ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

সম্প্রীতি ও মানবিকতার আবাহনে বেঙ্গলে শুরু বৈশাখ উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১০ এপ্রিল ২০১৬

সম্প্রীতি ও মানবিকতার আবাহনে বেঙ্গলে শুরু বৈশাখ উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদায় নিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত। ঝড়-বাদলকে সঙ্গী করে আসছে খরতাপ মাখা ঋতু গ্রীষ্ম। প্রকৃতিতে বাজছে বৈশাখের পদধ্বনি। শহরের নানা স্থানে চলছে বর্ষবরণের বহুমাত্রিক আয়োজনের প্রস্তুতি। সেই সূত্রে নববর্ষ উদ্যাপনের আঁচ লেগেছে রাজধানীতে। তাই নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখের আগেই রঙিন হলো রাজধানীর সংস্কৃতির অঙ্গন। সম্প্রীতি ও মানবিকতার আবাহনে শনিবার থেকে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শুরু হলো পাঁচ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসব। চিত্ত জাগুক গানে গীতে কাব্যে কথায়- এই প্রত্যাশায় সাজানো হয়েছে উৎসব। পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানামালায় থাকছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ তিন কবির গান, রাগাশ্রয়ী, লোক ও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের সুরসুধা। সঙ্গীতাসরে বাড়তি আকর্ষণ যুক্ত করেছে প্রথম দিনে শিশুদের অনুষ্ঠানমালা। ১৪২২ বঙ্গাব্দের বছরের শেষ দিন পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় বেঙ্গল শিল্পালয়ে শ্রোতারা উপভোগ করতে পারবেন প্রখ্যাত ও প্রতিশ্রুতিশীল কণ্ঠশিল্পীদের এই সুরসুধা। শনিবার সকালে বৈশাখী অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়। প্রথম দিনের প্রথম পর্বের সকালটি রাঙিয়ে দেয় শিশু শিল্পীরা। সম্মেলক গান পরিবেশন করেছে কচি কণ্ঠের শিল্পীরা। সেই সঙ্গে হয়েছে সুরের আশ্রয়ে ছোটদের নাচ ও পাপেট শো। বৈশাখের আগমনী আয়োজনে সোনামণিরা মনভরে উপভোগ করেছে কার্টুন প্রদর্শনী। তরুণ মজুমদারের লেখা গান শোনায় সিলেটের সংগঠন গীতবিতান বাংলাদেশের খুদে শিল্পীরা। পরিবেশন করে ‘এসো প্রাণ ভরানো’। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের চরণ গেয়ে শোনায় ‘আজি নূতন রতনে’। এছাড়াও পরিবেশিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমি ভাই ক্ষ্যাপা বাউল আমার দেউল’, মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘রেখো মা দাসেরে মনে’, রজনীকান্ত সেনের ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এই কথাটা ধরে রাখিস’ গানের সমন্বয়ে কোরাস পরিবেশনা। এরপর ছিল ছড়াপাঠ। ‘ওপেন্টি বায়োস্কোপ’ থেকে শুরু করে ‘আম পাতা জোড়া জোড়া’, ‘আইকম বাইকম তাড়াতাড়ি’সহ বেশ কিছু প্রচলিত ছড়া পাঠ করে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয় মুগ্ধতা। এরপর ছিল ঢাকার মেপ্ল লীফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিশু শিল্পীদের পরিবেশনা। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু-শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে শুরুতেই গেয়ে শোনায় রবিঠাকুরের ‘আলো আমার আলো’ গানটি। পর্যায়ক্রমে পরিবেশন করে ‘এই বাংলা রবি ঠাকুরের গান’, ‘ধিন ধিন তাক ধিনা ধিন’সহ কিছু গান। ‘আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্দ ছায়ায়’ ও ‘হলুদ গাঁদার ফুল’ গানের সুরে সমবেত নাচের মাধ্যমে নববর্ষকে স্বাগত জানায় শিশুশিল্পীরা। দ্বিতীয় পর্বে ছিল পাপেট শো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের বাংলাদেশ পুতুল নাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে এই পর্বটি যেন আলোড়িত করে শিশু-কিশোরদের। ড. রশীদ হারুনের পরিচালনায় মুনীর চৌধুরী রচনা অবলম্বনে ‘কুপোকাত’, জসীম উদ্দীনের ‘টোনাটুনি’ ও উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর ‘নাককাটা রাজার’ উপস্থাপনা শিশুদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিল তপ্তবেলা কিছুটা সময়। আয়োজনটি বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হলেও তাদের প্রকাশনা ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’র সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। সন্ধ্যায় বসে প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন। এই অধিবেশনটি সাজানো হয় নজরুলসঙ্গীত দিয়ে। অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিন আজ রবিবার তৃতীয় অধিবেশন সাজানো হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন পর্যায়ের গান দিয়ে। চিত্রশালায় বৈশাখী ফ্যাশন শো ॥ শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় অনুষ্ঠিত হলো বৈশাখী ফ্যাশন শো। মডেলদের পরিহিত পোশাকে বৈশাখ তুলে ধরার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে ছিল সঙ্গীতদল জলের গানের পরিবেশনা। এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফইএবি) উদ্যোগে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর এই বর্ণাঢ্য ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়। বৈশাখী ফ্যাশন শো শেষে সঙ্গীত পরিবেশন করে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল জলের গান। সত্যেন বোস ও মোতাহার হোসেনকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র ॥ বাঙালী বিজ্ঞানী সত্যেন বোস ও ড. কাজী মোতাহার হোসেনের ওপর নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র। একইসঙ্গে দুই গুণীজনকে নিয়ে প্রকাশিত হলো স্মারকগ্রন্থ। প্রামাণ্যচিত্রটির চিত্রনাট্য রচনার পাশাপাশি পরিচালনা করেছেন রুশো তাহের। স্মারকগ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন শেখর দত্ত ও রুশো তাহের। শনিবার বিকেলে প্রামাণ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী ও গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৈশাখে শিশুতোষ আনন্দবার্ষিকীর প্রকাশনা ॥ বৈশাখকে সামনে রেখে শিশুদের সুকুমার বৃত্তির বিকাশে চন্দ্রাবতী একাডেমি প্রকাশ করেছে ‘কথার ঝাঁপি’, ‘সাতসকাল‘, ‘আজ ছুটিবার’ ও ‘অনেক আকাশ’ নামের চারটি শিশুতোষ আনন্দবার্ষিকী। শিশুসাহিত্যিক মাহফুজুর রহমানের প্রধান সম্পাদনায় শিশুতোষ এই সংকলনগুলোর সম্পাদনা করেছেন সুবল কুমার বণিক, রহীম শাহ, সাজ্জাদ আরেফিন ও যাযাবার মিন্টু। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এই শিশুতোষ সংকলনগুলোর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ইমেরিটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, রফিকুননবী ও এবি ব্যাংক লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তৃতা করেন চন্দ্রাবতী একাডেমির নির্বাহী পরিচালক কামরুজ্জামান কাজল। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, মনন ও শিল্প-সাহিত্যের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করতে হবে আমাদের সবাইকে।
×