ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমেরিকার নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আমেরিকার নির্বাচন

যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৮ নবেম্বর ২০১৬। তার মানে এক বছরেরও বেশি সময় বাকি। অথচ নির্বাচনী দামামা বেজে উঠেছে এখন থেকে আরও কয়েক মাস আগেই। এখানেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিশেষত্ব। যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মানুযায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ব্যবস্থায় দলের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে এক দীর্ঘ প্রাথমিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। প্রতিটি রাজ্যে প্রধান দুই দল ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান তাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নির্বাচন করতে প্রাথমিক ভোটের ব্যবস্থা করে থাকে। সে কথা মাথায় রেখে প্রত্যেক প্রার্থী এই প্রাক-নির্বাচনী পর্বে দলের কট্টর সমর্থকরা যাতে খুশি হন এমন বক্তব্যই দিয়ে থাকেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিশ্বব্যাপী আগ্রহ ও কৌতূহলের বিষয়। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পরাশক্তি হিসেবে আমেরিকার যে ভূমিকা- সেটির জন্যও প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচন গুরুত্ব লাভ করেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদ এত গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় যে এর প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আগ্রহী রাজনীতিবিদরা বহু আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এই ‘প্রস্তুতির ক্ষেত্র’ সিনেট এবং হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ। এই পর্যন্ত সিনেটর অথবা কংগ্রেসম্যান ছাড়া কেউ প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে হিলারি ক্লিনটন যে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা বেশ অনেক আগেই বোঝা গিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন পুরনো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। এর আগে তিনি বারাক ওবামার সঙ্গে প্রার্থিতা লাভের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার প্রচারণা বেশ বিশ্বাসযোগ্য ছিল। কিন্তু বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারণা কৌশল এবং বাগ্মীতার কাছে হেরে যান তিনি। তবে এবার নিজের প্রার্থিতা ঘোষণার পর মনে হচ্ছিল যে তিনিই অপ্রতিদ্বিন্দ্বী হয়ে উঠবেন তার দলের ভেতর। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই সেই দৃঢ়তায় যেন চিড় ধরছে। গত বুধবার গলআপ জরিপে যে চিত্র উঠে এসেছে তা হিলারির জন্য বাস্তবিকই উৎকণ্ঠার। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার করায় হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা হুমকিতে পড়বে বলে জরিপে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, হিলারিকে এখন তার দলের সমর্থন আদায়ের জন্য লড়তে হচ্ছে এমন একজনের সঙ্গে, যিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য নন। এমনকি তাকে আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিকও বলা যায় না। তিনি হলেন ভারমন্ট থেকে নির্বাচিত মার্কিন সিনেটের একমাত্র স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি মার্কিন কংগ্রেসের একমাত্র স্বঘোষিত ‘সমাজতন্ত্রী’। হিলারির মতো তিনিও আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থিতার জন্য লড়ছেন। নির্বাচিত হলে হিলারিই হবেন আমেরিকার প্রথম নির্বাচিত মহিলা প্রেসিডেন্ট, সন্দেহ নেই। অবশ্য যদি শেষ পর্যন্ত তার প্রার্থিতা নিশ্চিত হয়। যদিও রিপাবলিকান শিবিরের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের উপেক্ষা করার কিছু নেই। ১৫ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জেব বুশ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের ময়দানে দুই দল থেকে কে কে মুখোমুখি হবেন তা আগাম বলা সম্ভব নয়। আর এখানেই পর্যবেক্ষকদের চোখ মেলে দেখার আনন্দ বিদ্যমান। বাংলাদেশের সচেতন মানুষও আগ্রহভরে লক্ষ্য করছেন থার্মোমিটারের পারদের মতো প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার পারদের ওঠানামা। চূড়ান্ত নাটক মঞ্চায়নের আগে ছোট ছোট উত্তেজনাময় মহড়া অবলোকনের এমন উপভোগ্য সুযোগ বিশ্বব্যাপী আর কোন নির্বাচনে যে মেলে না, সেকথা বলাই বাহুল্য।
×