ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুদ্ধাচার

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৬ জুন ২০১৫

শুদ্ধাচার

বেশ রাশভারি শব্দ শুদ্ধাচার। বিশুদ্ধতায়পূর্ণ। তবে ভারিক্কি চালটা প্রস্ফুটিত হয় তার প্রায়োগিকতায়। বাংলায় শুদ্ধাচার বলতে সাধারণভাবে নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণ ও উৎকর্ষ বোঝায়। যার দ্বারা একটি সমাজের কালোত্তীর্ণ মানদ-, নীতি ও প্রথার প্রতি আনুগত্য বোঝানো হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে এর অর্থ হলো কর্তব্য নিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্র নিষ্ঠা। কিন্তু সমাজে নিষ্ঠাবান চরিত্রের মানুষ পাওয়া তো সহজসাধ্য নয়। নীতি নৈতিকতার বালাই না থাকা মানুষের সংখ্য ক্রমশ বাড়ছে। কর্তব্য কর্মে সবসময় সতর্ক থাকেন এমনটা খুব কমই মেলে। আর সততার লেশমাত্র নেই এমন অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। যেখানে সৎ মানুষের কোন ঠাঁই মেলে না। অসততার দিগন্ত থেকে দিগন্তজুড়ে কেবলই সততাকে গলাচেপে হত্য, করে আসছে। জনগণের সেবাদানই যাদের কর্তব্যকর্ম, সৎ মানুষ হিসেবে দায়িত্বশীলতার নিদর্শন রাখাই তাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত । সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে সরকার জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রয়োগের পদক্ষেপ নিয়েছে, সে লক্ষ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালু হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বলা হয় জনগণের সেবক। কিন্তু বাস্তবে অনেক যেন একেক জন প্রভু। প্রভুত্বের আসন বানিয়ে বরং জনগণ সেবাদাসে পরিণত করে। সাধারণ মানুষ হয়ে আসছে নিষ্পেষিত সেবক নামক প্রভুর হাতে নানাভাবে, নানা সময়ে। সরকারী কর্মকর্তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিদ্যমান ধারণা বদলাতে এবং সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে সরাসরি জবাবদিহিতার আওতায় আনার লক্ষ্যেই নেয়া হয়েছে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল। এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। তিন বছর আগে ২০১২ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কৌশল প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়। দেশের সকল মানুষ যেন সরকারী সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাছ থেকে ভাল ব্যবহার ও সময়মতো কাজ বুঝে পায় এবং কোনভাবেই যেন দুর্নীতির মধ্যে জড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করাই এই কর্মসুচীর অন্যতম উদ্দেশ্য। মোট কথা জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক করার জন্যই এই পদক্ষেপ। কিন্তু সরকারী কর্মকর্তাদের তো চাকরিতে যোগদানের আগে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ কোর্স করতে হয়, সেখানে তাদের এই শুদ্ধাচার কৌশল প্রয়োগ করা হলে নতুন করে আবার প্রশিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন হয় না, কর্মচারীদের ছাড়া। একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক ও উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশের প্রশাসনে যদি জবাবদিহিতা না থাকে, তবে অগ্রগতির সকল আশাই বৃথা হতে বাধ্য। শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন মৌলিক সমানাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য ও সুবিচার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তাই সরকারের শুদ্ধাচারের পরিকল্পনার প্রধান বিষয়ই হচ্ছে উল্লিখিত লক্ষ্য পূরণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। আর তা প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতি দমন, শুদ্ধাচার প্রতিপালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। তাই প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের দীর্ঘদিন লালিত প্রভুসুলভ আচরণ পরিহারে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। এটা তো বাস্তব যে, সরকারী দফতরগুলোতে দুর্নীতির কালো ছায়াটা সহজেই মরে না। তাই কেবল আইন প্রয়োগ ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। সেজন্য প্রয়োজন বাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক আন্দোলন সঞ্চারিত করা । নাগরিক এবং সরকারী কর্মচারী উভয়ে যার যার আবস্থান থেকে সৎ থাকলেই দুর্নীতিসহ অপশাসনের বাহুল্য মুক্ত হওয়া যায়। তা হলেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা পায়। আর তা প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশাল গুণগত পরিবর্তন ঘটতে বাধ্য। সমাজ ও রাষ্ট্র এই একটা জায়গায় কন্টকাকীর্ণ হয়ে আছে। দুর্নীতির বিষয়টা উপড়ে ফেলা আর সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বত্রই প্রয়োজন শুদ্বাচার এবং তা জনগণের জন্যও প্রয়োজন।
×