ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টিউলিপের জয় ঠেকাতে বিএনপি ও জামায়াতের নোংরামি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১০ মে ২০১৫

টিউলিপের জয় ঠেকাতে বিএনপি ও জামায়াতের নোংরামি

বাংলানিউজ ॥ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে এমপি পদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিজয় ঠেকাতে যুক্তরাজ্যের মতো একটি পরিচ্ছন্ন রাজনীতির দেশেও স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্র নজিরবিহীন নোংরামি ও অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছিল। বাংলানিউজের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন টিউলিপের মা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, ভাই রেদোয়ান সিদ্দিক ববিসহ স্থানীয় লেবার পার্টির নেতারা। আর এমন নোংরামি-অপপ্রচারের কারণে খোদ টিউলিপের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও বিব্রত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের ৫৬তম সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। শুক্রবার প্রকাশিত ফলাফলে লেবার পার্টির প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিককে তার হ্যামস্টেড ও কিলবার্ন আসনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে জয়লাভ করেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আরও দুই নারী প্রার্থী রুশনারা আলী এবং রূপা হকও। শেখ রেহানা, রেদোয়ান সিদ্দিক ববি, লেবার পার্টির নেতা ও টিউলিপের নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, টিউলিপের বিজয় ঠেকাতে নিন্দনীয়ভাবে সক্রিয় ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী একটি চক্র। তারা এমনই অপপ্রচার ও নোংরামির আশ্রয় নিয়েছে যে টিউলিপের প্রতিদ্বন্দ্বী টোরি দলীয় প্রার্থী সায়মন মারকাজকেও বিব্রত হতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এই উত্তরসূরির বিরুদ্ধে কেবল অপপ্রচারই নয়, তাকে ভোট না দিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ভোটারদের হুমকি ধমকিও দিয়েছে ওই চক্র। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই বিএনপি-জামায়াতের একটি বিশাল চক্র টিউলিপের আসন হ্যামস্টেড ও কিলবার্নের ভোটারদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার শুরু করে। এসব অপপ্রচারের মধ্যে ছিল- টিউলিপের খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফর ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনসহ নেতাদের সঙ্গে একটি গ্রুপ ছবি নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার। ওই ছবি ব্যবহার করে ব্রিটিশ মূলধারার ডানপন্থী পত্রিকা ডেইলি মেইলে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করা হয়। তার পেছনে রসদ সরবরাহে চক্রটি সক্রিয় ছিল। কেবল তাই নয়, স্থানীয় বাংলাদেশী ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে টিউলিপ জিতলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘ইসলামবিরোধী অপশাসন’ দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেও অপপ্রচারও চালায় চক্রটি। এমনকি একজন বয়স্ক বাঙালী নারীর ঘরে ঢুকে টিউলিপকে ভোট না দিতে এমনভাবে শাসানো হয় যে, ওই নারীর এক কিশোরী মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে বলেও বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন শেখ রেহানা। এই ঘটনায় টিউলিপের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সায়মনও বিব্রত বলে জানান তিনি। শেখ রেহানা জানান, ঘটনাটি টিউলিপ তার প্রতিদ্বন্দ্বী সায়মন মারকাজকে জানালে তিনি এমনই বিব্রত হন যে এ ঘটনায় তিনি ‘শকড’ বলে প্রতিক্রিয়া দেখান। সায়মন ওই নারীর পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন বলেও জানান তখন। এ বিষয়ে পুলিশেও রিপোর্ট করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন টিউলিপের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্পেনার আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুর নাতনির প্রচারকর্মীরা অভিযোগ করেন, টিউলিপের বিজয় রুখতে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করেছে তার খালা শেখ হাসিনাবিরোধী ওই চক্রটি। অপপ্রচারের সময় টিউলিপের নামে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, অবৈধ অভিবাসী দিয়ে নির্বাচনী প্রচার এবং পবিত্র ধর্ম ইসলাম জড়িয়েও বিভিন্ন অপবাদ দেয়া হয়। তারা জানান, নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকেই যুক্তরাজ্য বিএনপি