
নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় একাধিক সরকারি দপ্তরে কর্মকর্তাদের অনিয়মিত উপস্থিতির কারণে জনসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে অফিস শুরু হলেও অধিকাংশ অফিসে সকাল১১টা বা দুপুর ১২ টার আগে কর্মকর্তাদের দেখা যায় না। কেউ কেউ সপ্তাহে মাত্র এক-দুই দিন অফিস করেন, আবার কেউ কেউ নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই অফিস ত্যাগ করেন। এতে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর, উপজেলা পরিসংখ্যান ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিসে এমন অনিয়ম বেশি লক্ষ করা যায়। সেবা প্রত্যাশীরা অভিযোগ করেন, নির্ধারিত সময়ে সেবা না পেয়ে তারা বারবার ফিরে যেতে বাধ্য হন। এক ভুক্তভোগী জানান, “সকাল ৯টায় অফিস শুরু হলেও অধিকাংশ অফিসার আসেন ১০টার পর, আর আগেভাগেই চলে যান। এতে আমাদের সময় নষ্ট হয়।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অজান্তা ইসলাম বলেন, “আমি কিছুদিন হলো বদলি হয়ে বেলাবে এসেছি। আমার একটি বিভাগীয় মামলা থাকার কারনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে,তাই আমি নিয়মিত অফিস করতে পারছি না। তবে আমি ইউএনও স্যারকে অবগত করেছি।” কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না বলে জানিয়েছেন। অফিসের ভেতরে এখনও আগের কর্মকর্তার নামফলক ঝুলে রয়েছে। উপজেলা অফিস সূত্র জানায়, অজন্তা ইসলাম বেলাবতে যোগদানের পর মাত্র তিন দিন অফিস করেছেন, বাকি সময় তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বেলাবের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রায় দুই মাস ধরে কর্মরত হলেও নিয়মিত অফিস করছেন না। জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন তার উপস্থিতি নিশ্চিত করলেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ.এস.এম আবদুল খালেক বলেন, “তিনি কতদিন ধরে বেলাবতে আছেন, তা আমার জানা নেই।” প্রশাসনিক এই সমন্বয়হীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল।
এছাড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা জিনাক সামসুর নাহার সুলতানার বিরুদ্ধেও সপ্তাহে মাত্র এক-দুই দিন অফিস করার অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জেরিন সুলতানা এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা মো. আকরাম আলীর বিরুদ্ধেও একই ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব কর্মকর্তাদের কারণে অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, কখনও সেবা না পেয়েই ফিরে যেতে হয়।
স্থানীয় এক জন প্রতিনিধি বলেন, “সরকারি অফিসগুলোতে যদি শৃঙ্খলা না থাকে, তাহলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। নিয়মিত তদারকি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব।” সচেতন মহলের অভিযোগ, সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীন আচরণের কারণে গ্রামীণ জনগণের প্রশাসনিক সেবার প্রতি আস্থা দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। তারা বলছেন, এখন মানুষ সেবা চাইছে না, বরং সেবার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
রাজু