ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৬ মাস মহাকাশে বসবাস

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

৬ মাস মহাকাশে বসবাস

পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা সাত শ’ কোটির মতো। তাদের প্রত্যেকের জীবন আলাদা, আবার আমাদের সবার জীবনের অভিজ্ঞতা কিন্তু প্রায় একই রকমের। প্রত্যেকদিন আমরা যেসব কাজ করি সে সব বিষয়ে ভেবেও দেখি না। যেমন সকালে যখন ঘুম ভাঙে তখন বালিশ থেকে মাথা তুলে নেয়া, তারপর বিছানা ছেড়ে আমরা হয়ত একজোড়া স্যান্ডেল খুঁজতে শুরু করি। কিন্তু ছয় জন মানুষ আছে যাদের জীবন পৃথিবীর সাত শ’ কোটি মানুষের চেয়ে আলাদা। এই ছয় জন মানুষ আমাদের মাথার চার শ’ কিলোমিটার ওপরে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভাসছে। ওই স্টেশনের আকার একটি ফুটবল মাঠের সমান। সেখানে তাদের জীবন আমাদের জীবনের মতোই আবার বলতে পারেন তাদের জীবন একেবারেই আলাদা। সম্প্রতি ব্রিটিশ নভোচারী টিম পিক মহাকাশে গেছেন। সাড়ে ছয় ঘণ্টার মতো যাত্রা শেষে যোগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের অন্যান্য ত্রুুদের সঙ্গে। আগামী ৬ মাসের জন্য এটাই হবে তার বাড়িঘর। টিম পিকের সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন নভোচারী- একজন রুশ, আরেকজন আমেরিকান। কাজাখস্তানের বাইকোনোর থেকে তারা যখন মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে সয়ুজ রকেটে করে যাত্রা শুরু করেন টিম পিকের পরিবারের সদস্যরা তাদের সেখানে বিদায় জানান। সাংবাদিকরা ছিলেন জার্মানির কোলন শহরে, ইউরোপিয়ান এস্ট্রনট সেন্টারে। মহাকাশ স্টেশনে গিয়ে পৌঁছানোর পর সেখানে তার জীবন কেমন কাটছে তাই নিয়ে তিনি এই পৃথিবী থেকে কয়েকজন সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। টিম পিক তাদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, তিন দিন কেটে যাওয়ার পর তিনি বুঝতে পারছেন যতটা খারাপ হবে বলে তিনি ভেবেছিলেন আসলে সে রকম কিছু নয়। মহাকাশের কক্ষপথে জীবন সত্যিই চমৎকার। তিনি বলেন, আমি যা কল্পনা করেছিলাম তারচেয়ে’ ভাল। এটা বর্ণনা করা খুব কঠিন। যে সয়ুজে করে আমি এখানে এসেছি সেটা খুবই শক্তিশালী এবং অভিনব একটি যান। তারপর ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে এসে পৌঁছতে আমাদের কোন অসুবিধা হয়নি। এখন ওজনহীন একটি পরিবেশের সঙ্গে আমরা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিচ্ছি। এক সময় আমি কুপোলাতে যাব এবং সেখান থেকে দেখতে পাব আমাদের পৃথিবীকে। এটা ছিল আমার কল্পনারও বাইরে। সাংবাদিকরা টিম পিকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ওজনশূন্য পরিবেশের সঙ্গে তিনি নিজেকে কিভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন। নিজেকে কি তার অসুস্থ মনে হয়েছিল? জবাবে টিম পিক বলেছেন, প্রথম ২৪ ঘণ্টা ছিল খুবই কঠিন। যখনই আপনি শরীর ঘুরাতে চান বা মাথা নাড়াতে চান, উপরে-নিচে কিংবা ডানে-বাঁয়ে তাকান, আপনার চারপাশে বাতাসের যে পরিবেশন সেটা কানের মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কে একটা বার্তা পাঠাচ্ছে। এখানে চোখের খুব একটা কিছু করার নেই। তাই আমার মস্তিষ্ক এখন এই দুটোর মধ্যে পার্থক্যটা ধরতে চেষ্টা করছে। ‘এখানে প্রথম দিকে মাথা ঘুরচ্ছিলও, কোথায় আছি বুঝতে পারছিলাম না। তবে আমার শরীর এত দ্রুত এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে যে আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। বিস্ময়করভাবে এখানে চায়ের স্বাদ খুবই ভাল। আমি খুবই খুশি। পৃথিবীতে আমি যেভাবে আমার নিজের মতো চা বানাতাম এখানেও একইভাবে চা বানানো যায়।’ ‘রান্নাবান্নার কাজে এখানে আমরা পানি ফুটাই না। পানি গরম করলেই চলে। ৮৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মতো। তবে স্টেশনের ভেতরে যে পরিবেশ সেটা পৃথিবীর পরিবেশের মতোইÑ একই রকমের চাপ, একই তাপমাত্রা, একই রকমের আর্দ্রতা। তবে এখানে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ১০ গুণ বেশি। ফলে এখানেও পানি ফুটবে ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসেই, পৃথিবীর সঙ্গে এখানে কোন তফাৎ হবে না।’ সূত্র : বিবিসি
×