ও জামায়াতের ওই বিশাল চক্রটি টিউলিপের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থনে বিরামহীন প্রচার চালায়। অথচ এদের অধিকাংশই ব্রিটিশ রাজনীতিতে লেবার পার্টির সমর্থক। এদের মধ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষ নেতারা রয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত তাদের অপপ্রচার চালিয়েছে নিজস্ব কৌশলে। বাংলাদেশের মতোই ধর্মকে অপপ্রচারের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে তারা। মূলধারার সংবাদমাধ্যমে কীভাবে টিউলিপ বিরোধী প্রচারণা চালানো যায় সেই চেষ্টা ছিল তাদের। অথচ, এই অপপ্রচারকারীদের কেউ কেউ শুধু লেবার পার্টির সমর্থকই নন, দলটির সদস্যও। তারাই নিজ দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করে প্রচারে নামেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে। তারা বলেন, স্থানীয় বাংলা সাংবাদমাধ্যমে বুক ফুলিয়ে চক্রটির কেউ কেউ এমন প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন যে, তারা নিজেরা লেবারের সমর্থক, কিন্তু একমাত্র টিউলিপের বিজয় রুখতেই হ্যামস্টেড ও কিলবার্ন এলাকায় টোরি প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমেছেন। বৃহস্পতিবার নির্বাচনের দিন নিজ নিজ উদ্যোগে গাড়ি দিয়ে টোরি সমর্থক অনেক ভোটারকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে দেখা গেছে এদের অনেককে। নির্বাচনের দিন দুপুরেই বাংলানিউজের কাছে টিউলিপবিরোধী এই অপপ্রচারের অভিযোগ করেন তার মা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা। এ সময় তার পাশে ছিলেন ভাগ্নি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে) সায়েমা হোসেন পুতুল। তবে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন প্রতিবেদন করা থেকে বিরত থাকতে বাংলানিউজকে অনুরোধ করেন শেখ রেহানা। সে সময় তিনি বলেন, ব্রিটিশ রাজনীতিতে আমাদের সন্তানরা ইতিহাস সৃষ্টি করছে, জাতি হিসেবে এটি আমাদের সকলের গর্বের বিষয়। শুধু টিউলিপ নয়, আরও ১১ বাংলাদেশী এবার এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, বিশেষ করে আমাদের তিন কন্যা রুশনারা, রূপা ও টিউলিপ। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এদের ভূমিকা বাংলাদেশকেই সম্মানিত করবে- এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের সবার। কিন্তু এই প্রত্যাশার বিপরীতে আমাদেরই স্বগোত্রীয় কারও কারও নোংরা ভূমিকা থাকবেÑ এটি আশা করিনি। শুক্রবার নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পর শেখ রেহানা বিষয়টি নিয়ে আবারও অসন্তোষ প্রকাশ করেন উপস্থিত বাংলা সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের কাছে। এ সময় রেহানা পুত্র রেদোয়ান সিদ্দিক ববিও বিষয়টি নিয়ে নিজের কষ্টের কথা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে তো টিউলিপের কোন সম্পর্ক নেই, তবে কেন তাকে ‘ভিকটিম’ করার চেষ্টা। বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার সংস্কৃতিগুলো টিউলিপের নির্বাচনে যেভাবে আমদানি করা হয়েছে তা ব্রিটিশ রাজনীতিতে নজিরবিহীন। টিউলিপের অন্যতম প্রধান দুই নির্বাচনী ক্যাম্পেনার আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও স্থানীয় লেবার নেতা কাউন্সিলর পারভেজ আহমেদ বলেন, টিউলিপবিরোধী অপপ্রচার শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের কাছে জাতি হিসেবে আমাদের বিব্রত করেছে। বাঙালী জাতির জনকের নাতনির বিরুদ্ধে স্বগোত্রীয়দের এমন অপপ্রচার আমাদের বিস্মিত করেছে। তবে এতকিছুর পরও টিউলিপ বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন, এতেই সন্তুষ্ট এ দুই ক্যাম্পেনারসহ বঙ্গবন্ধু নাতনির পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনরা। নিজের ও পরিবারের সম্পর্কে মিথ্যা অপপ্রচারে কষ্ট পেয়েছেন টিউলিপও। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি কষ্ট পেয়েছি, ভাবতেই পারি না আমার স্বগোত্রীয়রা আমার ও পরিবার সম্পর্কে এতো মিথ্যা অপপ্রচার চালাবে। তবে সঠিক পথে থাকলে কোন অপপ্রচারই বাধা হিসেবে টিকতে পারে না Ñ তা আবারও প্রমাণ হলো। টিউলিপ বলেন, আমি, রুশনারা আলী ও রূপা হক তিনজন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আছি। কমিউনিটির জন্য অনেক কিছু করার সুযোগ আছে আমাদের। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছঁড়ি করলে আমরাও কিছু করতে পারব না, কমিউনিটিরও কিছু হবে না। সুতরাং নিজেদের মধ্যে আর বিভেদ নয়, একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়াÑ এখন এটিই আমার প্রত্যাশা।
×