ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পথ্য কথা

আইএসের আদলে যেভাবে গড়ে তোলা হচ্ছিল শহীদ হামজা ব্রিগেড

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৯ আগস্ট ২০১৫

আইএসের আদলে যেভাবে গড়ে তোলা হচ্ছিল শহীদ হামজা ব্রিগেড

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ র‌্যাব সেভেনের অভিযানে বেরিয়ে আসা চট্টগ্রামের সশস্ত্র জঙ্গী সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ মূলত দেশী ও বিদেশী অর্থায়নে গড়া স্বল্প সময়ের জঙ্গী সংগঠন। তাত্ত্বিক, সামরিক আর গোলাবারুদ তৈরির প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা হয়েছে আইএএস, বিভিন্ন দেশের সামরিক প্রশিক্ষণ ভিডিও। আগ্নেয়াস্ত্রে সশস্ত্র এ জঙ্গী সংগঠনটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বানিয়েছে পাহাড়। মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে এরা বাংলাদেশে সংগঠিত হচ্ছিল বলে র‌্যাব সেভেনের তথ্যে বেরিয়ে এসেছে। তবে এই জঙ্গী সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাশকতা ও দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা। ধৃত তিন আইনজীবী ছাড়া র‌্যাবের অভিযানে এর আগে মোট গ্রেফতার হয় হামজা ব্রিগেডের ২৯ সদস্য। এর মধ্যে ২৮ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে আদালতে। হামজা ব্রিগেড নেতা মনিরুজ্জামান ডনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে স্পষ্টভাবেই এ তিন আইনজীবীর মাধ্যমে অর্থ প্রদানের বিষয়টি পাওয়া গেছে। এরই ভিত্তিতে র‌্যাব তাদের গ্রেফতার করে। ধর্মীয় অনুভূতিকে কৌশলে কাজে লাগিয়ে এ জঙ্গী সংগঠনটি দেশ ও জাতি ধ্বংস করার পাঁয়তারায় লিপ্ত ছিল। হোয়াইট, ব্লু ও গ্রীন নামে তিনটি শাখার মাধ্যমে তাত্ত্বিক ও সামরিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেরা সংগঠিত হচ্ছিল। সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় এক শ’ সদস্য যোগাড় হয়েছে এ গ্রুপে। ২০১৩ সালের নবেম্বরে চট্টগ্রামের ফয়’স লেকের একটি রেস্তরাঁ থেকেই শহীদ হামজা ব্রিগেডের যাত্রা শুরু। মানুষকে মগজধোলাই দিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় ‘আল মাদরাসাতুল আবু বকর’ নামে তারা একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলে। মানুষ মনে করত এটি একটি মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসার আড়ালেই চলেছে তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব সেভেনের অভিযানে প্রকাশ পায়Ñ তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণের পর সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে। এরই সূত্র ধরে গত ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীতে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্ঘাটন হয়। লটমনি পাহাড় থেকে গ্রেফতার হওয়া ৫ জঙ্গীর তথ্যে প্রকাশ পায় তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বোমা তৈরির কারখানা ও তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের। সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হালিশহর থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিস্ফোরক মজুদের আস্তানায় অভিযান পরিচালনাসহ সর্বমোট আটটি অভিযান পরিচালনা করে হামজা গ্রুপের ২৯ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এছাড়াও শহীদ হামজা ব্রিগেডের সামরিক তিনটি শাখা হোয়াইট, ব্লু এবং গ্রীনের প্রধানরা, প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী মোজাহার মিঞা এবং বিস্ফোরক সরবরাহকারী ও বোমা বিশেষজ্ঞ আনোয়ারও র‌্যাব-৭ এর হাতে গ্রেফতার হয়েছে। হামজা ব্রিগেড নেতা মনিরুজ্জামান ডনের প্রতিষ্ঠান মেসার্স সানজিদা এন্টারপ্রাইজের তিনটি চলতি হিসাব রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ চট্টগ্রামের সিডিএ এভিনিউ শাখার ডাচ্ বাংলা ব্যাংক, ওআর নিজাম রোড শাখার ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক খুলশী শাখা। এসব শাখায় অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকা থেকেই ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা জমা দেয়া হয়েছে বলে ডন তার স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে প্রায় ২৪ লাখ টাকা, এক্সিম ব্যাংকে সাড়ে ১০ লাখ টাকা জমা হয়েছে। ডনের সহযোগী শামসু, আবদুল্লাহ, মুহিত, তোহা, মিজানুর রহমান ও হাসনাত এসব টাকা উত্তোলন করেছে। হাটহাজারীর আলীপুরস্থ মাদ্রাসা পরিচালনা, অস্ত্র কেনা, বাঁশখালিতে ক্যাম্প স্থাপন ও প্রশিক্ষণসহ সাংগঠনিক কাজে এ অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব সেভেনের এএসপি রুহুল আমিন রিমান্ড আবেদনে আদালতকে জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত তিন আইনজীবী জঙ্গী অর্থায়নে বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের টাকা প্রদান করেছেন। যে কারণে প্রথমে তাদের বাঁশখালীর মামলায় আদালতে তুলে রিমান্ডে আনা হয়। গত ২৩ আগস্ট এ তিন আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ওই রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে গত ১৯ আগস্ট এ তিন আসামিকে বাঁশখালী থানা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মেসার্স সানজিদা এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ মনিরুজ্জামান মজুমদারের চলতি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ঢাকার বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা হতে অনলাইনে বিপুল পরিমাণ অর্থায়ন করেন এই তিন আইনজীবী।
×