ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

সেতুর ওপর অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড, যানজটে নাকাল জনজীবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ১৬:২২, ২১ জুলাই ২০২৫

সেতুর ওপর অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড, যানজটে নাকাল জনজীবন

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

সোনারামপুর সেতুর ওপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অটোরিকশার স্ট্যান্ড ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুর দুই পাশে এবং মাঝ বরাবর অবৈধভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট, যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থায়ী হচ্ছে।

সেতুটির পাশেই সোনারামপুর বাজার, যেখানে সপ্তাহে দুই দিন শুক্র ও সোমবার বসে সাপ্তাহিক হাট। এই দুই দিন যানজটের মাত্রা হয় আরও ভয়াবহ। ভোর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেতু এলাকাজুড়ে লেগে থাকে যানবাহনের জটলা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর-সোনারামপুর-সলিমগঞ্জ-নবীনগর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক উপজেলার মানুষ যাতায়াত করেন। বিশেষ করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানুষ জেলা সদরে ও সিলেট যাতায়াত করতে এই সড়কটি ব্যবহার করেন, অন্যদিকে নবীনগর ও কসবা উপজেলার মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করে কড়িকান্দি ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেন। এসব উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম এই সড়ক। 

এই সড়কের সোনারামপুর বাজারের পূর্ব পাশের সেতুতে অবৈধভাবে অটোরিকশা স্ট্যান্ড স্থাপন করার কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এই এলাকায় প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজট লেগে থাকছে অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে। তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম এই সড়ক। প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করে শতশত যানবাহন চলাচল করে। যানজটের কারণে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এই সড়ক ব্যবহার করেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে ও নবীনগর উপজেলায় প্রতিদিন যাতায়াত করে হাজারো মানুষ। অন্যদিকে নবীনগরের মানুষ এই পথেই কড়িকান্দি ফেরিঘাট হয়ে ঢাকার যাতায়াত করেন। অথচ একটি অবৈধ স্ট্যান্ড গোটা যাতায়াত ব্যবস্থাকেই করে তুলেছে দুর্বিষহ।

সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সোনারামপুর বাজারে পূর্ব পাশে সেতুর ওপর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর উভয় পাশ থেকে গাড়ি উঠাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। গাড়ি রাখার কারণে সেতু দিয়ে চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে গেছে। এ কারণে যানজট লেগে যাচ্ছে গাড়ির সংখ্যা বাড়লেই। বিশেষ করে, পশ্চিম পাশে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় সেতুতে গাড়ি উঠতে দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বছরের পর বছর এই অবস্থায় চলে এলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

উপজেলা সদরের মাতুরবাড়ি মোড় থেকে সলিমগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত হওয়ায় এই সড়ক চালকদের কাছে জনপ্রিয় উঠেছে। নবীনগর ও জেলা সদরে যাওয়া সহজ হওয়ায় চালকরা এই সড়কটি ব্যবহার করেন। অন্যদিকে নবীনগর উপজেলার লোকজন ফেরিঘাট হয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর ও কসবা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের জেলা সদরে ও ঢাকা যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি।

স্কুল শিক্ষার্থী রাবেয়া আক্তার বলে, ‘প্রতিদিন স্কুলে যেতে দেরি হয়। কোনো দিন হেঁটে যেতে হয়, আবার কোনো দিন মা নিয়ে যেতে পারেন না। যানজট এত বেশি যে ক্লাস মিস হয়ে যায়।’

স্থানীয় দোকানদার শহিদুল ইসলাম জানান, এই অবৈধ স্ট্যান্ড বন্ধ না করলে একদিন বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। যানজটে ব্যবসা মার খাচ্ছে, ক্রেতারাও আসতে চান না।

অটোরিকশার চালক হেলাল মিয়া বলেন, ‘আমাদের নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নেই, তাই বাধ্য হয়ে এখানে দাঁড়াই। কিন্তু আমরা চাই নির্দিষ্ট জায়গা। রাস্তার ওপর দাঁড়ানো আমাদেরও বিপদে ফেলছে।’
স্থানীয় আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য, এই সেতুতে এক সময় কত সুন্দর চলাচলের রাস্তা ছিল। এখন যেন একটা গাদাগাদি বাজার। স্থানীয় প্রশাসন চাইলে খুব সহজেই এই সমস্যা সমাধান করতে পারে।

ঢাকাগামী যাত্রী আবুল হোসেন বলেন, ‘নবীনগর থেকে ঢাকা যেতে হলে কড়িকান্দি ফেরিঘাট পর্যন্ত এই রাস্তায় আসতেই বিপদে পড়ি। ফেরির সময় চলে যায়, অফিসে দেরি হয়। এই অবৈধ স্ট্যান্ডটি এখন একটা যন্ত্রণা।’

নবীনগর সদরের মাইক্রোবাস চালক শাহআলম জানান, প্রতিদিন এই পথ দিয়েই ঢাকায় যাতায়াত করেন তারা। প্রায়ই এখানে দীর্ঘক্ষণ যানজটে পড়তে হয়। সময়মতো না যাওয়ার কারণে ফেরি মিস করতে হয়।

সোনারামপুর গ্রামের অটোরিকশা চালক সবুজ মিয়া বলেন, ‘বাজারের অটোরিকশা রাখলে দোকানদাররা গালাগালি করেন, তাই আমরা ব্রিজের ওপর রাখি। কী করব, আমরা নিরুপায়।’
পাহাড়িয়াকান্দি গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মনির হোসেন জানান, সোনারামপুর সেতুর ওপর সবসময় অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকে, এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। প্রায়ই যানজট লেগে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কষ্ট করতে হয়। বিশেষ করে সোনারামপুর হাটের দিন ভয়াবহ যানজট দেখা দেয়।

সোনারামপুর বাজারের ব্যবসায়ী সবুজ মিয়ার ভাষ্য, সোনারামপুর সেতুর ওপর অটোরিকশা রাখছেন চালকরা। এতে দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। সলিমগঞ্জ সড়ক, মরিচাকান্দি সড়ক, বাঞ্ছারামপুর সড়ক অচল হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদেরও।

স্কুলশিক্ষক ইউসুফ মিয়া জানান, প্রায়ই এই সেতুর ওপর যানজটে আটকে থাকতে হয়। অনেক সময় সময়মতো স্কুলে যেতে পারেন না। এই অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড অপসারণ করা দরকার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী আরার ভাষ্য, সেতুর ওপর কোনোভাবেই অটোরিকশা স্ট্যান্ড হওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখে অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে।

মিরাজ খান

×