ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানকে হুমকি আমিরাতের

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পাকিস্তানকে হুমকি  আমিরাতের

মিথুন আশরাফ ॥ পাকিস্তান কোচ ওয়াকার ইউনুসের পায়ের নিচে মাটি নেই এখন। এমনও হতে পারে টি২০ বিশ্বকাপের আগেই ওয়াকারকে কোচের পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। সেই স্থানে তাহলে কে বসবেন? যিনি বসবেন তিনি এখন ঢাকাতেই আছেন। তিনি আকিব জাভেদ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোচ। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আকিবের দলটির বিপক্ষেই আবার ওয়াকারের পাকিস্তানের ম্যাচ রয়েছে। কোনভাবে পাকিস্তানকে আজ ভোগাতে পারলেই পাকিস্তানের কোচের আসনে বসে যেতে পারেন আকিব। আকিবের জন্য হলেও কী পাকিস্তানকে আজ ভোগাতে পারবে আরব আমিরাত? এশিয়া কাপ টি২০তে দুর্দান্ত খেলছে আরব আমিরাত। বাছাইপর্বে আফগানিস্তানকে হারিয়েছে। এরপর হংকং ও ওমানকে উড়িয়ে দিয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছে। মনে করা হয়েছিল, চূড়ান্ত পর্বে আরব আমিরাত কোন দলের কাছেই পাত্তা পাবে না। কিন্তু হচ্ছে উল্টো। শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে ভোগাচ্ছে আরব আমিরাত। বিশেষ করে বোলিং দক্ষতা দেখিয়ে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলে দলটি। লঙ্কানদের যেন হারিয়েই দিচ্ছিল! লাসিথ মালিঙ্গার শ্রীলঙ্কাকে ১২৯ রানের বেশি করতে দেয়নি। এরপর ব্যাটিংয়ে ১১৫ রানও করে ফেলে আরব আমিরাত। ব্যাটিংটা যদি শক্তিশালী হতো, তাহলে টুর্নামেন্টে যে চার টেস্ট খেলুড়ে দল আছে, তাদের শুধু ভোগাতই না, হয়ত কোন ম্যাচে জয়ও তুলে নিতে পারত আরব আমিরাত। পরের ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে যে ম্যাচটি খেলেছে দলটি, সেই ম্যাচেও একই ঝাঁজ দেখিয়েছে। আর সেটিই আরব আমিরাতকে প্রশংসায় ভাসিয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যখন দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন মোহাম্মদ নাভিদ, আমজাদ জাভেদ, মোহাম্মদ শাহজাদরা, তখন মনে হয়েছে ‘ফ্লুক’ হতে পারে। হঠাৎ করেই এমনটি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে সেই ভুল ভেঙ্গে দিয়েছে দলটি। বাংলাদেশকেও বিপাকে ফেলেছে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ শেষে অপরাজিত ৩৬ রানের ইনিংস না খেলতে পারলে ১৩০ রানও করতে পারত না বাংলাদেশ। শেষে ১৩৩ রান করে স্বাগতিকরা। এ রান করে জেতার আশা জাগে। না হলে ১১২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। নাভিদ, আমজাদ, শাহজাদ, রোহানরা বুঝিয়ে দেন, বোলিংটা যে কোন দলের জন্যই হুমকি। কিন্তু দুর্বলতা একটাই, ব্যাটিং। বোলিংয়ে যতই ভাল করুক আরব আমিরাত, প্রতিপক্ষের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের সামনে কুলিয়ে উঠতে পারে না। লঙ্কানদের বিপক্ষে ১১৫ রান করতে পেরেছে, কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ৮২ রানের বেশি করতেই পারেনি। আকিব জাভেদ তাই ব্যাটিংটা নিয়েই বেশি চিন্তিত। বলেছেন, ‘বোলিং ঠিকই আছে। ব্যাটিংটাতেই দুর্বলতা আছে। যে কারণে বোলিংয়ে এত ভাল করা গেলেও ব্যাটিংয়ে গিয়ে তার ধারাবাহিকতা থাকছে না। তবে আশা করছি, ব্যাটিংটা আরও ভাল হবে।’ চার বছর আগে ২০১২ সালের মার্চে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোচের দায়িত্ব নেন পাকিস্তানের সাবেক পেসার আকিব জাভেদ। সেই থেকে ধীরে ধীরে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা সেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ফলও। তবে আকিব একজন পেসার ছিলেন। তাই আরব আমিরাতের পেস আক্রমণটাই বেশি শক্তিশালী। যেটি দিয়ে প্রতিপক্ষকে ভোগানো গেলেও ব্যাটিং দুর্বলতায় আর জয় তুলে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দুর্বল দলের বিপক্ষে বোলিং দিয়ে জয় সম্ভব হলেও শক্তিশালী দলের সামনে এসে ব্যাটিংয়ে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ছে আরব আমিরাত। আজ কী এর ব্যতিক্রম হবে? প্রতিপক্ষ দলটি পাকিস্তান। অনেক শক্তিশালী। যদিও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তান। ৮৩ রানেই অলআউট হয়ে গেছে। এরপর মোহাম্মদ আমির খানিক ঝলক দেখান। যে ঝলকে কোন কাজ শেষপর্যন্ত হয়নি। এর প্রধান কারণই হচ্ছে, স্কোরবোর্ডে একেবারে কম রান থাকা। আজ যদি কোনভাবে আরব আমিরাতের বোলিংয়ের সামনে পাকিস্তানের ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়ে, তাহলে পাকিস্তানের বিপদও আসতে পারে। আর বিপদ আসলে হারও হতে পারে। সেই হার হলে টানা দুই ম্যাচ হারে পাকিস্তানের বিদায় ঘণ্টাও বেজে যেতে পারে। তা কী করতে পারবে আরব আমিরাত? পাকিস্তান শক্তিশালী দল হওয়ায় শহীদ আফ্রিদির দলকেই ফেবারিট মেনে নিতে হচ্ছে। জয়ও শেষপর্যন্ত যে পাকিস্তানেরই হবে, তাও সবার ধারণাতেই আছে। তাই যদি হয়, সবার আগে টানা তিন ম্যাচ হারে আরব আমিরাতের বিদায় ঘণ্টা বাজা নিশ্চিত হবে। পাকিস্তানকে হারিয়ে দেবে আরব আমিরাত সেই আশাও আসলে করা হচ্ছে না। তবে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের যে দুর্বলতা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ধরা পড়েছে, তাতে সবারই মনে হচ্ছে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশকে যেভাবে ভুগিয়েছে আরব আমিরাত, পাকিস্তান তারচেয়েও বেশি ভুগতে পারে। আর বোলিং নৈপুণ্য দিয়ে আরব আমিরাত যদি পাকিস্তানকে ভোগাতে পারে সেটি আকিব জাভেদের কাজেই লাগবে বেশি। ওয়াকার ইউনুসের স্থানে যে আকিব জাভেদের নামটি জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে, ওয়াকারের স্থানে তখন আকিবের বসাটা নিশ্চিতই হয়ে যাবে! পাকিস্তানকে ভোগাতে পারবে আরব আমিরাত?
×