
ছবি: জনকণ্ঠ
খাগড়াছড়ির পার্বত্য উপজেলা মহালছড়িতে গত ২ দিনের টানা ও অবিরাম মৌসুমি বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। পাহাড়ি ঢলের পানি ও ভারী বর্ষণের ফলে উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। হঠাৎ করে এমন দুর্যোগে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালি জনগণ।
বিশেষ করে মহালছড়ি ২৪ মাইল কলেজের আশপাশ, মুবাছড়ি ইউনিয়নের ব্রিজপাড়া, ক্যারাঙ্গেনালা,চৌংড়াছড়ি, মাইসছড়ি বাজারের সুইচ গেইট এলাকার বিস্তীর্ণ জনবসতি বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে থাকায় স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য মুবাছড়ি ইউনিয়নের ব্রিজটি প্লাবিত হয়ে গত বছর ভেঙ্গে যায়, এলাকা বাসীর উদ্যোগে কাঠ দিয়ে সংস্কার করে কোন মতে চলাচল করতে পারলে ও এবার সেটা ভেঙ্গে আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে সিঙ্গিনালা,মধ্যে আদাম,মিলনপুর,ক্যায়াংঘাট সহ আরো বেশ কটি গ্রামের সাথে উপজেলা ও জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই ব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ যাতায়াত করতেন। এখন সবাইকে বিকল্প পথ খুঁজতে হচ্ছে, যা সময় ও অর্থ উভয় দিক থেকেই কঠিন হয়ে উঠেছে।
পাহাড়ি অঞ্চলের সাপ্তাহিক হাট-বাজারে মানুষের উপস্থিতি নেই, বিপাকে কৃষক ও বিক্রেতারা। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য মহালছড়ি সাপ্তাহিক হাট ও বুধবারের মাইসছড়ি বাজার কার্যত ভেস্তে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে কেউই হাটে পৌঁছাতে পারেননি। ফলে বাজারে ছিল না কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা। সবজি, মাছ, ফলসহ বিভিন্ন কাঁচামাল আটকে আছে ঘরে, যা সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় সবজি বিক্রেতা মেলাপ্রু মারমা জানান, "বৃষ্টি ও পানিতে হাঁটা যায় না। ভ্যানে করে বাজারে নিয়ে যেতাম কাঁচামাল, এখন তো ভ্যানও চলবে না। গতকাল যা তুলেছিলাম, আজ সবই পচে গেছে। লোকসান গুনছি আমরা।"
স্থানীয় এক নারী জানান, "হাসপাতালে যাওয়ার দরকার ছিল, কিন্তু সড়ক তো পানির নিচে। গাড়ি তো দূরের কথা, হেঁটে যাওয়াও সম্ভব না। বিকল্প হিসেবে নৌকার অপেক্ষায় রয়েছি।"
পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মহালছড়ি ২৪ মাইল কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়ের মাঠ, শ্রেণিকক্ষ ও আশপাশের এলাকা পানিতে ভরে যাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দ্রুত পানি না কমলে ব্যাহত হতে পারে সারা দেশব্যাপী চলমান এইচএসসি পরীক্ষা।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃষ্টির কারণে যে সব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে মেরামত ও ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু রায়হান জানিয়েছেন , "মৌসুমি ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে । এরই মধ্যে আমরা কন্ট্রোল রুম চালু করেছি, কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করে যাচ্ছি।"
পাহাড়ি ও বাঙালি সকল জনগণই প্রশাসনের কাছে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা, ভাঙা ব্রিজ মেরামত এবং দীর্ঘমেয়াদি ড্রেনেজ ব্যবস্থার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তারা বলছেন, প্রতিবছর বর্ষায় একই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, অথচ কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
মহালছড়ির এবারের জলাবদ্ধতা শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি স্থানীয় অব্যবস্থাপনার চিত্রও তুলে ধরছে। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও আর্থিক ক্ষতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন, নয়তো দুর্যোগের ছোবল থেকে মুক্তি মিলবে না এই পাহাড়ি জনপদের।
Mily