
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ে দিন দিন বাড়ছে বন্য হাতির সংখ্যা। বন বিভাগের তথ্য মতে, গত দুই বছরে কমপক্ষে ৫০টির মতো হাতির শাবক জন্ম নিয়েছে। পূর্বে গারো পাহাড়ে হাতির সংখ্যা আনুমানিক ১০০ থেকে ১২০টি ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০টিতে।
বন কর্মকর্তারা বলছেন, এই অঞ্চল হাতিদের প্রজননের জন্য অনুকূল হয়ে উঠেছে। চলতি বছরেই প্রায় ৫০টি হাতির বাচ্চা জন্ম নেওয়ার তথ্য রয়েছে। ড্রোন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ৩৪টি হাতির একটি পালে ৮ থেকে ১০টি শাবকের উপস্থিতি।
শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি রেঞ্জ অফিসার জানান, এই রেঞ্জে তিনটি পৃথক হাতির পাল রয়েছে। প্রতিটি পালে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫টি হাতি এবং প্রতিটি পালে ৭ থেকে ৮টি করে শাবক রয়েছে বলে ধারণা। গভীর জঙ্গল ও নিরাপদ আবাসস্থল থাকার কারণে এ বৃদ্ধির ধারা তৈরি হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে ২০১৪ সাল থেকে শেরপুর জেলার তিনটি রেঞ্জে ৫০০ হেক্টর এলাকায় হাতির খাদ্যবান্ধব গাছ লাগানো হয়েছে, যা খাদ্য সংকট দূর করতে সহায়তা করেছে।
এদিকে, নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় সম্প্রতি একটি হাতির শাবকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকায় প্রায়ই হাতির আক্রমণের শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা।
২০১৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর জেলার গারো পাহাড় এলাকায় হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৩ জন। এর মধ্যে শেরপুরেই নিহত হয়েছেন ২৫ থেকে ৩০ জন। অপরদিকে, মানুষের হাতে প্রাণ হারিয়েছে মোট ৩২টি হাতি যার মধ্যে শেরপুরেই মারা গেছে ২৭ থেকে ২৮টি।
২০২১ সালের ১২ নভেম্বর শ্রীবরদী উপজেলায় এবং ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর নালিতাবাড়ীতে দুটি হাতি হত্যার ঘটনায় বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে মামলা হয়েছে।
রাংটিয়া রেঞ্জ অফিসার আব্দুল করিম বলেন, বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘাত রোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ বন বিভাগের সঙ্গে মিলে কৌশলগতভাবে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছেন, প্রাণঘাতী হামলা এড়িয়ে চলছেন।
গারো পাহাড়ে হাতির সংখ্যা বাড়া যেমন একটি আশার খবর, তেমনি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, ফসল রক্ষা ও টেকসই সহাবস্থানের চ্যালেঞ্জও বেড়েই চলেছে। তাই শুধু গাছ লাগানো নয়, প্রয়োজন আরও গবেষণা, প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারি এবং সীমান্ত এলাকায় সচেতনতামূলক ব্যবস্থা।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিচ্ছে সরকার। নিহতদের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা, আহতদের ১ লাখ এবং ফসল ক্ষতির জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।
রাজু