ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

বীমার টাকা ফেরত পাচ্ছে না কয়েক হাজার গ্রাহক, শতাধিক গ্রাহকের মৃত্যু!

জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ১০ জুলাই ২০২৫

বীমার টাকা ফেরত পাচ্ছে না কয়েক হাজার গ্রাহক, শতাধিক গ্রাহকের মৃত্যু!

‎লাভের আশায় ভিক্ষা করি কিস্তির টাকা দিছি, সেই টাকা তুলে মোর স্বামী হজ্ব করবে। পাচ বছর হয় মেয়াদ পূরণ হইছে তবু ও টাকা দিচ্ছে না। এই টাকার জন্যে ঘুরতে ঘুরতে মোর স্বামী মরি গেল। স্বামীর হজ্ব করা হইল না। মুইও বা কোন দিন মরি যাং। মোর ও হজ্ব করা হবার নয়। অনেকদিন অফিস বন্ধ আছিল। অফিসের লোক কয় টাকা আইসে নাই। এ টাকা বুঝি পাবার নই। এভাবে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার ফারাজি পাড়া গ্রামের বিধবা সাজেদা বেওয়া। 

‎রিকশা চালক হাফিজুর রহমান বলেন, ২০০ টাকার কিস্তিতে একটি ডিপিএস খুলে নিয়মিত কিস্তির টাকা জমা করি। ২০২০ সালে মেয়াদ শেষ হইছে। কিন্ত দাবীর টাকা ফেরত দিচ্ছে না। ঘুরতে ঘুরতে বাকী জীবনটা শ্যাষ হয়া গেল, তবু টাকা পাই না। উপাষ থাকিও কিস্তির টাকা দিছি। সেই টাকা দিয়া মেয়ের বিয়া দিমু। এখন লাভ তো দুরের কথা আসলটাও পাই না। ইসলামিক নাম দেখি বীমা করছিনো, এখন দেখি এমরাও জালিয়াতি করছে। হামরা কোথায় যামো বাহে। এ টাকা কি পামো?

‎সাজেদা বেওয়া ও হাফিজুর রহমানের মত পাচ ছয় বছর ধরে ঘুরছে হায়দার আলী, মিজানুর রহমান, আমিনুর রহমান, জোবেদা বেওয়াসহ প্রায় ৫ হাজার বীমাকারী। নিময় অনুযায়ী বীমার কিস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে বীমাকারীর টাকার লাভসহ ফেরত দিবেন। কিন্ত গ্রাহকরা এক মাস তো দূরের কথা পাচ বছরেও পাচ্ছে না।

‎ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড উলিপুর এরিয়া অফিসের অধীন (চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর) সূত্র জানায়, ক্ষুদ্র বীমা, ডিপিএস ও স্থায়ী আমানতকারী গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। জমার পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা। বীমাকারি গ্রাহকরা সিংহভাগ দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত। মেয়াদ উত্তীর্ন হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশী। প্রায় ৬ বছর ধরে প্রধান কার্যালয় থেকে কোন টাকা দেওয়া হচ্ছে না বলে গ্রাহকদের দাবীর টাকা প্রদান করা যাচ্ছে না। কোম্পানীর নাজুক অবস্থার জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার গ্রাহক তাদের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু বীমা চালু থাকলেও তা অনিয়মিত। অনেকে চাকুরী ছেড়েছেন। আবার কেউ পালিয়ে গেছেন।

‎ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড উলিপুর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, উপস্থিত বেশ কয়েকজন দরিদ্র মহিলা সবাই খুব উত্তেজিত। তারা জানালেন, ডিপিএস খুলে কষ্ট করে টাকা দিছেন। কিন্তু তাদের দাবির টাকার জন্য ২-৩ বছর ধরে ঘুরছি কিন্ত টাকা ফেরত পাচ্ছি না। বজরা এলাকার মজিদা বেগম বলেন, মানুষের বাড়িতে কাজ করে কিস্তি দিয়েছি। এখন সেই টাকার জন্য ঘুরছি, জানি না টাকা পাবো কি না?

‎অফিস সহকারি মৌসুমী আক্তার বলেন, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২৫ জন গ্রাহক বীমার দাবির টাকা জন্য আসে আর অমাদের গালিগালাজ ও লাঞ্চিত করে। টাকা না পেয়ে অনন্ত ২৫ জন গ্রাহক আমাদের নামে থানায় (সাধারন ডাইরী) জিডি করেছে। সব মিলে আমরা এক ভয়াবহ নাজুক পরিস্থিতিতে পেটের দায়ে কাজ করছি। এজেন্ট আমিনুর রহমান বলেন, ২৫/৩০ জন গ্রাহকের বীমা করে দিয়েছি কেউ টাকা পাচ্ছে না। গ্রাহকদের চাপে বাড়িতে থাকতে পারি না। কোম্পানী টাকা না দিলে আমাকে পরিশোধ করতে হবে। আমি গরীব মানুষ কি হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

‎উলিপুর এরিয়া অফিসের ইনচার্জ মোঃ সাইফুল্লাহ বলেন, গ্রাহকের টাকা দিতে পারি না। সেজন্য অফিসে বসি না। গ্রাহকরা চরম অপমান করে। কি যে করি, খুব চেষ্টা করছি গ্রাহকের টাকা দেওয়ার জন্য। নিজের বেতনটাও পাই না। খুব কষ্টে আছি।

‎রংপুর বিভাগীয় ম্যানেজার আব্দুল কাদের বলেন, ২০১৯ সাল থেকে গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছি না। আমাদেরও বেতন বন্ধ করে দিয়েছে। আমি গ্রাহকদের ভয়ে পালিয়ে থাকি। আমার ৪ জেলায় প্রায় ১'শ ২০ কোটি টাকা গ্রাহকরা পাবে। তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

 

রিফাত

×