মেঘ-রৌদ্রের প্রাঙ্গণ
কামাল মাহমুদ
পুকুরের আয়নায় মুখে বিষাদের নীল দেখে উড়ে যায় মেঘের আকাশ
চাঁদের কিরণ আর বৃষ্টিমাখা স্বপ্ন তাকে বৃক্ষের মিছিলে এনে দাঁড় করে
চুম্বনে চুমুক শেখায়, কানে কানে বলে দেয় আরো সব গাঢ়তর অমৃতের সন্ধান
সুপার-ডুপার বলে এই দৃশ্যে তালি দেয় ফাগুন বাতাস।
ঘাসদল প্রণয়ের সবুজ শয্যা হয়ে ওঠে
মেঘ বসে, রৌদ বসে, বৃক্ষ বলে এসো কোনো আনন্দসঙ্গীত শুরু করিÑ
নৈঃশব্দের গান বাজে প্রকৃতিতে। শ্রবণাতীত সেই স্বর্গীয় সুরে কাঁপে
মেঘ-রৌদ্রের প্রাঙ্গণে জ্বালা অদৃশ্য দীপশিখা
বিরলপত্র সব শাখাতেও অজস্র ফুল ফোটে
মেঘ কেটে যায়, বিরহের নীল মুছে দীঘির দর্পণে হাসে শাপলা সবুজ।
কিভাবেÑসে প্রশ্ন করো না ক্ষণে ক্ষণে
কবির উঠোনে ভোরে জ্যোৎস্নার ঢল নামে, রাতে তার ঘরে চাঁদমুখ সূর্য ওঠে
ধুলো ঝাড়লো সে রাশি রাশি গোলাপের পাপড়ি ঝরে পড়ে
কিভাবে তা কি সেও ষোলআনা জানে!
অভিশাপ
আইউব সৈয়দ
নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস ধ্যানে ধৈর্য্যতে আজও ব্যর্থ
অনায়াসে হেরে যায় ঘরোয়া জৌলুসেরই গান,
অজানা অবহেলার ব্যস্ত পথে অতৃপ্তিতে ক্লান্ত
দুপুরের টেরাকোটা বিচ্ছেদে ছড়ায় দীর্ঘশ্বাস।
স্তব্ধতার রূপরেখা হাতিয়ে নিয়ে দুর্বোধ্য করে
বাহারি মুহূর্তগুলো পরিত্যক্ত হয় চাষাবাদে।
অদৃশ্যের যাতনায় বিছিয়ে দেয় বিষণœœ ছায়া
আচরণে সৃষ্টি করে নিজের আত্মঘাতের ক্ষত।
বিস্তৃত যে বিবর্ণতাÑশোকের আদলে পাঠ করে
ঔপনিবেশিক পর্ব; দখলে রাখে আপন গতি।
হকিকতের মাতমে বিলিয়ে দিয়েছে উপহাস;
অভিশাপ বয়ে চলে অতীতের তিক্ত প্রতিবিম্বে।
ইতিহাসের আশ্রয়ে জমেছে যে অভাজন ঝুড়ি,
অবোধের চরাচরে মুখ গুঁজে হায় পূর্বসূরি।
ভার্চুয়াল প্রভিশন
তানভীর আহমেদ হৃদয়
জীবন এক অমোঘ জলের আধার
কারো কারো জীবনে পরিবৃত্ত না হলে লাল
রঙের মেঘেরাও সরে যায় দৃষ্টিসীমার বাইরে
উচ্ছল কোন খেলা থেকে পাপ-মোচন অসম্ভব
এ বাতাসে যতদিন কামুকের আক্রমণ ছিল
ততদিন চোলাই মদের দোকানে ভিড় জমাতো উৎসুক ক্রেতা
কাগজে এখন আর বন্ধ্যাত্বের খবর প্রকাশিত হয় না
রূপ-লাবণ্যে ক্যাটরিনার উন্মাতাল ড্যান্স দেখি লাইফ ওকে তে
ভার্চুয়াল প্রভিশনে এ কোন উন্মুখ অরাজকতা!
