ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কমিউনিটি ক্লিনিক

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৮ আগস্ট ২০১৫

কমিউনিটি ক্লিনিক

গ্রামীণ জনপদের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে মানসম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ‘সেবা নিন, সুস্থ থাকুন’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে গড়ে তোলা হয়েছে এই ক্লিনিক। গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ক্লিনিকগুলো পরিচালিত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে সাড়ে তেরো হাজারের বেশি ক্লিনিক চালু রয়েছে। চালু হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ৪০ কোটির বেশি রোগী স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন। স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা তথা স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যেই ১৯৯৮ সালে জনকল্যাণমূলক এই প্রকল্পটি চালু করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা তাঁর চিন্তা ও পরিকল্পনাপ্রসূত ক্লিনিক চালু করেন। গ্রামের মানুষ সঠিক ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত। পানি পড়া, ঝাড়ফুঁক, কবিরাজি ও হাতুড়ে চিকিৎসকের কবল থেকে মুক্ত হতে পারেনি এখনও জনপদের মানুষ। প্রত্যন্ত বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্থানে এখনও চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো যায়নি। অসুখ-বিসুখ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া বিকল্প থাকে না। সেখানেও সুচিকিৎসা সুবিধা মিলবে, এমন নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না। শুধু চিকিৎসা নয়, ওষুধ প্রাপ্তিও সহজসাধ্য নয় গ্রামীণ জনপদে। তাছাড়া অনেক চিকিৎসকই শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে চায় না। ফলে সুচিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্র সঙ্কুচিত। সে কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গ্রামবাসীর জন্য আশার আলো হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ক্লিনিকগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। ১৯৯৮ সালে ১০ হাজার ক্লিনিক চালুর পর তা গ্রামীণ জনপদে নতুন আশার সঞ্চার করে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এসে ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। বন্ধ থাকা ক্লিনিকগুলো আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর চালু করে ২০০৯ সালে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এগুলোর প্রয়োজনীয় মেরামত, জনবল নিয়োগ, ওষুধ ও অন্য সামগ্রী সরবরাহ করে আধুনিকায়ন করা হয়। মা-শিশুসহ সব রোগীর তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য ক্লিনিকগুলোতে ল্যাপটপ সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব ক্লিনিকে বর্তমানে প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের প্রসবপূর্ব প্রতিষেধক, টিকাদানসহ প্রসবপরবর্তী সময়ে নবজাতকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। শিশু ও কিশোর-কিশোরীরাও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। তবে এমনও অনেক গ্রাম রয়েছে, যেখানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্রেফ স্থাপনই করা হয়েছে, সেখানে আদৌ কোন চিকিৎসা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার এই ক্লিনিকগুলোর জন্য অর্থ প্রদান করে ঠিকই। কিন্তু একটি গোষ্ঠী সরকারের অনুদান হাতিয়ে নেয়। ফলে ক্লিনিক মাসের পর বন্ধ থাকে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ গ্রামবাসী। এই অভিযোগের নিষ্পত্তি করার কাজটি স্বাস্থ্য দফতরের। তাদের তদারকি জরুরী। ক্লিনিকের সেবা গ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পল্লী অঞ্চলে ছয় কোটি মানুষের মোবাইল ফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন। সরকার ও জনগণের যৌথ অংশীদারিত্বে পরিচালিত ক্লিনিকগুলো স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। সরকার পরিবর্তন হলেও ক্লিনিকগুলো যাতে আবার বন্ধ না হয়, সেজন্য তা জাতীয়করণ এবং একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হচ্ছে। সম্পদশালী ব্যক্তি, বিভিন্ন সংস্থা এবং ক্লিনিক থেকে যারা সেবা গ্রহণ করবেন, তাদের অনুদান নেয়া হবে ফান্ডের জন্য। স্থানীয় লোকরাই কমিউনিটি ক্লিনিক চালাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে এগুলো স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। বিনামূল্যে রোগী দেখা হবে যেমন, তেমন ওষুধও দেয়া হবে। গণবান্ধব এই কর্মসূচী সফল হলে গ্রামীণ জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সুবিধা পাবে নিশ্চিত।
×