ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

বিড়াল মিউ ধ্বনি দিয়ে কি বলতে চায়

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২২ এপ্রিল ২০১৬

বিড়াল মিউ ধ্বনি দিয়ে কি বলতে চায়

পোষা কুকুর ও বিড়াল কি তাদের ঘেউ ঘেউ বা মিউ মিউ ধ্বনির দ্বারা মানুষের কাছে নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করে। মানুষের কথার জবাব দেয়। অথবা তারা কি এসব ধ্বনির মাধ্যমে আমাদের কিছু বলার চেষ্টা করে? বিড়ালরা মিউ মিউ ধ্বনির দ্বারা ঠিক কি বলতে চায় তা মর্মোদ্ধারে এক নতুন প্রকল্পের কাজ চলছে। নির্ণয় করার চেষ্টা হচ্ছে বাচ্চারা তাদের উদ্দেশ্য করে যা কিছু বলে তার সবই বিড়ালরা পছন্দ করে কিনা। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানা গেছে যে, নিউইয়র্ক রাজ্যের প্রায় সকল পোষা প্রাণীর মালিক তাদের পোষমানা প্রাণীদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলে যেন তারা তাদেরই মতো রক্তমাংসের মানুষ। অনেকে এমনও বিশ্বাস করে যে কুকুর ও বিড়ালরা ঘেউ ঘেউ বা মিউ মিউ ধ্বনির দ্বারা তাদের মনিবদের কথায় সাড়া দেয়। আবার অনেক সময় তারা এসব ধ্বনির দ্বারা জানিয়ে দেয় যে তাদের খিদে লেগেছে, ভয় লাগছে বা তাদের মলমূত্র ত্যাগ করা দরকার। সুইডেনের বিড়াল প্রেমিক ও ধ্বনিতত্ত্ব গবেষক সুদানে স্কজ, বিড়ালের মিউ মিউ ধ্বনির দ্বারা কি ব্যক্ত করা হয় তা নির্ণয়ের চেষ্টা করছেন। লুপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষকের নিজেরই রয়েছে তিনটি বিড়াল। গবেষণার জন্য তিনি সুইডেনের বেশ দক্ষিণে লুন্ড থেকে এবং ৩১০ মাইল উত্তরে স্টকহোম থেকে বিড়াল এবং সেই সঙ্গে তাদের মনিবদের রিক্রুট করছেন। এ দুই অঞ্চলের লোকদের স্থানীয় ভাষা ও উচ্চারণে কিছু পার্থক্য আছে। কাজেই স্কজ দেখতে চান তাদের বিড়ালদের মিউ ধ্বনির মধ্যেও কোন অঞ্চলগত পার্থক্য আছে কিনা। তিনি এটাও আবিষ্কার করতে চান যে, বিড়াল মিউ ধ্বনির দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন জিনিস বুঝায় কিনা এবং আমরা ওদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলি তার ভিত্তিতে তারা ভিন্ন ভিন্নভাবে সাড়া দেয় কিনা। প্রশ্ন হলো বিড়াল কেন মিউ মিউ করে? বিড়াল মানুষের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ভিজুয়াল বা দৃষ্টিগত এবং ভোকাল বা কণ্ঠগত এমনকি উভয় সংকেতকে কাজে লাগায়। তবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তাদের কণ্ঠস্বর প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়। অন্য বিড়ালের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করতে তাদের দৃষ্টিগত ও প্রাণগত সংকেতের ওপর নির্ভর করার প্রবণতা থাকে। বিড়াল যখন ‘মিউ’ করে তখন সাধারণত তারা কোন মানুষকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলে, অন্য কোন বিড়ালকে নয়। অনেক বিড়াল ও তাদের প্রতিপালক মানুষ আরও ভালভাবে পরস্পরের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করার জন্য এক ধরনের মিশ্রিত অশুদ্ধ ভাষা উদ্ভাবন করে থাকে। এই ভাষাগুলোর মধ্যে কোন সাদৃশ্য আছে কিনা কিংবা সেগুলো কোন বিড়াল ও মানুষের জোরের ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট কিনা তা এখনও জানা যায়নি। কিছু কিছু মানুষ অন্য মানুষদের থেকে আলাদাভাবে তাদের পোষা বিড়াল বা অন্য প্রাণীর সঙ্গে কিভাবে কথা বলে। এর উত্তরে বলা যায় যে, লোকে বিড়ালের সঙ্গে কথা বলার সময় এবং বাচ্চা ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় একই ধরনের বাচনরীতিকে কাজে লাগিয়ে থাকে। তারা গড় সুরের চেয়ে একটু উঁচু সুরে টেনে টেনে সুনির্দিষ্ট প্যাটার্নের সুরেলা ধ্বনিতে বলে সেটাকে বলা হয় ‘সিং সং’। সুজানে স্কজ সুইডেনের দুই ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ও বিড়ালের ভাষা ও ধ্বনি নিবন্ধিত করছেন। একটি সমীক্ষায় এই প্যাটার্নগুলো ভিন্ন ভিন্ন আবেগ বা ভিন্ন ভিন্ন জাতের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় কিনা দেখার জন্য বিড়ালের কণ্ঠের মেলোডি বা সুর বিশ্লেষণ করতে চাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সমীক্ষায় বিড়ালদের বিভিন্ন ধরনের মানুষের ভাষা শোনানো হয়েছে এবং সেসব ভাষা শুনে ওরা কিভাবে সাড়া দেয় দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। দেখতে চাওয়া হয়েছে ওরা কি বাচ্চা ছেলেমেয়েদের মতো কথা বলা হলে বেশি পছন্দ করে নাকি প্রাপ্তবয়স্কদের মতো কথা বলা হলে বেশি পছন্দ করে। তাছাড়া স্বরভঙ্গি ও বাচনভঙ্গির ভিত্তিতে পরিচিত কোন কণ্ঠস্বর তারা চিনতে পারে কিনা। এর কোন জবাব এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিড়াল কোন ধরনের কণ্ঠস্বর বেশি পছন্দ করবে তা নির্ণয় করার উপায়টি স্পষ্ট নয়। গবেষক দল এ জন্য বেশকিছু মানুষের বিভিন্ন বাচনভঙ্গি রেকর্ড করবেন। তারপর বিড়াল যে বাড়িতে থাকে সেখানে গিয়ে একটা পর্দার আড়ালে লাউড স্পীকারগুলো রেখে দেবে। এরপর মানুষের কণ্ঠের বিভিন্ন সুর ও বাচনভঙ্গির রেকর্ড বাজিয়ে শোনাবে এবং বিড়ালগুলো ওতে কিভাবে নাড়া দেয় দেখার জন্য ভিডিও রের্কড করবে। এ ক্ষেত্রে গবেষকরা বিড়ালের কান ও মাথার নড়াচড়া, শরীরের ভঙ্গিমা ইত্যাদি বিষয় দেখবেন। যদি দেখা যায় যে, বেশিরভাগ বিড়াল একই ধরনের মেলেডি বা সুরকে কাজে লাগিয়ে বলতে চাইছে যে ‘আমার একটু খিদে পেয়েছে, এখন কিছু খেতে চাই’ । আবার তারা একই মেলোডিকে কাজে লাগিয়ে বলতে চায় ‘আমার সত্যি খিদে পেয়েছে, না খেয়ে আছি’ তাহলে ওরা কি বলছে গবেষকরা তা বোঝার চেষ্টা করতে শুরু করতে পারেন। সূত্র : লাইফ সায়েন্স
×