নির্বান্ধব
অরূপ তালুকদার
কেমন উড়ে যাচ্ছে প্রবল হাওয়ার দাপটে উড়োমেঘ, বৃষ্টির ফলা
চারিদিকে কি অবাক শুষে নিচ্ছে আয়ুর নির্য্যাস অবলীলাক্রমে
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সবুজ ফানুস ওড়ে উল্কাবৃষ্টি ঝরে
অবিরাম তারপরে শুধু অপেক্ষা...অন্ধকার...
জানলার ওপাশে দূর দিগন্ত রেখা, ধূসরতায় ম্লান স্কাইলাইন
নীচে ভেজা কালো রাস্তায় কাদের মৌন মিছিল যায়? ব্যানারে পোষ্টারে
প্রতিবাদের চিহ্ন আঁকা আছে চোখের জলে...
ম্লানমুখ মানুষগুলির চোখের তারায় আগুন জ্বলে হাতের তালুতে
স্তব্ধ পড়ে থাকে কাঠগোলাপ, চারপাশে অনেকটা শব্দহীন
ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকে চলমান যাত্রীবোঝাই বাস, কার
আরো কত যে যানবাহন, ওদিকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হলে সেমিনারে
বুদ্ধিজীবীদের কী যে আস্ফালন, অহেতুক কথার ফুলঝুরি
অতঃপর একসময় হাতে হাত রেখে থামে মায়াকান্না যত, এই শহরে
মানুষ মানুষকে চেনে না বাতিল হয়ে গেছে সব আয়োজন
স্যিলুট রংয়ের আকাশ ম্যাজিক দেখায়, দীর্ণ পতিত মাঠের
প্রান্ত ছুঁয়ে বাতিল শিরীষের ভাঙ্গা ডালপালা পড়ে আছে কেমন
অবহেলা ভরে চোখের আড়ালে দৃষ্টির বাইরে...
আর মাত্র এক রান বাকি
রেহমান সিদ্দিক
আর একটি মাত্র রান হলেই
হাফ-সেঞ্চুরিটা হয়ে যায়
ব্যাট উঁচিয়ে পৃথিবীকে দেখানো যাবে
সুবর্ণ ফলক
তারপর আবার রান তোলার প্রাণান্ত চেষ্টা
ক্রিজে টিকে থাকা কঠিন ব্যাপার
বৃষ্টিতে পিচ্ছিল পথে
অথবা সার্কাসে
তারের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার ক্ষমতা অর্জন
পিচ যে সবসময় ভালো ছিলো তা নয়
যে কোনও মুহূর্তে পড়ে যেতে পারতাম
একবার তো রান আউট হতে হতে বেঁচে গেলাম
আজও টুক টুক করে রান তুলছি
আর অপেক্ষা করছি
প্যাভেলিয়নে ফিরে যাওয়ার জন্যে
আমার হাফ-সেঞ্চুরি দেখার জন্যে
কেউ অপেক্ষায় নেই
অভিনন্দন জানানোর জন্যেও না
তাতে কিছুই এসে যায় না
শেষ পর্যন্ত আমি তো রেকর্ডটা ছুঁতে পারছি
বিশ্বাসের চিত্রনাট্য
মিজানুর রহমান বেলাল
মনের মাঝি নদী দেখবে বলেÑপাড়ি দেয় রাত্রির রাস্তা
সারিসারি সাঁওতাল জোনাকির গুঞ্জন মাড়িয়ে
তারার তীর ছুটে এসেছিলো ধলেশ্বরীর আয়নায়।
তুমি আসবে বলে আসোনিÑ ধরিনি গান
দেখিনিÑজোছনার ক্ষুরের তলায়
চোখ ঝলসানো রৌপ্যআলোর বান।
মনের দামে কেনা মুগ্ধতার মমি হাতে মাঝিÑ
আউশের আইল ধরে হাঁটার সময় হেসেছিলো;
সেই হাসি থেকে জন্ম নিয়েছে মীনরাশির প্রণয়রাত্রি।
হিংস্র শিকারির চতুর চোখগুলো এখনো খোলা
তবুও ভয় করি নাÑ আমাদের মহুয়ামনের বাসনা;
মাঝি দিবে পাহারা...
শীর্ষ সংবাদ: