ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

তদন্ত কমিটি গঠন, যৌথ অভিযানে আটক ২০

থমথমে গোপালগঞ্জ, বাড়ল কার্ফুর সময়

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ১৭ জুলাই ২০২৫

থমথমে গোপালগঞ্জ, বাড়ল কার্ফুর সময়

থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে গোপালগঞ্জে

থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে গোপালগঞ্জে। আতঙ্কে ঘর থেকে বের হননি লোকজন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় বৃহস্পতিবার দিনভর গোপালগঞ্জ শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করতে দেখা গেছে। কার্ফুর কারণে বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার পরও শহরে মানুষের কোনো কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি। গোটা শহর ছিল একেবারেই শান্ত।

রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। সব দোকানপাট ছিল বন্ধ, রাস্তায় কেবল দু-একটি রিক্সা চলতে দেখা গেছে। কার্ফুর মধ্যেই বিশেষ অভিযান চালিয়েছে যৌথ বাহিনী। অভিযানে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে চলমান কার্ফুর সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া সংঘটিত সহিংসতার ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছে সরকার। 
এনসিপি সমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার গোপালগঞ্জে দিনভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও রক্তক্ষয়ী সহিংসতা হয়। এতে অন্তত ৪ জন নিহত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক ও হামলাকারীসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বুধবার রাত ৮টা থেকে পুরো জেলায় কার্ফু জারি করে জেলা প্রশাসন। কার্ফু জারির পর থেকে গোপালগঞ্জের রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য। রাতে শহর ছিল সুনসান। 
ঘটনার পর থেকে গোপালগঞ্জ শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে মোতায়েন করা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে চলে তল্লাশি। বাড়ানো হয় টহল। রাতভর থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে নগরজুড়ে নেমে আসে এক ধরনের নিস্তব্ধতা। বৃহস্পতিবার সারাদিনই বন্ধ ছিল গোপালগঞ্জ শহরের বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাস্তাঘাট ছিল অনেকটাই ফাঁকা।

হাট-বাজার ছিল জনমানবহীন। সড়কে যান চলাচল ছিল সীমিত, মানুষজন ঘরে অবস্থান করছিলেন নিরাপত্তা শঙ্কায়। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হননি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শহরজুড়ে টহল জোরদার করে র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি উপস্থিতি ছিল। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে বাড়তি নজরদারি করা হয়। গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের সামনে নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে এখনো। কেননা, বুধবার বিকেলে এই কারাগারেও হামলা হয়েছিল। এ ছাড়াও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। 
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করে এবং জনসাধারণকে বাড়ির বাইরে না আসার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করে। তবে কার্ফুর মধ্যেও বৃহস্পতিবার সকালে কিছু দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ কাজের খোঁজে রাস্তায় বের হন। গ্রেপ্তার আতঙ্কে এবং আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে কি না, সেই আশঙ্কা থেকে সাধারণ মানুষও ঘর থেকে বের হননি। 
গোপালগঞ্জ সদর সার্কেলের এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার সারাদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল, তবে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যা থেকেই সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পুলিশ ও র‌্যাব বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। 
বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে শহরের পাড়া-মহল্লা অভিযান চালায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী। অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। হামলাকারীরাও  আত্মগোপনে চলে যায়। তবে অভিযানে ২০ জনকে আটক করার তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।   
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, যৌথ বাহিনীর নেতৃত্বে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। 
তদন্ত কমিটি গঠন ॥ সংঘটিত সহিংসতার ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
কমিটির সভাপতি করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে। তার সঙ্গে দুজন অতিরিক্ত সচিব থাকবেন, একজন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এবং অপর সদস্য আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের। 
এ কমিটিকে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত পরিচালনা করতে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা, জনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং যে কোনো বেআইনি কাজ, সহিংসতা এবং মৃত্যুর জন্য দায়ীদের আইন অনুসারে জবাবদিহি করা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেও জানানো হয়। 
বাড়ল কার্ফু সময়সীমা ॥ গোপালগঞ্জে চলমান কার্ফুর সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
সেখানে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে নতুন করে শুরু হওয়া কার্ফু পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর মাঝে আজ শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কার্ফু  শিথিল থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে কার্ফু বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথিও এ তথ্য জানিয়েছেন। 
বিভাগীয় কমিশনারের ব্রিফিং ॥ গোপালগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে হামলার বিষয়ে কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল না। যতটুকু তথ্য ছিল সে অনুযায়ী প্রস্তুতি ছিল।
এনসিপি বলছে, হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে প্রশাসন থেকে কেন দুষ্কৃতকারী বলা হচ্ছেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, এনসিপি বলেছে সেটি এনসিপির বিষয়। আইনের দৃষ্টিতে যারা আইনশৃঙ্খলা বিঘœ ঘটায় তাদের আমরা দুষ্কৃতকারী বলি। এ জন্যই আমরা দুষ্কৃতকারী বলছি। সে কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতেই পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কার্ফু সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্ফু জারি থাকবে। তবে শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কার্ফু শিথিল থাকবে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে ২৪ ঘণ্টা কার্ফু জারি ছিল। সারাদিন তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাধারণ জনতার সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসএম তারেক, সহকারী কমিশনার রাসেল মুন্সী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সহিংসতায় পুলিশ প্রতিবেদন ॥ গোপালগঞ্জে বুধবারের সহিংসতায় চারজন নিহত এবং ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। পুলিশের তৈরি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন সরবরাহ করে। 
পুলিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত ৪ জনের মরদেহ পোস্ট মর্টেম করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। যৌথবাহিনী ও পুলিশ নাশকতার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। 
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গোপালগঞ্জ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে এক হাজার ৫০৭ জন পুলিশ সদস্যসহ সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কার্ফু জারি করেছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
পুলিশ প্রতিবেদনে ঘটনা প্রসঙ্গে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া মানুষের কথা শুনতে ১-৩০ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে মাসব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৬ জুলাই ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জ পৌর উন্মুক্ত মঞ্চে জাতীয় নাগরিক পার্টি এক জনসমাবেশ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়।

এই সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল সার্কিট হাউজ এলাকা থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব শামান্তা শারমিন, তাসনিম জারা, সিনিয়র মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, আরিফুল দাড়িয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা রওনা দেন।

সমাবেশের নিরাপত্তার জন্য সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন তৎপর থাকে। সকাল সাড়ে ৯টায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের একটি সন্ত্রাসী দল গোপালগঞ্জ সদর থানার উলপুরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলাসহ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় একজন পুলিশ পরিদর্শকসহ ৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেলা ১১টার সময় গোপালগঞ্জ সদর থানার কংশুর বাসস্ট্যান্ডে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ পৌর শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক খান রিপনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক সড়কে গাছ ফেলে এবং কাঠ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় গোপালগঞ্জ ইএনও’র গাড়ি সেখানে গেলে গাড়ি ভাঙচুরসহ সড়ক অবরোধ করে রাখে।

এর পর সাড়ে ১১টার সময় কোটালীপাড়া থানার অবদার হাট এলাকায় কোটালীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম দারিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করে কোটালীপাড়া-পয়সারহাট সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে ২৮০০- ৩০০০ নেতাকর্মী রাস্তা অবরোধ করে রাখে। ১১টা ৪০ মিনিটে গোপালগঞ্জ সদর থানার কাঠি বাজার এলাকায় গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ পৌরসভার মামুনের নেতৃত্বে ২০০-৩০০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গোপালগঞ্জ পৌরপার্ক সভাস্থলে পৌঁছানোর আগে দুপুর আনুমানিক ১টা ৪০ মিনিটে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৫০-৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ককটেল বিস্ফোরণসহ ঢাল, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মঞ্চে আক্রমণ করে। তারা মঞ্চের ব্যানার এবং চেয়ার ভাঙচুর করে। দুপুর ২টায় নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে ওঠেন। ইতোমধ্যে দুপুর সোয়া ২টায় গোপালগঞ্জ সদর থানার সাতপাড় বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তরা ২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ২টি মোটরসাইকেলে অগ্নি সংযোগ করে।

উচ্ছৃঙ্খল জনগণ রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ব্যারিকেড দেয় এবং বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করে। দুপুর পৌনে ৩টায় পদযাত্রা সভা সমাপ্ত করে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সভাস্থল ত্যাগ করেন। এই পদযাত্রা সভায় আনুমানিক ২০০ জন লোক উপস্থিত ছিল। 
সভা শেষে তাদের গাড়ি বহর পরবর্তী পদযাত্রার সভাস্থল মাদারীপুরের উদ্দেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রহরায় রওনা দিলে গোপালগঞ্জ পৌরসভার লঞ্চঘাটে আওয়ামী লীগ ও এর নিষিদ্ধ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আনুমানিক ৩টায় গাড়ি বহর আটকে দেয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তারা কোনো কথা না শুনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে। এ ছাড়া নাশকতাকারীরা গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারসহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনায় হামলা করে।

এ সময় সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় প্রায় ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হন বলে জানা যায়। নাশকতাকারীদের আক্রমণের ফলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এনসিপি নেতাকর্মীদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিরাপদে নিয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে বিকেল ৪টা ৫৮ মিনিটে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গাড়িতে করে বাগেরহাট হয়ে খুলনার উদ্দেশে চলে যান।

প্যানেল হু

×