ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

আমি জানালার পাশে বসে ছিলাম হঠাৎ যেন আকাশটা আগুন হয়ে গেল

ম‌শিউর রহমান, না‌জিরপুর, পি‌রোজপুর

প্রকাশিত: ২১:১৫, ২৪ জুলাই ২০২৫

আমি জানালার পাশে বসে ছিলাম হঠাৎ যেন আকাশটা আগুন হয়ে গেল

‎সোমবার (১ জুলাই) দুপুর ১টা ছয় মিনিট। ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি যেন হঠাৎ রূপ নেয় এক বিভীষিকাময় মৃত্যুপুরীতে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে, চারদিক ঘন কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। সেই দিনের বিভীষিকাময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কাইলানী গ্রামের মেয়ে কলেজটির একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশ লিনা রিয়া সেই দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আজও তাড়া করে ফিরছে তাকে।

‎বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে আকাশ লিনা রিয়ার সাথে কথা হয় এ প্রতি‌নি‌ধির সা‌থে এসময় তিনি জানান। 

‎প্রত্যক্ষদর্শী আকাশ লিনা রিয়া বলেন, ঘটনার দিন দুপুর ১টার দিকে আমাদের কলেজ ছুটি হয়,এরপর আমরা কোচিং ক্লাসে ছিলাম। আমি জানালার পাশে বসা ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পেলাম মনে হলো যেন কিছু একটা ব্লাস্ট হলো। জানালার পাশ থেকে হঠাৎ আগুনের শিখা দেখতে পাই মনে হলো আকাশটা আগুন হয়ে গেল।

‎রিয়া বলেন, আমরা তখন কলেজ ভবনের ছয়তলায় ছিলাম। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সবাই দৌড়ে নিচে নেমে যাই। প্রথমে মনে হচ্ছিল ছেলেদের বিল্ডিংয়ে কিছু হয়েছে। নিচে গিয়ে দেখি, শিশুদের ভবনের সামনে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। আমরা তখনো পুরো ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারিনি। কিন্তু কিছু সময় পর যখন একটার পর একটা পোড়া দেহ বের করে আনা হচ্ছিল তখন মনে হলো যেন পুরো পৃথিবী থেমে গেছে।

‎তিনি বলেন, বিমানটি যেখানে পড়েছে, সেটি ছিল শিশুদের ‘স্কাই’ সেকশনের গেটের সামনে। প্রতিদিন বাচ্চারা ছুটির পর সেই গেট দিয়েই বের হয়। মাত্র ১০ মিনিট পর তাদের ছুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। বাচ্চাগুলো আগুনে ঝলসে যায়।

‎এই মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রিয়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ঘটনার পরপরই তিনি ঢাকায় অবস্থান না করে নিজের গ্রামের বাড়ি নাজিরপুরে ফিরে আসেন। এখনো তিনি স্বাভাবিক হতে পারেননি।

‎রিয়ার প্রতিবেশী অপর্না মৈত্র বলেন, রিয়া বাড়িতে আসার পর থেকে কারো সঙ্গে বেশি কথা বলে না। আমরাও রিয়ার কাছে তেমন কিছু জিজ্ঞেস করি না। ও ওই ঘটনা মনে করলে কেমন যেনো একটা আতঙ্কে থাকে।

‎মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রিয়ার মা স্কুল শিক্ষিকা অরতি মজুমদার বলেন, ঘটনার একদিন আগে আমি আমার মেয়েকে হোস্টেলে রেখে বাড়িতে আসি। আসার দিন রিয়া আর একটা দিন ওর সঙ্গে থাকার কথা বলে কান্নাকাটি করে। রিয়া ভর্তি হবার পর এমন কান্নাকাটি কখনো করেনি। বিমান দূর্ঘটনার পরপরই রিয়া আমাকে ফোন করে বলে মা আগুন, আগুন আর কিছুই বলতে পারছিলো না। আমি তখন স্কুলে ছিলাম। টিভিতে ঘটনাটি দেখে বাড়ির সবাই কান্নাকাটি শুরু করে। রিয়ার বাবাকে ফোন দিয়ে বললে সে সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকা রওনা দেন। ওই ঘটনার পর রিয়া কেমন যেন হয়ে গেছে খুব একটা কথা বলে না চুপচাপ থাকে আর মাঝে মাঝে আতকে ওঠে।

‎রিয়ার বাবা রিপন মৈত্র বলেন, আমি রিয়ার মায়ের ফোন পেয়ে যে অবস্থায় এবং যে পোশাকে ছিলাম সেই ভাবে ঢাকা রওনা দেই। এরকম বিভীষিকাময় দৃশ্য আমি আগে কখনো দেখি নাই। ছোট ছোট বাচ্চাদের কষ্ট দেখে নিজেকে সামলে রাখা যায় না। ভগবান আমার মেয়েকে রক্ষা করছে কিন্তু কত বাবা মার কোল যে খালি করেছে। আমি ঘটনার দিন রাতেই রিয়াকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।

 

রাজু

×