নায়ুবিজ্ঞানী বরিস কনরাড এই প্রবণতার বিপক্ষে। তাঁর মতে, ভাল স্মৃতিভাণ্ডার পেশাগত ও সামাজিক ক্ষেত্রে সাফল্যের চাবিকাঠি। জেনে নেয়া যাক, স্মৃতিশক্তি শুশ্রষা করার কয়েকটি উপায়- সঠিক জুতো পরে বেরিয়ে পড়ুন : নিয়মিত হাঁটাচলা বা জগিং শরীরকে ভাল রাখে এ কথা কমবেশি সকলেই জানি। সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী মার্ক ম্যাকডানিয়েল জানান, শুধু শরীর নয় হাঁটাচলা এবং জগিং ব্রেনকেও ফিট রাখে। তবে সবচেয়ে ভাল হয় সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন অন্তত ২০ মিনিট করে হাঁটলে বা জগিং করলে। মস্তিষ্কের জন্য ঠা-া ঘরই ভাল : গরমের চেয়ে ঠা-ায় স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ তিনগুণ বেশি থাকে। এ কথা জানান নিউ সাউথ ওয়েল্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ট্রেলিয়ান মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর ইয়োসেফ ফোরগাস। এছাড়া ঠা-া ঘর মাথাকেও ঠা-া রাখে, তাই ঘরের তাপমাত্রা কখনও ২১ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি রাখা ঠিক নয়, জানান তিনি। গল্প শেষ থেকে শুরু করুন : একটি গল্প পড়ে পুরো গল্পটা মনে রাখুন। এবার শুরু থেকে না বলে শেষ বা পেছন থেকে গল্পটা মনে করতে থাকুন। এই পন্থা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সচল তো রাখবেই, করবে আরও শক্তিশালী। বিপরীত হাত ব্যবহারের অভ্যাস : যাঁরা ডানহাতে সবকিছু করেন, তাঁরা বাঁ-হাতে আর যাঁরা বাঁ-হাতে সবকিছু করেন, তাঁরা ডানহাতে সপ্তাহে অন্তত একবার সব কাজ করার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ উল্টো হাতে খাওয়া-দাওয়া, দাঁতব্রাশ করা বা টুকটাক ঘরের কাজ করার অভ্যাস করতে পারেন। এতেও ব্রেন সচল থাকে। বন্ধুত্ব লালন করুন : মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলা বা টেলিফোনে যোগাযোগ মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এই তথ্যটি জানিয়েছেন এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট ড. স্টুয়ার্ট রিচি। তিনি বলেন, দিনে মাত্র ১০ মিনিটের যোগাযোগই স্মৃতিশক্তিকে বেশ জোড়ালোভাবে জাগিয়ে তুলতে সহায়তা করে। রুটিন থেকে বেরিয়ে আসুন : ব্রেনকে সবসময় নতুন কিছু শিখতে হয়। তা না হলে মস্তিষ্ক নির্জীব হয়ে যায়। তাই প্রতিদিনের রুটিন ভেঙে অন্য কিছু করুন। মাঝে মধ্যে অন্য রাস্তা দিয়ে কর্মস্থলে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান। নতুন কোন ভাষা বা যন্ত্র বাজানো শিখুন। এতে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি শতকরা ৭৫ ভাগ কমে যায়। নিউইয়র্কের আলবার্ট আইনস্টাইন মেডিক্যাল কলেজের করা এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে এ তথ্য। পায়ের আঙ্গুলের ম্যাসাজ : প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে পায়ের আঙ্গুল ম্যাসাজ করুন। প্রথমে আঙ্গুলের ওপর থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে টিপে টিপে নিচের দিকে যান। এই ম্যাসাজ মস্তিষ্কের কোষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। শপিং লিস্ট : বাজারে বা দোকানে যাওয়ার আগে কী কী কিনবেন তার একটি লিস্ট তৈরি করে নিন এবং ইচ্ছে করেই সেটা বাড়িতে রেখে শপিংয়ে চলে যান। ফিরে এসে দেখুন ক’টা ভুলে গেছেন আর ক’টা মনে রাখতে পেরেছেন। এই নিয়ম যত বেশি করা হবে, ব্রেন তত দীর্ঘসময় মস্তিষ্কে ‘সেভ’ করে রাখতে পারবে তথ্যগুলো। দুই কাপ কফিই যথেষ্ট : কফি পান তিরিশের বেশি বয়সীদের মস্তিষ্ককে ধীরে ধীরে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে অনেকটাই রোধ করে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। রুটিন চেকআপ : হৃৎপিন্ডের নানারকম অসুখের ঝুঁকির কারণেও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই বছরে একবার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টোরলের মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত। মস্তিষ্কের খাবার : আখরোটের ‘পলিফেনল’ ব্রেনের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেয়। তা ছাড়া সামুদ্রিক মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড, পালং শাক, ডার্ক চকোলেট, গ্রিনটি, অলিভ অয়েল, শাক-সবজি ইত্যাদি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই জরুরী। সূত্র : ডয়েচে ভেলে
×