ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশজুড়ে ১৪ দলের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস প্রতিহত করার অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস প্রতিহত করার অঙ্গীকার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসী কর্মকা- জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে কঠোরভাবে প্রতিহত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। জোটের নেতারা বলেন, জনগণের শান্তি বিনষ্ট করার ন্যূনতম চেষ্টা কোন অবস্থাতেই বরদাশত করা হবে না। এখন থেকে রাজপথে সতর্ক পাহারায় থাকবেন ১৪ দলের নেতারা। সহিংসতা বন্ধ না করলে জনগণের আদালতেই খালেদা জিয়ার বিচার হবে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর যে সাংবিধানিক ক্ষমতা তা তিনি প্রয়োগ করবেন। বিক্ষুব্ধ জনগণ রাজপথে নামলে বিএনপি নেত্রী পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না। বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতা ও পেট্রোলবোমায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীসহ সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১৪ দলের উদ্যোগে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে এসব কথা বলেন। তাঁরা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে দুই দফায় অনুষ্ঠিত জানাজায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের রাস্তা পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পর্যন্ত চলে যায় জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের সারি। বায়তুল মোকাররম ও এর আশপাশের মসজিদে জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা এ জানাজায় অংশ নেন। বায়তুল মোকারমের দক্ষিণ গেটসহ পুরো বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এছাড়া সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত জানাজায়ও বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও পেট্রোলবোমায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত, অগ্নিদগ্ধদের আশু রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগে রাজধানীসহ সারাদেশের প্রতিটি মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাতেও বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের দক্ষিণ গেট এলাকায় গায়েবানা জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক, কর্মচারী, পেশাজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের মহাসমাবেশ কর্মসূচীতে একাত্মতা প্রকাশ করে অংশ নেন। এর আগে জানাজা শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, দেশের বর্তমান সহিংসতা বন্ধে সরকার যা যা করা দরকার তাই করবে। প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতা আছে। প্রয়োজনে তিনি তা প্রয়োগ করবেন। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণে সাধারণ মানুষ পুড়ে মরছে। আগুনে ঝলসে যাওয়া আহত মানুষের আর্তনাদ উনার কানে পৌঁছায় না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যেভাবে দেশের সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছেন, তা জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধ। অবিলম্বে হরতাল-অবরোধ বন্ধ না হলে জনগণ তাদের অরাজনৈতিক আচরণ প্রতিহত করবে। কারণ এভাবে চলতে পারে না। কোনভাবেই চলতে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। এরমধ্যে সহিংসতা বন্ধ না করলে জনগণের আদালতে তাঁর (খালেদা) বিচার হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপি তাদের অরাজনৈতিক সন্ত্রাস, নাশকতা, জঙ্গী কার্যকলাপ বন্ধ করবে। বাংলার মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ৪ জানুয়ারি থেকে বিএনপি পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যা শুরু করেছে। এ পর্যন্ত ৩৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের স্মরণে আজ আমরা গায়েবানা জানাজা পড়লাম। তিনি বলেন, পল্টন ময়দানে ১৯৬৯ সালের ২১ জানুয়ারি গায়েবানা জানাজা পড়েছিলাম আসাদকে হত্যা করার পর। আসাদের রক্ত বৃথা যায়নি। আজ বিএনপি-জামায়াতের হাতে যারা জীবন দিয়েছে, তাদের রক্তও বৃথা যাবে না। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার খুনের রাজনীতি কেউ মানে না। তাঁর ডাকা অবরোধ-হরতালে কেউই সাড়া দিচ্ছে না। তবে চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে যেসব সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানো হচ্ছে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। সন্ত্রাসীদের পরাজয় অবশ্যই হবে। তিনি বলেন, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষার সময় ছাত্রছাত্রীরা যাতে নির্বিঘেœ কেন্দ্রে যেতে পারে, পরীক্ষা দিতে পারে, সেজন্য ১৪ দলের নেতাকর্মীরা এমপি-স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সারাদেশের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো পাহারা দেবে। হরতাল-অবরোধ অব্যাহত থাকলে ১৪ দলের নেতাকর্মীরা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো পাহারা দিয়ে সন্ত্রাসীদের ঠেকাবে। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে অনেক মানুষ হত্যা করেছেন, এবার থামুন। নইলে জনগণ রাজপথে নামলে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ঘুণা জানাতে এবং সহিংসতায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রতিবাদী জনতা জানাজায় অংশ নিয়েছেন। হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে সারাদেশে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত সেই মুহূর্তে অবরোধের নামে জঘন্য সহিংসতা করছে। বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেনÑ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, মইনউদ্দীন খান বাদল এমপি, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহিম, সাদেক সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আবদুল মতিন খসরু, আবদুস সোবহান গোলাপ, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, এনামুল হক শামীম, এসএম কামাল হোসেন, এমএ আজিজ, জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির ডাঃ শহীদুল্লা শিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান, যুবলীগের ওমর ফারুক চৌধুরী, হারুনুর রশীদ, ছাত্রলীগের বদিউজ্জামান সোহাগ, সিদ্দিকী নাজমুল আলমসহ ১৪ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী। প্রয়োজনে সাংবিধানিক ব্যবস্থা- সুরঞ্জিত ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সামনে রেখে আগামী দুই দিনের মধ্যে সহিংসতা বন্ধ এবং অবরোধ-হরতাল তুলে না নিলে সরকার আরও কঠোর হতে বাধ্য হবে। প্রয়োজনে সরকার সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শুক্রবার দুপুরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী আয়োজিত চলমান রাজনীতি বিষয়ক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি নেত্রীকে ‘সহিংস আন্দোলন’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ছাড়াও বিকল্প অনেক মাধ্যম আছে, যা এখনও ছোঁয়াও হয়নি। কতদিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ধৈর্য দেখাবেন তা সময়ই বলে দেবে। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় ১৬ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কারণ সরকারেরও ধৈর্য্যরে একটা সীমা আছে। আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম এমপি, সাম্যবাদী দলের নেতা হারুন চৌধুরী প্রমুখ।
×