ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ কেমন কাল এলো-

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এ কেমন কাল এলো-

সমাজে ক্রমশ বাড়ছে বিকারগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা। নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা, নৃশংসতার যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে সমাজ, দেশ। এ কেমন কাল এলো! যখন নির্বিকারচিত্তে হত্যা করা হচ্ছে নিপীড়ন, ধর্ষণ, নির্যাতন, অপহরণ শেষে শিশুকে। দেশের কোথাও না কোথাও প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এই বীভৎসতা। এসব ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটা মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত চরম অপরাধ। সমাজের অবক্ষয়ের মাত্রা যে ক্রমশ বাড়ছে, তারই প্রতিচ্ছবি এসব পাষ-তা। কেন নিষ্ঠুর হত্যার টার্গেট হচ্ছে শিশু-কিশোররা, কেন তারা নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার, তার মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা হয়ত মেলে। সমাজ জীবনের অসঙ্গতিগুলো যখন চরমে পৌঁছে, অভাবের নিদারুণ কশাঘাত এসে ধাক্কা মারে, মানুষের বোধ থেকে হারিয়ে যায় মানবতা, মাদকাসক্তি যখন লুপ্ত করে হিতাহিত জ্ঞান, পরিবার যখন অশান্তির ঘনঘোর অন্ধকারকে বরণ করে, তখন জাতির ভবিষ্যত শিশুরা হয়ে উঠছে নিষ্ঠুরতার শিকার। মনোবিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে, এদেশে সমাজব্যবস্থা এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে, যেখানে মা তার সন্তানকে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না, বাবা তার সন্তানকে হত্যা, ভাই ভাইকে হত্যা করে। কোন সভ্য ও ভদ্র সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। সভ্য, ভদ্র সমাজে সকলের মাঝে থাকবে নীতি-নৈতিকতা, নগর-নীতি, অপরের প্রতি সহানুভূতি এবং সুখে-দুঃখে একে অন্যের পাশে থাকার মানসিকতা। কিন্তু সমাজে এসবের অনুপস্থিতি দিন দিন প্রকট হয়ে উঠেছে। শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, এমন একটি সংগঠনের হিসাবানুযায়ী, সারাদেশে ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত হত্যার শিকার হয়েছে ১ হাজার ৮৫ শিশু। এর মধ্যে ২০১২ সালে ২০৯, ২০১৩ সালে ২১৮, ২০১৪ সালে ৩৬৬ ও ২০১৫ সালে ২৯২ শিশু হত্যার শিকার। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অপহরণের পর হত্যা হয়েছে ১১১ শিশু। আর ২০১২ সালে ৬৭ শিশু অপহরণের শিকার হয়, যার মধ্যে ১৭ জনকে উদ্ধার করা গেছে। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে ১টি করে শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত হত্যার শিকার হয়েছে ৩০ শিশু। এদের মধ্যে ৪ জনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। নিখোঁজের পর পাওয়া গেছে ৬ জনের লাশ। আর্থ-সামাজিক ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ যত বাড়ছে হত্যার ঘটনা তত ঘটছে। পারিবারিক আর্থিক টানাপোড়েন কিংবা দারিদ্র্যের কারণে অর্থের লোভেও হত্যাকা- ঘটছে। এমনিতেই সমাজে পারস্পরিক মায়া-মমতার ঘাটতি এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় নিষ্ঠুরতাকে উস্কে দিচ্ছে অবলীলায়। রয়েছে সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি, আচার-আচরণ, আইন-কানুন উপেক্ষার প্রবণতা মারাত্মক। এসব রোধ করার জন্য নেই তেমন পদক্ষেপ। সমাজকে যদি বদলানো না যায়, অবক্ষয়ের কারণগুলো যদি উপড়ানো না যায়- তবে অবস্থার ভয়াবহতা বাড়তেই পারে। সমাজ ব্যবস্থার স্বাভাবিক বিকাশের পথ যদি রুদ্ধ হয়, তবে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সামাজিক অবক্ষয় দূর করতে হলে দেশে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির অপতৎপরতা রোধের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে আইনের শাসনের প্রসার ঘটাতে হবে। ঘটনাগুলোর দ্রুত বিচার ও দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা হলে অপরাধের মাত্রা কমতে বাধ্য। কিন্তু ঘটনায় জড়িতরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে না কিংবা ধরা হয় না। এসব বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। নতুবা সমাজ আরও অবক্ষয়িত হবে।
×