ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইরিশ বধে প্রস্তুত আজ টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১১ মার্চ ২০১৬

আইরিশ বধে প্রস্তুত আজ টাইগাররা

মিথুন আশরাফ, ধর্মশালা থেকে ॥ পেসার আল আমিন হোসেন ধর্মশালা স্টেডিয়ামের ইনডোরের আশপাশে ঘুরছেন। কখনও এদিক হাঁটছেন। কখনও ওদিক হাঁটছেন। আর মুশফিকুর রহীম ও সাব্বির রহমান রুম্মন নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করছেন। তা পরখ করছেন। যেন ব্যাটিং শিখতে চাচ্ছেন আল আমিন! তবে মুশফিক ও সাব্বিরের চেয়েও বড় চোখ করে তাকাচ্ছেন আরেকজনের দিকে। তিনি পেসার আবু হায়দার রনি। যিনি সাব্বিরকে একের পর এক বল করে যাচ্ছেন। সাব্বিরকে পরাস্ত করার চেষ্টা করছেন। আল আমিন তা গভীরভাবে দেখছেন। আজ আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের ম্যাচ রয়েছে। ধর্মশালায় বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় ম্যাচটি শুরু হবে। এ ম্যাচের আগে ইনডোরে মুশফিক, সাব্বির, রনির ঘাম ঝরানো অনুশীলই চোখে পড়ল। যখন মুশফিকরা অনুশীলনে ব্যস্ত, তখন আয়ারল্যান্ডের উইকেটরক্ষক গ্যারি উইলসন যেন হুঙ্কারই দিয়ে বসলেন। জানিয়ে দিলেন, ‘বাছাইপর্বে যারা খেলছে, তারা সবাই সমান শক্তির!’ উইলসনের এ কথা বাংলাদেশীদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়ে সামনে ধরা দিল। যে দলটি ওমানের সঙ্গে হারে, সেই দলটি কি না এমন কথা বলছে। আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়ের হিসেবে বাংলাদেশ ৮ নম্বরে থাকতে পারেনি। তাই বাছাইপর্ব খেলতে হচ্ছে। এর বাইরে বাংলাদেশকে দুর্বল দল বলে এমন কোন দল আছে? উল্টো, বাংলাদেশ দিন দিন যেভাবে উন্নতি করছে। যেভাবে এশিয়া কাপ টি২০ ক্রিকেটের ফাইনালে উঠে বিশ্ব ক্রিকেটে চমক লাগিয়ে দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশকে নিয়ে ভয়েই আছে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলো। অথচ আয়ারল্যান্ড কি না বলছে তারাও বাংলাদেশের সমান শক্তির! এর পেছনে কারণও আছে। আইরিশরা বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগেও ম্যাচ খেলেছে। ২০০৯ সালে যখন প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ, তখন জিতে আইরিশরা। সেই এক স্মৃতি নিয়ে নাচছে আয়ারল্যান্ড। উইলসনই যেমন বলার চেষ্টা করলেন, ‘আমরা এর আগেও বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচ খেলেছি। জিতেছিও।’ বোঝাতে চাইলেন বোধ হয় এবারও জেতার ভাবনা আছে। কিন্তু কিভাবে? হল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলা ওমানের কাছে হেরেছে আয়ারল্যান্ড। আবার বাংলাদেশের সঙ্গে যে চারবার খেলেছে। শেষ তিনবারই হেরেছে আয়ারল্যান্ড। তবে এর মধ্যে একবার বাংলাদেশকে ২০১২ সালে কষ্ট করে ১ রানে জিততে হয়েছে। এখন বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল। ওয়ানডেতে সেই শক্তি গত বছরই দেখিয়ে দিয়েছে। টি২০তে এবার এশিয়া কাপে দেখিয়েছে। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দলকে হারিয়ে ফাইনালে খেলেছে। আর তাই ক্রিকেটারদের ভেতর আত্মবিশ্বাসও অনেক বেশি। সেই আত্মবিশ্বাসে আয়ারল্যান্ডেরত উড়ে যাওয়ার কথা। এরপরও আইরিশরা বাংলাদেশকে যে হারানোর সাহস দেখাচ্ছেন, সেটি দিনটি যদি তাদের হয়ে যায় সেই হিসেব করেই। যেমনটি হয়েছিল, ২০০৯ সালে। সেই সুযোগ কী আর বাংলাদেশ দেবে? বাংলাদেশ কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে বলেছেন, ‘আমি রান যত বেশি হয়, সেটি দেখতে পছন্দ করি। আমাদের নজরে কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটাররা আছে। আমাদের জানা আছে, তারা ক্ষমতাবান। তারা এখন যা খেলছে তারচেয়েও ভাল খেলতে পারে। আমি আশা করছি, দ্রুতই তারা রানে ফিরবে।’ হাতুরাসিংহে মুশফিক ও সাকিবের দিকেই নজরটি দিয়েছেন। যদি এ দুইজন ভাল ব্যাটিং করে ফেলেন, তাহলে কথাই নেই। আয়ারল্যান্ডত উড়ে যাবে। তবে হল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছে বাংলাদেশ, সেই রকমের চেয়েও ভাল খেলা জরুরী হয়ে পড়েছে। ১৫৩ রান করেও হারের মুখে পড়ে গিয়েছিল মাশরাফিরা। সেটি সবাইকে অবাক করেছে। এত ভাল বোলিং নিয়েও হল্যান্ডের সঙ্গে ৮ রানের জয়টি সামনের ম্যাচগুলোর জন্য শঙ্কাও তৈরি করে দিয়েছে। হাতুরাসিংহে অবশ্য এসব নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তার ভাবনায় আছে শুধুই জয়, ‘জয় জয়ই। কিন্তু গত ম্যাচটি অনেক ক্লোজ হয়েছে। গত ম্যাচে দল যেভাবে খেলেছে আমি আশা করি এবার আরও ভাল খেলবে দল। বুঝতে হবে ক্রিকেটাররা একটি ম্যাচ খেলেই (এশিয়া কাপের ফাইনাল) ঢাকা থেকে এখানে (ধর্মশালায়) এসেছে। আমরা কেউই মেশিন নই। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। এখানে আমাদের চারদিন হয়ে গেছে। কন্ডিশনের সঙ্গেও মিশে গেছে সবাই। আশা করি এখন আর কোন সমস্যা হবে না। গত ম্যাচ থেকে এবার অনেক ভাল হবে।’ সঙ্গে আয়ারল্যান্ড দলটি নিয়ে বলেন, ‘আয়ারল্যান্ড সম্পর্কে জানা আছে। তারা পেশাদার দল। তবে গত ম্যাচে হেরেছে। টি২০ ক্রিকেটে আসলে আগে থেকে কিছু বলা যায় না। তবে আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী খেলতে পারলে জয়ই মিলবে।’ সেই জয় মিললে বাছাইপর্ব উতরানোও বাংলাদেশের জন্য সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু সবাইকে আবার আয়ারল্যান্ডের মুখপাত্র হয়ে উইলসনের মাধ্যমে দেয়া আয়ারল্যান্ডের হুঙ্কারও মাথায় রাখতে হবে। সেই হুঙ্কারের সামনেই আজ পড়ছে বাংলাদেশ।
×